০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:৫৯

পোষ্য কোটা ঘিরে চবিতে অস্থিতিশীলতার শঙ্কা

পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের অনশন  © টিডিসি ফটো

গত কয়েকদিন ধরে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীরা। মূল ফটকে তালা দেওয়া, বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালনের পরন গতকাল বুধবার দুপুর থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অনশন শুরু করেন ৬ শিক্ষার্থী। পরবর্তীতে তাদের সঙ্গে যোগ দেন আরও প্রায় ২০ শিক্ষার্থী। অন্যদিকে পোষ্য কোটা বহালের দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার মানববন্ধনের ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। শিক্ষার্থী এবং তাদের আন্দোলনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীলতার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বুধবার দুপুরে চবির দুই উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন, ছাত্রছাত্রী পরামর্শ ও নির্দেশনা কেন্দ্রের পরিচালক এবং প্রক্টর শিক্ষার্থীদের সমঝোতা ও আলোচনার আহ্বান জানান। তবে শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করেন। পরবর্তীতে সন্ধ্যায় উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) এবং প্রক্টর আবারও তাদের আলোচনার মাধ্যমে একটি যৌক্তিক সমাধানের আহবান জানান। তবে তাও রাজি হননি অনশনরত শিক্ষার্থীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বুধবার রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইয়াহইয়া আখতার অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করতে যান। আন্দোলনরতদের নিজ হাতে খাওয়ানোর চেষ্টা করলেও তারা তাদের দাবিতে ছিলেন অনড়। গতকাল দুপুর ১২টা থেকে টানা ১৪ ঘণ্টা অনশন করার পর রাত ২টার দিকে অনশন স্থগিত করেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে, পোষ্য কোটা বহাল রাখার দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার মানববন্ধনের ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ। এ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হয়েছে অস্থিতিশীলতার শঙ্কা। 

এর আগে দুই দফায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেন শিক্ষার্থীরা। কিছু শিক্ষার্থীর ৯ দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই আলোচনা হয়। এই ৯ দফার মধ্যে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবি ২ নম্বরে ছিলো।

দ্বিতীয় দফার আলোচনায় শিক্ষার্থীরা এক থেকে দেড় শতাংশ পোষ্য কোটা রাখার ব্যাপারে সম্মত হন বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে। যেসব শিক্ষার্থী সেদিন আলোচনায় ছিলেন না তারা এই সমঝোতায় সম্মত না হয়ে অনশনের ডাক দিয়েছেন। আলোচনায় উপস্থিত থাকাদের মধ্যে সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফিও এই অনশনে যোগ দিয়েছেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানরা পোষ্য কোটার সুবিধা পেয়ে থাকেন। এই কোটা চবিতে ‘ওয়ার্ড কোটা’ নামে প্রচলিত রয়েছে। বিভিন্ন বিভাগে এই কোটায় এক থেকে সর্বোচ্চ পাঁচটি পর্যন্ত আসন রয়েছে। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ওয়ার্ড কোটায় আসন রাখা হয়েছে ১৬৬টি। গত বছর একই সংখ্যক ওয়ার্ড কোটায় ভর্তি হয়েছিলেন ৮৩ জন।

চবিতে ওয়ার্ড কোটা সাধারণ আসনের বাইরে অতিরিক্ত হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয়। অর্থাৎ কোনো বিভাগে সাধারণ ১০০টি আসন থাকলে এই ১০০ আসনের বিপরীতে আনুপাতিক হারে ওই বিভাগে কয়েকটি ওয়ার্ড কোটার আসন রাখা হয়।

এই কোটার বাইরে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা ৯৪, অ-উপজাতি কোটা ৫১, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটা ২১২, শারীরিক প্রতিবন্ধী কোটা ২০, অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা ৬, বিকেএসপি কোটা ১১, দলিত জনগোষ্ঠী কোটা ৯ ও পেশাদার খেলোয়াড় কোটা ৫টি বরাদ্দ রয়েছে। সবমিলিয়ে কোটায় আসন রয়েছে ৫৭৪টি।

আগের বছরগুলোর সঙ্গে এবছর ভর্তি পরীক্ষায় কিছু পরিবর্তন এসেছে। পূর্বে কোটায় পাস পার্ক ছিলো ৩৫, যা এবছর সাধারণ শিক্ষার্থীদের সবার সমান ৪০ করা হয়েছে। এবছর কোটার খালি আসনগুলো মেধার ভিত্তিতে পূর্ণ করা হবে। এছাড়া সরকারি সিদ্ধান্তে মুক্তিযোদ্ধার নাতিদের কোটা বাতিল করা হয়েছে।

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে সাধারণ আসন রয়েছে ৪ হাজার ১১টি। কোটা ও সাধারণ আসন মিলিয়ে ৫৩টি বিভাগে সর্বমোট আসন রয়েছে ৪ হাজার ৫৮৫টি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনসুর আলী জাানান, পোষ্য কোটার বিষয়টি নিয়ে তারা আলোচনা করছেন। মৌখিকভাবে প্রশাসনকে এ বিষয়ে অবহিত করেছেন তারা। তিনি জানান, এই কোটা বাতিল করলে কারো কোনো লাভ নেই। কারণ, এই কোটার বিপরীতে কোনো সাধারণ আসন নেই।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমান বলেছেন, প্রশাসনের সঙ্গে একটি সভায় তারা তাদের মতামত জানিয়েছেন এবং আরেকটি সভা হওয়ার কথা রয়েছে সেখানেও তারা মতামত জানাবেন। তারাও বিষয়টির সমাধান চান।

উল্লেখ্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পোষ্য কোটা বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে, কোটা বাতিলের প্রতিবাদ ও তা পুনর্বহালের দাবিতে প্রথমে মানববন্ধন করলেও গতকাল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পূর্নদিবস  কর্মবিরতি পালন করেছেন।