সাংবাদিককে মারধর, রাবির সাবেক উপ-উপাচার্যসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সাবেক সহসভাপতি ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের গ্লোবাল কমিউনিটির সদস্য সরদার হাসান ইলিয়াছ তানিমের ওপর ২০১১ সালে ১৪ আগস্ট ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া, সাবেক ছাত্র উপদেষ্টা মো. তারেক নুর, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মুসতাক আহমেদসহ তৎকালীন ছাত্রলীগের ৯ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ মামলা করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) বাদী হয়ে রাজশাহী কোর্টে মামলাটি করেন ভুক্তভোগীর ছোট ভাই মো. রোকনুজ্জামান (২৬)। আজ বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় রাবির কাজী নজরুল অডিটরিয়ামে মামলা-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তিনি।
রাজশাহী জেলা বিজ্ঞ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মতিহার থানা আমলি আদালতের মামলা নাম্বার সিআর ২১১/২০২৪ (মতিহার)। কোর্ট মামলাটি আমলে নিয়ে ২০২৫ সালের ৭ জানুয়ারির মধ্যে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
আরও পড়ুন: রাবি অধ্যাপকের বিরুদ্ধে প্রকাশনা জালিয়াতির অভিযোগ সহকর্মীর
মামলায় অন্য আসামিরা হলেন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের তৎকালীন রাবি শাখার সভাপতি ও সদ্য বিলুপ্ত হওয়া নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আহম্মদ আলী ওরফে আহম্মদ আলী মোল্লা (৪২), তৎকালীন রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আবু হোসাইন ওরফে আবু হোসাইন বিপু (৩৭), তৎকালীন মাদার বখ্শ হল শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ও বর্তমান তেজগাঁও শিল্প অঞ্চল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (বিপি নম্বর - ৮৫১৩১৪৭৮৫৯) রুহুল আমিন বাবু (৩৮), তৎকালীন রাবি শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও বর্তমান গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আল আরাফাত রাব্বি (৩৪), তৎকালীন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী ও রাবির ২০০৩-০৪ সেশনের ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ইঞ্জিনিয়ার আবদুল আলিম (৩৫) ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান ২০০৭-০৮ সেশনের কামাল হোসেন (৩৫)।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সরদার হাসান ইলিয়াছ তানিম ২০০৮-০৯ সেশনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তিনি সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা থানার দক্ষিণ কুলিয়া গ্রামের আব্দুল কাদেরের ছেলে। আহত হওয়ার সময় তিনি জাতীয় দৈনিক সংগ্রাম ও রাজশাহী স্থানীয় দৈনিক লাল গোলাপ পত্রিকার প্রতিবেদক ছিলেন।
আরও পড়ুন: ঢাবির জগন্নাথ হলে ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী মিছিল হিন্দু শিক্ষার্থীদের
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাদী মো. রোকনুজ্জামান বলেন, ‘২০১১ সালের ১৪ আগস্ট আনুমানিক বেলা দুইটায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ আমীর আলী হলের স্টোর রুম থেকে ককটেল উদ্ধারের সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে আমার বড় ভাইকে হত্যার উদ্দেশ্যে ছাত্রলীগ তার উপর বর্বরোচিত আক্রমণ করে।’
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ওই সময় আসামি রুহুল আমিন বাবু (বর্তমান পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর) হকিস্টিক দিয়ে তাকে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করেন। পরে ইট দিয়ে তার মাথা ও মুখে আঘাত করে রক্তাক্ত করা হয় এবং আমীর আলী হলের সামনে থাকা পানির কুয়ার মধ্যে ফেলে চুবিয়ে তাকে ধরে রাখা হয়। ওই সময় পানি থেকে উঠিয়ে আসামি আবদুল আলীম, আল আরাফাত রাব্বি ও আহম্মদ আলী মোল্লা জিআই পাইপ এবং আবু হোসাইন বিপু রড দিয়ে ভুক্তভোগীর পিঠে, কোমরে ও পায়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকেন। এ সময় ভুক্তভোগীর পকেটে থাকা মোবাইল ফোন (নোকিয়া-৫১৩০ মডেল) আসামি কামাল হোসেন ও হাতে থাকা ক্যামেরা (ক্যানন ৫৫০ ডি.) আহম্মদ আলী মোল্লা ছিনিয়ে নেন।
আরও পড়ুন: ভারতে বাংলাদেশী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে ঢাবিতে বিক্ষোভ
এজাহার সূত্রে আরও জানা যায়, ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর (পরবর্তী সময়ে উপ-উপাচার্য) চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া, সহকারী প্রক্টর তারেক নূর ও সাবেক সহকারী প্রক্টর মুস্তাক আহমেদ। এস ময় সাংবাদিক তানিম তাদের নিকট বারবার ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনীর নির্যাতন থেকে রক্ষা করার জন্য আকুতি মিনতি করলেও তারা কোনো প্রকার সাহায্য করেননি বরং উল্টো ভুক্তভোগীর উপর হামলা করার জন্য নির্দেশ দেয়। তাদের মৌন সম্মতি পেয়ে দ্বিতীয়বার রড ও হকিস্টিক দিয়ে সাংবাদিক তানিমকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকেন। নির্যাতনের এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে মৃত ভেবে আসামিরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় সহকর্মী সাংবাদিকরা তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করেন।
আরও পড়ুন: দলীয়ভাবে নিয়োগ পাওয়া অযোগ্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে ঢাবি
সংবাদ সম্মেলনে বাদী মো. রোকনুজ্জামান বলেন, ‘দীর্ঘদিন দেশে আইনের শাসন না থাকায় মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে। আমি মহামান্য আদালদের কাছে আমার ভাইয়াকে হত্যাচেষ্টাকারী উক্ত আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। একই সাথে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূসসহ সব উপদেষ্টা, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের নাগরিকদের ওই মামলার আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সোচ্চার ভূমিকা পালন করার অনুরোধ করছি।’