২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৭

ইসকন নিষিদ্ধসহ বিচার দাবিতে উত্তাল বিভিন্ন ক্যাম্পাস

বিভিন্ন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা  © টিডিসি ফটো

চট্টগ্রামে সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) সাইফুল ইসলাম (৩৫) নিহতের ঘটনায় সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ইসকনকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশ থেকে নিষিদ্ধের দাবি জানান তারা।

ইসকনকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশ থেকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময় চট্টগ্রামের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার বিচার দাবি করেন তারা।

মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাত ৯টায় শহীদ জোহা চত্বরের সামনে এ বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল থেকে শিক্ষার্থীদের জোহা চত্বরে মিলিত হতে দেখা যায়। পরে জোহা চত্বরে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়, ‘আমার সোনার বাংলায়, উগ্রবাদের ঠাই নাই’ ‘জঙ্গি জঙ্গি, ইসকন জঙ্গি’, ‘ভারতের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’।

আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম নিউমার্কেট চত্বরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ও জনতা। তাঁরা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রামের সমন্বয়ক রিজাউর রহমান সেখানে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবে রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে। হিন্দু ভাইদের অনুরোধ, আপনারা ষড়যন্ত্রে পা দেবেন না। আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে একসঙ্গে অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ব। বুধবার (২৭ নভেম্বর) বাদ জোহর নিউমার্কেট চত্বরে সাইফুল ভাইয়ের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।’

একই দাবিতে মিছিল করছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এই সময় আইনজীবী সাইফুলের গায়েবানা জানাজা করেন তারা। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাত রাজু ভাস্কর্যের সামনে গায়েবানা জানাজা হয়। জানাজার আয়োজন করে ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব লোহাগড়া-সাতকানিয়া।

গায়েবানা জানাজায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

 

গায়েবানা জানাজায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া তাদের সঙ্গে ইনকিলাব মঞ্চ, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ইসলামি ছাত্র আন্দোলন, স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন। গায়েবানা জানাজা শেষে শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ভিসি চত্বরে যান। এসময় তারা ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবি জানান। ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। দাবি পূরণ না হলে সচিবালয় ঘেরাও করার ঘোষণাও দিয়েছে সংগঠনটি। 

একই ঘটনার প্রতিবাদ এবং ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মঙ্গলবার মধ্যরাতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাতে বুয়েটের বিভিন্ন হল থেকে বুয়েট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। এরপর সেখান থেকে একটি মিছিল নিয়ে পলাশী-কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যে এসে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হন। এরপর মিছিলটি আবারও ভিসি চত্বর-ফুলার রোড হয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসে ফিরে যায়।

এছাড়াও চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত উগ্রবাদী ইসকন সদস্যদের গ্রেফতার, তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বিক্ষোভ করেছে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থীরা। 

গতকাল ২৬ নভেম্বর (মঙ্গলবার) রাত ১১ ঘটিকায় চুয়েটের স্বাধীনতা চত্বর এলাকায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করেন।

নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীতে রাত নয়টার দিকে মশাল হাতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করে গণ অধিকার পরিষদ। মিছিলটি শহরের গণপূর্ত ভবনের সামনে থেকে মোহাম্মদীয় মোড়, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, হাসপাতাল সড়কের মাথায় ও সুধারামের সামনে হয়ে টাউন হল মোড় প্রদক্ষিণ করে জেলা জামে মসজিদ মোড়ে যায়। সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য দেন গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় উচ্চতর পরিষদের সদস্য আব্দুজ জাহের, জেলা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি ফরহাদুল ইসলাম প্রমুখ। বক্তারা বলেন, ‘সরকারকে বলব, যারা চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে হত্যা করেছে, তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইসকনকে নিষিদ্ধ করতে হবে।’

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাত ইসকনকে সন্ত্রাসী ও জঙ্গি সংগঠন আখ্যা দিয়ে এ বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। অবিলম্বে অপরাধীদের গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় বিচার নিশ্চিতের দাবি জানান তারা। একইসঙ্গে ইসকনকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি জানান তারা।

শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

ইসকনের সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদ ও অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিক্ষোভ মিছিলে ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবি করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় মিছিল -স্লোগানে উত্তল হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যাললেয়র বটতলা এলাকা থেকে মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের প্রায় সব আবাসিক হল প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়। মিছিল শেষে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা।

এদিকে চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যার বিচার ও ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল জব্বার মোড়ে ওই বিক্ষোভ-মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৯টায় ক্যাম্পাসের জিয়া মোড় থেকে মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটক হয়ে ক্যাম্পাস সংলগ্ন শেখপাড়া বাজার ঘুরে পুনরায় প্রধান ফটকে এসে বিক্ষোভ সমাবেশে মিলিত হয়।

এছাড়া আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যার প্রতিবাদে পটুয়াখালীতে বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল করেছেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি ইসকন সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি জানান।

একই সময় পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও একটি বিক্ষোভ মিছিল করেন। এছাড়া পটুয়াখালী দুমকি উপজেলায় অবস্থিত পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে এবং বাবুগঞ্জ ক্যাম্পাসেও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন।

পাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

ইসকনকে উগ্রবাদী সংগঠন দাবি করে নিষিদ্ধের দাবিতে এবং চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারের দাবি জানান।

মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মশিয়ূর রহমান হল ও মুন্সি মেহেরুল্লাহ হলের শিক্ষার্থীরা হল গেট থেকে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেন।

এ সময় শিক্ষার্থীরা 'উগ্রবাদের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না', 'এক দুই তিন চার, ইসকন তুই বাংলা ছাড়', 'ইসকনের বিরুদ্ধে, আগুন জালাও একসাথে', 'দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা', 'একশ্যান টু একশ্যান, ডাইরেক্ট একশ্যান', 'আবু সাইদ মুগ্ধ,শেষ হয়নি যুদ্ধ', ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

চট্টগ্রামে পুলিশের সঙ্গে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে হত্যা করার ঘটনায় বিক্ষোভ করেছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ঘটনায় জড়িত চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারীদের গ্রেফতার ও আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন)কে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করার দাবি জানান।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শিক্ষার্থীদেরে বিক্ষোভ

মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকেন্ড গেট থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রদক্ষিণ করে কলেজ গেট, পুরাতন গণভবন হয়ে আবার সেকেন্ড গেটে এসে শেষ হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা ‘ভারতীয় আগ্রাসন রুখে দাও রুখে দাও’, ‘উগ্রবাদের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না’, ‘ইসকন সনাতন এক নয় এক নয়’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই, ইসকনের রক্ষা নাই’, ‘সন্ত্রাসীদের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না’ স্লোগান দিতে দেখা যায়। 

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের সামনের সড়কে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ জোটের মুখপাত্র অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে ইসকন সমর্থকদের হামলায় সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যা করা হয়।