৭৭১ পজিশনেও মেধাবীরা ভর্তিবঞ্চিত, পোষ্য কোটায় ৭ হাজারেও চান্স
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) পোষ্য কোটা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক ও আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এ কোটা বাতিলের জন্য বেশ জোরালো দাবি তুলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তবে এখনও এটি বহাল রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন, স্মারকলিপি, এমনকি আমরণ অনশন করলেও লাভ হয়নি। শিক্ষকরা পক্ষে থাকায় এ কোটা বাতিল করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে এ কোটায় ভর্তি হয়েছেন ৪৪২ জন শিক্ষার্থী। যার মধ্যে সর্বশেষ ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েছেন ৯৪ জন। এরমধ্যে ‘এ’ ইউনিটে ৩৬, ‘বি’ ইউনিটে ১৯ এবং ‘সি’ ইউনিটে ৩৯ জন রয়েছেন। এ শিক্ষাবর্ষে মেধাতালিকায় ৭৭১তম হয়েও একজন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারেননি। অথচ পোষ্য কোটায় ৭ হাজার ৭০০ এর ওপরের পজিশনে থেকে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ‘এ’ ইউনিটে সর্বশেষ ৭৭০তম মেধাস্থানে থাকা শিক্ষার্থী উর্দু বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। এরপর আর কোনো মেধাতালিকা প্রকাশ না করায় ৭৭১তম মেধাস্থানের শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারেননি। কিন্তু পোষ্য কোটায় ৭ হাজার ৭৮৭তম মেধাস্থানধারী শিক্ষার্থী ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
ভর্তিসংক্রান্ত তথ্য বলছে, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ‘এ’ ইউনিটে সর্বশেষ ৭৭০তম মেধাস্থানে থাকা শিক্ষার্থী উর্দু বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। এরপর আর কোনো মেধাতালিকা প্রকাশ না করায় ৭৭১তম মেধাস্থানের শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারেননি। কিন্তু পোষ্য কোটায় ৭ হাজার ৭৮৭তম মেধাস্থানধারী শিক্ষার্থী ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
এছাড়া পোষ্য কোটায় ৫ হাজার ২৫০ এর ওপরের পজিশনে থেকে আইন বিভাগে ও ৬ হাজার ৫৫০ এর ওপরের পজিশনে পেয়েছে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তির সুযোগ। পাশাপাশি ৭ হাজার ৫৫০ এর ওপরে বাংলা বিভাগে, ৭ হাজার ১৫০ এর ওপরের পজিশনে ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ৬ হাজার ৭০০ এর ওপরে লোকপ্রশাসন, ৬ হাজার ৬৫০ এর ওপরে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ এবং ৬ হাজার ৬০০ এর ওপরে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছেন পোষ্য কোটাধারীরা।
৫ হাজারের ওপরে পজিশন করেও তিন ইউনিটের ৩৮ জন শিক্ষার্থী পোষ্য কোটায় শীর্ষস্থানীয় বিভাগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে ভর্তি হয়েছেন। এটিকে রীতিমতো চমকে ওঠার মতো তথ্য বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টার সূত্র জানায়, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ৯৬ জন, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ১০০, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ১১৩, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ৩৯ ও ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ৯৪ জন শিক্ষার্থী পোষ্য কোটায় ভর্তি হয়েছেন। অর্থাৎ গত ৫ বছরে ৪৪২ জন শিক্ষার্থী পোষ্য কোটায় ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
পোষ্য কোটা নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, জুলাই বিপ্লবের সূচনা ছিল কোটার যৌক্তিক সংস্কার চেয়ে। দেশ সংস্কার হলেও পোষ্য কোটার মতো একটা অযৌক্তিক বিষয় নিয়ে তালবাহানা করছে প্রশাসন। তাদের বক্তব্য শুনে আমরা অবাক হয়েছি। তারা বলছে, পোষ্য কোটা ইস্যুটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, আরো অনেক ইস্যু আছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রশাসনকে স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছি, এটাই আমাদের প্রধান ইস্যু। আজ বিকালের মধ্যে প্রশাসন আমাদের বাতিলের সিদ্ধান্ত না দিলে সন্ধ্যায় প্রেস ব্রিফিং করে আন্দোলন কর্মসূচি দেব। পোষ্য কোটার মতো একটা অযৌক্তিক দাবির পক্ষে যারা অবস্থান নেবেন, তাদেরকে অবশ্যই চিহ্নিত করা হবে।’
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পোষ্য কোটার নির্ধারিত আসনেরও বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। সর্বশেষ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য প্রতি বিভাগ বা ইনস্টিটিউটে ৪ শতাংশ কোটা চালু রয়েছে। সে হিসেবে আইন বিভাগে (১১০টি আসন) চারজন পোষ্য কোটাধারী শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবেন। তবে চলতি বছরে এ বিভাগে সাতজনকে ভর্তি করানো হয়েছে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে (৪০ আসন) দু’জন শিক্ষার্থীর ভর্তির সুযোগ থাকলেও তিনজনকে এবং অর্থনীতি বিভাগে (১০০ আসন) চারজনের পরিবর্তে পাঁচজনকে ভর্তি করা হয়েছে। এটি নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। অবশ্য ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে পোষ্য কোটা ৪ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েও ভর্তির সুযোগ পান ৭১ জন শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিতে সংরক্ষিত পোষ্য (ওয়ার্ড) কোটা, খেলোয়াড় কোটা এবং বিশেষ বিবেচনায় তাঁদের এ ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়। নির্ধারিত পাস মার্ক না পাওয়ার কারণে পোষ্য কোটার আসন খালি ছিল।
আরো পড়ুন: ২৩ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ থাকছে, ভর্তি পরীক্ষার সময় নিয়ে যা জানা গেল
২০২২ সালের ৭ নভেম্বর ভর্তি উপকমিটির সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক, আসন ফাঁকা থাকা সাপেক্ষে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁদের সন্তানদের ভর্তির আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পাস নম্বর ৪০ থেকে কমিয়ে ৩০ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফলে ৭১ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পান।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা উভয়মুখী চাপের মধ্যে আছি। শিক্ষার্থীদের এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করে সমন্বিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করছি। শিক্ষকরা পোষ্য কোটাকে কোটা বলতে রাজি নন। এটি অতিরিক্ত সুবিধা হিসেবে দেখছেন। তাই উভয় পক্ষকে বুঝিয়ে মাঝামাঝি অবস্থানে আসার চেষ্টা করছি।’
পোষ্য কোটা ৪ শতাংশ থাকার পরও এ বছর শুধু আইন বিভাগেই ৭ জন ভর্তি হয়েছেন। কীভাবে এটি সম্ভব হয়েছে জানতে চাইলে উপ-উপাচার্য বলেন, ‘স্পেসিফিক এক বিভাগ সম্পর্কে তো আর বলতে পারব না। আমার জানা মতে, এ বছর কোটায় সম্ভবত ৭৮ জন ভর্তি হয়েছিল। সেখানে ২ শতাংশও কোটার ব্যবহার হয়নি।’