শাহবাগে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের প্রতিনিধিকে আটকে রাখলেন স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা
রাজধানীর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের দোকানে চাঁদা চেয়ে না পাওয়ায় দোকান বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি পাওয়া গেছে স্থানীয় ছাত্রদল-যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্য মো. সৌরভ ইসলামকে ‘ভুয়া সাংবাদিক’ আখ্যা দিয়ে আটকে রাখা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ওই মার্কেটের চারতলায়এ ঘটনা ঘটে। এতে নেতৃত্বে দেন চাঁদাবাজির ঘটনায় অভিযুক্ত শাহবাগ থানার ২১নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মো. শাহ আলম। পরে এ আটকের সংবাদ পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ভুক্তভোগী সাংবাদিককে উদ্ধার করেন।
জানা যায়, এ ঘটনার বিষয়টি জানতে ভুক্তভোগী সাংবাদিক মো. সৌরভ ইসলাম শাহবাগের স্বাধীন রেস্টুরেন্টের মালিক মামুন নজরুলের সাথে কথা বলেন। এসময় তিনি বেশ কিছু তথ্য এই প্রতিবেদককে জানান। ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্যদের ফোন নম্বর চাইলে নজরুল নিজেই ২১ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক শাহ আলমকে ডাকেন।
পরে শাহ আলম কৌশলে এই প্রতিবেদককে শাহবাগের আজিজ মার্কেটের চারতলায় আওয়ামী লীগ নেতা হাসানের রোগী নিবাসের কার্যালয়ে আধা ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আটকে রাখে বিএনপি, স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল, ছাত্রদলের ৩০ থেকে ৪০ জন মিলে তার ফোন কেড়ে নিতে চান। এসময় তাকে মারতে উদ্যত হন এবং পুলিশের নিকট ধরিয়ে দিতে চান।
ঘটনার ব্যাপারে ভুক্তভোগী সাংবাদিক মো. সৌরভ ইসলাম বলেন, চাঁদাবাজির একটি ভিডিও ফুটেজ আমার হাতে এসেছে। আমি ঘটনার সংবাদ সংগ্রহের জন্য স্বাধীন রেস্টুরেন্টের মালিক নজরুলের সাথে কথা বলি ওনার রেস্টুরেন্টেই। নজরুল ভাই আমাকে জানান যে শহীদুল ইসলাম ফারুক নামে এক বিএনপি নেতা একটি পানের দোকান তুলে দিয়ে ওখানে উনি নিজেই দোকান বসিয়েছেন। দোকানটি আগে আওয়ামী লীগের সাদ্দাম নামক এক ব্যক্তির সিন্ডিকেটের অধীনে ছিল। সাদ্দাম বর্তমানে আজিজ মার্কেটের একটি রোগী নিবাসের মালিক।
তিনি বলেন, নজরুলের সাথে কথা বলা চলাকালীন নজরুল আমাকে বলেন যে, ফারুকও বিএনপি করে আমিও আমরাও বিএনপি করি তাহলে ভাগ তো আমরাও পাই। এই নিয়ে মূল সমস্যা। তবে সামনের মাস থেকে ফারুক আমাকে ঐ দোকান ভাড়া দিবে।
আমি তারপর ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্যদেরর নাম্বার চাইলে নজরুল ২১নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক শাহ আলম কল দেন এবং তিনি আমার পরিচয় জেনে আমাকে বলেন যে তিনি আসছেন আমার সাথে কথা বলতে। তারপর তিনি এসে বলেন যে আমি যে কথা রেকর্ডিং করছি এটা করা যাবে না।
আমি আপত্তি জানালে তিনি বলেন যে, তাহলে বাইরে চলেন, বাইরে গিয়ে আমরা কথা বলি। এরপর তিনি আমার কার্ড দেখতে চান । আমি বলি যে আমি কার্ড রুমে রেখে এসেছি। এরপর তিনি আমাকে আজিজ মার্কেটের রোগী নিবাসের মালিক আওয়ামী লীগ নেতা সাদ্দামের কার্যালয়ে নিয়ে যান। এরপর সেখানে থাকা অন্যান্য ব্যক্তিদের তিনি বলতে থাকেন যে আমি নাকি ঘটনার সমঝোতার জন্য তার কাছ থেকে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছি। তিনি এসময় আমাকে ভুয়া সাংবাদিক বলতে থাকেন এবং আমার ফোন কেড়ে নিতে চাচ্ছিল। তার ৪ জন মিলে ভিডিও করছিল যে আমি ভুয়া সাংবাদিক তাই তারা আমাকে ধরেছে।
এরপর তাদের মধ্য থেকে আমাকে একজন তেড়ে মারতে আসে। স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক শাহ আলম বলছিল যে আমাকে পুলিশে দিবে। আমাকে আধা ঘণ্টারও বেশিক্ষণ আটকে রাখে সেখানে। এরপর সাংবাদিক সমিতির ভাইয়েরা গেলে বাকবিতণ্ডার পর ওয়ার্ড বিএনপির পক্ষ থেকে আমার কাছে মাফ চাওয়া হয়। স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক শাহ আলমও আমার কাছে মাফ চায়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ঘটনা জানতে পেরে আমরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই এবং তারা আমাদের কাছে স্বীকার করেন যে তারা চাঁদাবাজের সাথে সংশ্লিষ্ট। তারা আমাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনাও করেন।
তিনি বলেন, আসলে এই ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য না। দেশের নতুন রাজনৈতিক পরিবর্তিত অবস্থাতেও এমন ধরনের ঘটনা আমাদেরকে হতাশ করে। সকল রাজনৈতিক দলগুলোকেই এগুলো মাথায় রেখে চলা উচিত।
প্রসঙ্গত, চাঁদাবাজির এই ঘটনায় অভিযুক্ত নেতাকর্মীরা হলেন- শাহবাগ থানা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. জাহিদুল ইসলাম, যুবদল থেকে বহিষ্কারকৃত নেতা শহিদুল ইসলাম খোকন, ২১ নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মো. শাহ আলম, শাহবাগ থানা ছাত্রদলের কর্মী শিমুল এবং স্বাধীন রেস্টুরেন্ট মালিক মো. নজরুল।