আবু বকর: বেঁচে থাকলে আজ হয়তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতেন
আবু বকর ছিদ্দিক। শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নে ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের(ঢাবি) ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে। থাকতেন স্যার এফ রহমান হলের ৪০৪ নম্বর কক্ষে। কিন্তু সন্ত্রাসের জাঁতাকল তাকে এগোতে দেয়নি। ২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত হয়ে এক দিন পর ৩ ফেব্রুয়ারি মারা যান তিনি। আজ আবু বকর ছিদ্দিকের ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী।
বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে আবু বকর খুব বেশি দিন পড়ার সুযোগ পাননি। দ্বিতীয় বর্ষ চতুর্থ সেমিস্টারের ফল প্রকাশের আগেই মারা যান তিনি। কিন্তু এই অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি তার মেধার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। মৃত্যুর ৪২ দিন পর তার চতুর্থ সেমিস্টারের ফল প্রকাশ হয়েছিল। সেখানে তিনি যুগ্মভাবে প্রথম হয়েছিলেন। তৃতীয় সেমিস্টার পর্যন্ত তার সিজিপিএ ছিল ৩.৭৫। বেঁচে থাকলে আজ হয়তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতেন।
টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার গোলাবাড়ী গ্রামের দিনমজুর রুস্তম আলী ও রাবেয়া খাতুনের সন্তান আবু বকর। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সময় গ্রামে গিয়ে বাবার সাথে কৃষি কাজ করতেন তিনি। প্রতিবেশীদের বাচ্চাকে পড়িয়ে নিজের পড়ার খরচ জোগাতেন। মা রাবেয়া খাতুন তিন বছর মাথায় তেল না দিয়ে সেই টাকা ছেলের পড়ার খরচ চালানোর জন্য সঞ্চয় করেছিলেন। তার মৃত্যুতে পুরো পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে তছনছ হয়ে যায়।
হত্যাকাণ্ডের ১৫ বছর পরও এখনো অজানা, আসলে কী ঘটেছিল সেদিন আবু বকরের সঙ্গে। অনেকের প্রশ্ন, আবু বকর কি পুলিশের টিয়ারশেল বা গুলিতে মারা গিয়েছিলেন নাকি ছাত্রলীগের। প্রত্যক্ষদর্শী ওই হলের এক শিক্ষার্থী সেই সময়ের ঘটনা নিয়ে কথা বলেছেন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্যার এ এফ রহমান হলের প্রত্যক্ষদর্শী ওই শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, মূলত গ্রুপিং রাজনীতি থেকেই ওইদিনের ঘটনার সূত্রপাত। সেই সময়ের হলের প্রথা অনুযায়ী ওই রাতে হলের সিট দখলকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। রাত ১ টার দিকে পুলিশ হলে প্রবেশ করে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে সংঘর্ষ থেমে যায়। সংঘর্ষ থামার পর এক পর্যায়ে শুধু রাজনৈতিক নয় বরং অনেক সাধারণ রুমে প্রবেশ করে পুলিশ বেপরোয়াভাবে লাঠি চার্জ করেছিল। পরে পুলিশ ৫ তলার ৫০৩ নম্বর রুমে ঢুকে ৪ তলার ৪০৪ নম্বর রুমের বেলকনির দিকে টিয়ারশেল বা গুলি ছোড়ে। যার একটি আঘাত লাগে বেলকনিতে অবস্থানরত আবু বকরের মাথায়। ওই গুলির আঘাতেই একদিন পর হাসপাতালে আহত অবস্থায় বকরের মৃত্যু হয় বলে তিনি মনে করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, এমনকি পুলিশের চার্জ সহ্য করতে না পেরে ৫০৩ নম্বর রুম থেকে লাফ দিয়ে সেদিন দুইজন সাধারণ ছাত্র ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। আমিও পাশের রুমে অবস্থান করছিলাম।
জানা গেছে, ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত ১০ ছাত্রকে নামমাত্র সাময়িক বহিষ্কার করেই দায় সারে। আবু বকর ছিদ্দিক হত্যা মামলায় ২০১২ সালের ২৬ নভেম্বর ছাত্রলীগের ১০ নেতাকর্মীকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। শাহবাগ থানার দেওয়া অভিযোগপত্রে আটজনকে আসামি করা হয়েছিল। পরে আদালত সব আসামিকে খালাস দেন।
এদিকে হাইকোর্টের দেওয়া এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে অ্যাডভোকেট শিশির মনিরকে আইনজীবী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে।