এখন প্রয়োজন সম্মিলন-সহযোগিতার রাজনীতি: ঢাবি উপাচার্য
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেছেন, আজকের দিনে ঐক্য ধরে রাখা আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে। বিভাজনের রাজনীতি আমাদের খন্ড-বিখন্ড করে দিচ্ছে। আমাদের সমাজ ও প্রতিষ্ঠানকে দুর্বল করে দিচ্ছে। এখন আমাদের প্রয়োজন ‘হাত ধরে রাখার রাজনীতি’—একটি সহমর্মিতার, সম্মিলনের এবং সহযোগিতার রাজনীতি।
সোমবার (২৬ মে) জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের উচিত অ্যাকাডেমিক চর্চাকে একটি নেটওয়ার্কভিত্তিক কাঠামোতে নিয়ে যাওয়া, যাতে করে গবেষণার মান ও পরিধি উভয়ই বাড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণার স্বাদ না পেলে কখনোই আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে না। আমাদের অবশ্যই গবেষণার মাত্রা উচ্চে তুলতে হবে। এই প্রেক্ষাপটে আমাদের মধ্যে টিম বিল্ডিং অপরিহার্য। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একটি যৌথ প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে পারলে আমরা গবেষণার কাজকে সহজতর করতে পারব।
‘মোরা বন্ধন-হীন জন্ম-স্বাধীন, চিত্ত মুক্ত শতদল’—এই স্লোগানকে ধারণ করে দুই দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজনে নজরুল জয়ন্তী উদযাপন করেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। বিকেলে নজরুল ভাস্কর্যে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর গাহি সাম্যের গান মঞ্চে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার।
সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নজরুলের চিন্তাধারা কখনোই অবহেলার নয়। তিনি সমাজ থেকে সাম্প্রদায়িকতা, বৈষম্য, দলাদলি ও অন্যায়ের শিকড় উপড়ে ফেলতে চেয়েছেন। তাঁর লেখনী, কবিতা ও সংগীতেই আমরা খুঁজে পাই সেই সংগ্রামী চেতনা, যে সাহস ছাড়া সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখা সম্ভব নয়। তিনি যেমন প্রেমের কবি, তেমনি বিদ্রোহেরও প্রতীক। নজরুল তাঁর শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকর্ম সৃষ্টি করেছেন এই বাংলাদেশেই। তিনি বিশ্বাস করতেন—হিন্দু-মুসলিম বিরোধ নয়, সৌহার্দ্য ও ভালোবাসার বন্ধনই মানবতার ভিত্তি।
দিনব্যাপী আয়োজনে সকাল থেকে পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের তৃতীয় তলায় কনফারেন্স কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক নজরুল বক্তৃতামালা ২০২৫। সেখানে বাংলাদেশ ও ভারতের শিক্ষক, গবেষক ও নজরুল অনুরাগীরা চারটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এরপর সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। আবৃত্তি, নৃত্য, সংগীত এবং নজরুলের নাটক ‘জিনের বাদশা’ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে নজরুল জয়ন্তী আয়োজনের সমাপ্তি ঘটে।