ঢাবি ভর্তিতে পোষ্য ও খেলোয়াড় কোটা কেন বাতিল নয়, হাইকোর্টের রুল
ঐতিহাসিক ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর সারা দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক কোটা বাতিলের দাবি আরও জোরালো হয়েছে। তবে এখনও কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রয়ে গেছে নানাধর্মী কোটা। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ভর্তিতে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনি কোটা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের পরিপন্থি উল্লেখ করে তা বাতিল করা হলেও পোষ্য কোটা ও খেলোয়াড় কোটা এখনও আছে। এই দুই কোটাও ‘সংবিধানবিরোধী এবং সুপ্রিম কোর্টের রায়বিরোধী’— উল্লেখ করে তা কেন বাতিল হবে না জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আশরাফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রুল জারি করেন। দুই সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব। তাকে সহযোগিতা করেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার, অ্যাডভোকেট বায়োজিদ হোসাইন ও অ্যাডভোকেট নাঈম সর্দার। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শফিকুর রহমান। তাকে সহযোগিতা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহফুজ বিন ইউসুফ, অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট একরামুল কবির ও অ্যাডভোকেট মো. ঈসা।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছেলে-মেয়েরা পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর মধ্যে পড়েন না। তাদের ছেলে-মেয়েরা ভর্তি পরীক্ষায় ৪০% বা পাশ নম্বর পেলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেন। এটার নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা নেই। এই বিধানের ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্য করা হচ্ছে। এ ধরনের বিধান সংবিধান ও আপিল বিভাগের রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আর খেলোয়াড় কোটার বিধানটিও বৈষম্যমূলক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তিতে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য পোষ্য কোটা ও খোলোয়াড় কোটা বাতিলের জন্য সুপ্রিম কোর্টে রিটটি দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার। এর আগে ৫ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের ই-মেইলে আইনি নোটিশ প্রদান করেন। নোটিশ পাওয়ার পর যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ায় একটি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান, একজন অভিভাবক, একজন সাধারণ নাগরিক ও সুপ্রিম কোর্টের ৭জন আইনজীবীর পক্ষে রিট দায়ের করা হয়েছিল। রিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি (প্রশাসন), প্রো-ভিসি (শিক্ষা) ও রেজিস্ট্রারকে বিবাদী করা হয়েছে। রিটকারীররা হলেন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার, ব্যারিস্টার মাহদী জামান (বনি), অ্যাডভোকেট বায়েজীদ হোসাইন, অ্যাডভোকেট নাঈম সর্দার, অ্যাডভোকেট শাহেদ সিদ্দিকী, অ্যাডভোকেট খায়রুল বাশার, অ্যাডভোকেট লোকমান হাকিম, একজন ছাত্রীর অভিভাবক মো. হোসেন আলী ও ব্যবসায়ী মাহফুজুল ইসলাম।
নোটিশ পাওয়ার ৫ দিনের মধ্যে (ক) মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ (খ) ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং (গ) শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ বহাল রেখে বাকি সব কোটা বাতিল করতে বলা হয়েছিল। নোটিশ গ্রহীতারা ব্যবস্থা না নিলে সুপ্রিম কোর্টে রিটসহ বিষয়টি নিয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছিল।
নোটিশে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাঙালি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রতীক। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মকর্তারা সব গণতান্ত্রিক ও অধিকার রক্ষার আন্দোলনে অবদান রেখেছেন। সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের কোটা সংস্কার আন্দোলন ও স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতন আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়।
নোটিশে বলা হয়, একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া অবশ্যই মেধার ভিত্তিতে হতে হবে এবং অন্য কোনো মানদণ্ডে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া সাধারণত বৈষম্যমূলক, স্বেচ্ছাচারী এবং অযৌক্তিক, কোনো বৈধ রাষ্ট্রীয় উদ্দেশ্যের সঙ্গে কোনো যৌক্তিক সম্পর্ক নেই।
দেশের সর্বোচ্চ আদালত মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের সন্তানদের জন্য সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে মাত্র ৫ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রেও এই রায় প্রয়োগ করতে হবে। নোটিশ পাওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি, নাতনি কোটা বাতিল করা হলেও পোষ্য কোটা ও খেলোয়াড় কোটা বহাল রেখেছেন কর্তৃপক্ষ।