রাবিতে আওয়ামীপন্থি সহকারী প্রক্টর নিয়োগ, বাতিলে ৭ দিনের আল্টিমেটাম
আন্দোলনের ৩ মাস পার হয়ে গেলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদেই বহাল আছেন আওয়ামীপন্থি শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এদিকে নতুন করে সহকারী প্রক্টর পদেও আওয়ামীপন্থি এক শিক্ষকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এতে ফুঁসে উঠেছেন শিক্ষার্থীরা। তার নিয়োগ বাতিল করতে ৭ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন সমন্বয়কেরা। নতুন প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলানোর হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তারা।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ বিষয়ে পোস্ট করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহীর অন্যতম সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার।
তিনি বলেন, ‘৭ দিনের মধ্যে প্রশাসনের ফ্যাসিস্ট শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বিচারের আওতায় না আনলে রাবি প্রশাসনিক ভবনে তালা দিবে শিক্ষার্থীরা। ৭ দিন পরে ভুলে যাবো আপনাদের সাথে আন্দোলন করেছি। শহিদের এক ফোটা রক্তের সাথে বেইমানি নয়। দায়িত্ব পালন করতে না পারলে পদত্যাগ করবেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘আওয়ামী শাসনামলে আট বছর ধরে তাপসী রাবেয়া হলে হাউজ টিউটর ছিল তামজীদ হোসেন মোল্লা। তাকে সহকারী প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। সে আন্দোলনের বিরুদ্ধে মাঠে সোচ্চার ছিল। কীসের ভিত্তিতে তাকে এই দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে?’
প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আপনাদের বিরুদ্ধে কি যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে? অবিলম্বে তার নিয়োগ বাতিল এবং এর কারণ দেখাবেন প্রশাসন। একের পর এক ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন করছেন আপনারা।’
আরেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বিগত স্বৈরাচার রেজিমের মদদপুষ্ট শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসীদের বিচার অনতিবিলম্বে নিশ্চিত করার জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ৭ দিনের আল্টিমেটাম দেওয়া হলো। আপনাদের উপর আমাদের একবুক আশা ভরসা ছিল। কিন্তু বারবার আপনারা সেই আশাকে নিরাশায় রূপ দিচ্ছেন। ফ্যাসিস্টদের বিচারের জন্য আর কোনো ছাড় হবে না। আর আপনাদেরকে কালক্ষেপণ করতে দেওয়া হবে না।’
মেহেদী বলেন, ‘রুটিন দায়িত্ব পালন করার জন্য আপনাদেরকে ওই চেয়ারে বসানো হয়নি। জুলাইকে ধারণ করতে না পারলে জায়গা ছেড়ে দিন। আগামী ৭ দিনের মধ্যে যদি দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা আমাদের চোখে না পড়ে তাহলে আপনাদের পদত্যাগ দাবি করতে আমরা দুবার ভাবব না।’
অন্যদিকে আরেক সমন্বয়ক নওসাজ জামান লিখেছেন, ‘এসব কী চলছে রাবি প্রশাসন? এগুলোতে কি আসলেই আপনাদের ইন্ধন আছে নাকি এদের ছাড়া অন্য কোনো সহযোদ্ধা খুঁজে পাচ্ছেন না নাকি রাজনৈতিক ব্যক্তিগুলো ফোর্স করছে? যেখানে এদেরকে বিচারের মুখোমুখি করার কথা সেখানে আপনারা এদেরকে রুমের মধ্যে জায়গা দিচ্ছেন কোন দৃষ্টিকোণ থেকে? অবিলম্বে তানজিদ হাসান মোল্লাকে বহিষ্কার করতে হবে। তার সাথে এমন দোসরদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাবি উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী প্রক্টর মো. তানজিদ হোসেন যোগদান করবেন না। আর যদি কথা আসে আওয়ামীলীগের দোসর ও আন্দোলন বিরোধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে, সেগুলো নিয়ে আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। কয়েকটি কমিটি কাজ করছে। তবে প্রশাসনের একার পক্ষে সকলকে খুঁজে বের করা সম্ভব নয়। যে কেউ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে সেটা আমরা তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। শিক্ষার্থীদেরকে বলব আপনারা আমাদেরকে সহযোগিতা করুন।’
উল্লেখ্য, বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সহকারী প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ পান মো. তানজিদ হাসান মোল্লা। তিনি ৩ আগস্ট জুলাই বিপ্লবের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নিয়ে শিক্ষকদের করা আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ রাবির ৪৬৭ নাম্বার ভোটার।