জুলাইয়ের আন্দোলনে ঢাবি ক্যাম্পাসের সিসিটিভি ফুটেজ ছাত্রলীগ-পুলিশকে দিতেন এই অধ্যাপক!
গত জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগ পর্যন্ত আন্দোলন চলাকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস, হল এবং আশেপাশের আন্দোলনকারীদের কার্যক্রমের ফুটেজ সংগ্রহ করার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের অনারারি পরিচালক অধ্যাপক আসিফ হোসাইন খানের বিরুদ্ধে।
এছাড়া সংগ্রহ করা এসব ফুটেজ ছাত্রলীগ ও পুলিশকে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, এসব ফুটেজ সংগ্রহের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় ৪টি নতুন হার্ডডিস্কও ক্রয় করেছেন তিনি। অভিযোগ উঠেছে, আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এসব করতেন এই অধ্যাপক। তবে সরকার পতনের পর তিন মাসের বেশি সময় ধরে স্বপদে বহাল আছেন তিনি।
অধ্যাপক আসিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষক। তিনি ২০১৭ সালে আইসিটি সেলের অনারারি পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান। অভিযোগ রয়েছে তার নিয়োগের মেয়াদ শেষ হলেও তিনি স্বপদে বহাল রয়েছেন। আইসিটি সেলের এক কর্মচারীকে দীর্ঘদিন যাবৎ নিজ বাসায় কাজ করানোসহ নানা অভিযোগ এই ঢাবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
আইসিটি সেলের একাধিক কর্মকর্তা ও তার নিজ বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী এমন অভিযোগ তুলেছে। পাশাপাশি ওই বিভাগের ৪টি ব্যাচ অধ্যাপক আসিফের শ্রেণি কার্যক্রম ও বয়কট করেছে।
জানা গেছে, অধ্যাপক আসিফ আওয়ামী সমর্থক শিক্ষক এবং জুলাই গণ অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান করেছিলো। সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে সেগুলো ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন জায়গা ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগের পাশাপাশি পাশাপাশি ছাত্রলীগের অপকর্মের সিসিটিভি ফুটেজ মুছে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
আইসিটি সেল থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও ঐ সময় তিনি সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের জন্য ৪টি হার্ডডিস্ক ক্রয়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুই কিস্তিতে ৪০ হাজার টাকা তুলেছেন। তার একটি কপি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের হাতে এসেছে।
৫ আগস্টের পর থেকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পড়ে প্রায় ২৫ দিন তিনি শ্রেণি কার্যক্রম ও অফিসে আসেননি তিনি। আইসিটি সেলের কর্মচারী সুজনকেও তিনি তার সঙ্গে রেখেছিলেন। তার মোবাইলও ওই সময় বন্ধ ছিল। পরিস্থিতি শান্ত হলে তিনি ফিরে আসেন। অভিযোগ রয়েছে, আইসিটি সেলের সব জায়গায় তিনি তার নিজস্ব লোকবল সেট করে রাখায় কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলতেও ভয় পায়।
এছাড়াও অফিস কর্মচারী সুজনকে ব্যক্তিগত কাজে মাসের পর মাস সাভারের নিজ বাড়িতে কাজ করানোর অভিযোগও উঠেছে অধ্যাপক আসিফের বিরুদ্ধে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইসিটি সেলের এক কর্মচারী বলেন, সুজন ৫ থেকে ৭ মাস মত অফিসে আসেননি। তিনি পরিচালকের ব্যক্তিগত কাজ করেছেন।
এছাড়াও বিপ্লব পরবর্তী সময়ে নানান অভিযোগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পড়ে কিছুদিন অফিস এবং শ্রেণি কার্যক্রম থেকে বিরত থাকেন অধ্যাপক আসিফ। এক শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ নামক একটি ফেসবুক পোস্টে অভিযোগ তুলে লিখেছেন, ঢাবিতে সন্ত্রাসী হামলায় অধ্যাপক আসিফ প্রত্যক্ষ ভাবে সন্ত্রাসীদের সাহায্য করেছেন। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে লীগের কাছে ছাত্রদের ইনফো পাঠাতেন। গ্রেফতারের জন্য পুলিশকে সহায়তা করতেন এবং ছাত্রদের কার্যক্রম মনিটরিং করে তাদেরকে ধরিয়ে দিতেন।
জানতে চাইলে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যাপক আসিফ বলেন, সিসিটিভি ফুটেজের জন্য হার্ডডিস্ক কেনা হয়েছে সত্যি কিন্তু এটা প্রক্টরের নির্দেশনায় করা হয়েছিল। কারও ছবি বা ফুটেজ সংগ্রহের জন্য নয়। কিন্তু ২৫ জুলাই হার্ডডিস্ক এত কেন প্রয়োজন হলো এ ব্যাপারে তিনি কোনটা যথাযথ উত্তর দিতে পারেননি।
২৫ দিন অফিস না করার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমার সব জায়গা স্বাক্ষর রয়েছে। আমি অফিসে ছিলাম। তবে আইসিটি সেল বলছে তিনি অফিস করেননি। একাধিক কর্মকর্তা কর্মচারী বলছেন তিনি পরে এসে স্বাক্ষর করেছেন। কর্মচারীকে নিজ বাসায় কাজ করানোর অভিযোগও তিনি অস্বীকার করেন।
কর্মচারী সুজনের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদকের কল রেকর্ড করেন এবং অভিযোগ অস্বীকার করেন। অথচ তিনি অফিসে না থেকেও মাসের পর মাস বেতন নিয়েছেন বলে অভিযোগ একাধিক কর্মকর্তা কর্মচারীর।
হার্ডডিস্ক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বর্তমান ঢাবি প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আগের প্রক্টর অনেক কিছুই করেছে যার সব কিছু আমি জানি না। এই প্রসঙ্গে আমি এখনও কিছু জানি না তবে বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখবো।
ঢাবির উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা বলেন, আমরা সাম্প্রতিক বিষয়টি সম্পর্কে একটি অভিযোগ পেয়েছি। আমি উপাচার্য স্যারের সাথে কথা বলবো। যাচাই বাছাই করবো পরবর্তী প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, হুট করে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। তার বিরুদ্ধে কয়েকটি বিষয়ে আমরা সম্প্রতি অবগত হয়েছি। বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই আমরা প্রশাসনিক উপায়ে কাজ করবো।