২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৬

ঢাবি ভর্তিতে ‘সেকেন্ড টাইম’ রাখার পক্ষে যে যুক্তি দিলেন সাইয়েদ আব্দুল্লাহ

সাইয়েদ আব্দুল্লাহ  © সংগৃহীত

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে জোরালো ভূমিকা রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী সাইয়েদ আব্দুল্লাহ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ জনপ্রিয়তা তার। সমসাময়িক নানা প্রসঙ্গে তিনি ফেসবুকে মতামত তুলে ধরেন। দেশের ছাত্র আন্দোলন, রাজনীতি, দুর্নীতি, বৈষম্য, সংবিধান থেকে শুরু করে নানা ইস্যুতে অভিমত ব্যক্ত করেন। সম্প্রতি তিনি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে স্ট্যাটাস দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভর্তিতে ‘সেকেন্ড টাইম’ রাখার পক্ষে কিছু যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। তার ওই স্ট্যাটাস নানা কারণেই আলোচিত হয়েছে।

(ঢাবি) ভর্তিতে ‘সেকেন্ড টাইম’ রাখার পক্ষে-বিপক্ষে নানা যুক্তি রয়েছে। অনেকে চান, দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থাক। অনেকে তা চান না। এ ক্ষেত্রে সাইয়েদ আব্দুল্লাহর বক্তব্য অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হতে পারে। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পাঠকদের জন্য সাইয়েদ আব্দুল্লাহ হুবহু তুলে ধরা হলো:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকেন্ড টাইম ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ থাকা উচিত কিনা, সেটা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা কথাবার্তা আছে। সেকেন্ড টাইমাররা দীর্ঘদিন যাবত তাদের দাবিদাওয়া জারি রেখেছেন, ইতোমধ্যে একটা রিটও করা হয়েছে, হয়ত দ্রুত শুনানিও হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি কিছু কন্ডিশন শক্তভাবে ইমপোজ করে সেকেন্ড টাইমের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।

সেকেন্ড টাইম সুযোগ দেওয়ার শর্ত হতে পারে এমন—
১. যারা সেকেন্ড টাইম দিবে, তাদের ৫-৭ মার্ক কর্তন। 
২. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোমধ্যে যারা ভর্তি আছেন, তারা আর ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় অ্যাটেন্ড করতে পারবে না।

এবার আসি কেন আমি শর্তসাপেক্ষে সেকেন্ড টাইম চালুর পক্ষে সেই ব্যাখ্যায়। আমি এমন এক স্টুডেন্টকে চিনি, যার প্রস্তুতি ছিল অসাধারণ। পরীক্ষাতে বসতে পারলে হয়ত সে ঢাবিতে খুব ভালো একটা পজিশনও পেয়ে যেতে পারতো ভর্তি পরীক্ষায়। কিন্তু পরীক্ষার কয়েকদিন আগ থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সে পরীক্ষাই দিতে পারলো না। এখন যেহেতু সেকেন্ড টাইম নাই, তাই সে ইচ্ছা করলেই আর কোনোদিন কনটেস্টই করতে পারবে না। মানে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সে পরীক্ষায় বসার সুযোগ থেকেই বঞ্চিত হয়ে গেল সারা জীবনের জন্য। এটা তো যৌক্তিক কোন সিস্টেম হতে পারে না। কোন দুর্ঘটনা, রোগ-শোক, পরিবারের কারো মৃত্যু ইত্যাদি নানা কারণেই প্রথমবার ভর্তির সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে অনেকের।

বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ অবারিত রাখা হয় উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে। কিন্তু ইচ্ছা করলেও বাংলাদেশের মতো লিমিটেড সুযোগ সুবিধাসম্পন্ন দেশে সেটা হয়ত সম্ভব না। বহুবার না হোক, অন্তত সেকেন্ড টাইম পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ রাখা যায়। এটা আহামরি কোনো সমস্যা তৈরি করবে না বলেই আমার মতামত। মেডিকেল, বিইউপি, জাহাঙ্গীরনগর এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ অধিকাংশ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকেন্ড টাইম রয়েছে।কই, তাদের তো কোন সমস্যা হচ্ছে না!

তবে হ্যাঁ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যদি সেকেন্ড টাইম চালু করতে চায়, হয়ত বেশকিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। সেই চ্যালেঞ্জগুলো কীভাবে উতরানো যাবে, সেটা নিয়ে যদি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চিন্তা-ভাবনা করতো, তাহলে এতদিনে একটা রাস্তা নিশ্চয়ই বের হয়ে যেতো। এখন থেকে ১০ বছর আগেও সেকেন্ড টাইম ছিল ঢাবিতে।

যে চ্যালেঞ্জগুলো সামনে আসবে, সেটার সমাধান করার জন্য নিচের প্রক্রিয়াগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে—
১.  ফার্স্ট টাইমাররা খুব কম সময় পাবে প্রস্তুতির জন্য, কিন্তু সেকেন্ড টাইমাররা অতিরিক্ত একটা বছর প্রস্তুতি নিবে। এখানে একটা বৈষম্য হতে পারে। সেটার জন্য এমন একটা নিয়ম করা যেতে পারে যে সেকেন্ড টাইমারদের প্রাপ্ত নাম্বার থেকে ৫-৭ মার্ক কর্তন করা হবে। তাহলে কিন্তু এই বৈষম্যটা দূর করা সম্ভব, মেডিকেল পরীক্ষায় এভাবেই ব্যালেন্স করা হয়। 
২.  আরেকটা বড় চ্যালেঞ্জ যেটা সামনে আসবে সেটা হলো এই সেকেন্ড টাইম চালু হলে অনেক স্টুডেন্ট একবছর ক্লাস করার পর যখন নতুন করে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে চান্স পেয়ে চলে যায়, তখন ঢাবির কোনো ডিপার্টমেন্টের বা অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিট ফাঁকা হয়ে যাবে। আমার দৃষ্টিতে এই সমস্যারও সমাধান হতে পারে একটা উপায়ে। এমন নিয়ম করা যেতে পারে— একবার যদি কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যায়, সে সেকেন্ড টাইম ঢাবিতে আর পরীক্ষা দিতে পারবেনা। এই সুযোগটা তাদের জন্যই থাকবে, যারা ঢাবিতে ফার্স্ট টাইম পরীক্ষা দেয় নাই অথবা পরীক্ষা দিয়ে চান্স পায় নাই। 

কোন একটা কাজ করতে গেলে চ্যালেঞ্জ আসবেই, চিন্তা করে রাস্তা বের করা উচিত কীভাবে সেই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করা যাবে। মাথা ব্যথা হলে, সেটা উপশমের চেষ্টা না করে মাথাটাই কেটে ফেলা তো কোন সমাধান হতে পারেনা। যৌক্তিক উপায়ে এই ব্যাপারগুলো বিবেচনা করা যায় কিনা, সেই ইস্যুতে বিচার বিবেচনা এবং বিশ্লেষণ করা জরুরি।