‘স্বতন্ত্র পরিচয়ে’ সাত কলেজ নাকি বিশ্ববিদ্যালয় হবে?
স্বায়ত্তশাসিত একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে বেশ কিছুদিন থেকে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন রাজধানীর সাতটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে সাতটি সরকারি কলেজ দেখভালের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি রেখেই পুরোপুরি আলাদা একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থা তৈরির ঘোষণা দিলে শিক্ষার্থীরা সেটিও প্রত্যাখ্যান করেন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালীন সর্বশেষ গতকাল বুধবার (৬ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, তারা শিক্ষা উপদেষ্টার কাছ থেকে ‘স্বতন্ত্র পরিচয়ের’ আশ্বাস পেয়ে আন্দোলন স্থগিত করছেন। তবে কার্যকর কোনো সমাধান না পেলে আবারও রাজপথে নামবে বলে জানান আন্দোলনের মুখপাত্ররা।
তবে সরকারের স্বতন্ত্র পরিচয়ের আশ্বাস এবং কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে দীর্ঘ আন্দোলনের মুখে প্রশ্ন উঠেছে, সাতটি কলেজের পরিচয়, স্বতন্ত্রতা নিশ্চিত, শিক্ষকদের গবেষণা-পদোন্নতি, শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পদ্ধতিসহ স্থায়ী সমাধান কোন পথে?
এদিকে বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে জেলা পর্যায়ে স্থাপিত নতুন উচ্চশিক্ষালয় ও পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষা-গবেষণা বৈশ্বিক মানের ধারেকাছে না থাকায় স্বায়ত্তস্বাশাসনের প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট মহলে ইতিবাচক সাড়া পায়নি। আবার বাস্তবিক পর্যালোচনা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাতটি কলেজের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতির করুণ দশাও অস্বীকার করতে পারছে না উচ্চশিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। উচ্চশিক্ষার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও বিভিন্ন শিক্ষাবিদদের সাথে কথা বললে সমাধান হিসেবে নতুন প্রস্তাবনার কথা জানিয়েছেন তারা।
আইনের দৃষ্টিকোণ ও আইনজ্ঞদের অভিমত
উচ্চশিক্ষা সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন কোনো সমাধান নয়। কারণ তাতে যে সময় অতিবাহিত হবে তাতে শিক্ষার প্রকৃত মান রক্ষার বিষয়টি অনিশ্চিত হবে। আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি রেখেও তেমন কোনো ফলাফল আসবে না। আমাদেরকে ভাবতে হবে কলেজগুলোর কাঠামোগত পরিবর্তন নিয়ে।
উদাহরণ হিসেবে তারা কলেজগুলোকে পার্শ্ববর্তী দেশের আদলে পরিগণিত বিশ্ববিদ্যালয় বা ডিমড বিশ্ববিদ্যালয়, বা বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার যোগ্য করে তোলার কথা বলেছেন। এই পদ্ধতিটি ভারতের উচ্চশিক্ষা বিভাগ কর্তৃক স্বীকৃত। এছাড়াও আমেরিকা, ইংল্যান্ডসহ বিশ্বের অনেক দেশে এই ধারা অব্যাহত রয়েছে। যেখানে কলেজ বা ইনস্টিটিউটগুলোর নামের পাশে বিশ্ববিদ্যালয় যুক্ত না হলেও স্বাধীনভাবে কারিকুলাম প্রণয়ন, সংশোধন, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, পরীক্ষা গ্রহণ, ফলাফল প্রদান, ডিগ্রি প্রদানসহ সকল কাজই করতে পারে।
ভারতের উচ্চশিক্ষার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইন্ডিয়ান ইউজিসি প্রায় শতাধিক এমন প্রতিষ্ঠানকে স্বীকৃতি দিয়েছে, যারা কোর্স, সিলেবাস, ভর্তি এবং ফিতে সম্পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ভোগ করে। যেগুলোকে দেশটি পরিগণিত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচনা করে। পরিগণিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা দেওয়া প্রথম ইনস্টিটিউটটি ছিল ভারতীয় বিজ্ঞান সংস্থা, যা ১৯৫৮ সালে এই মর্যাদা পায়।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) আদেশ ১৯৭৩ (রাষ্ট্রপতি ১০ নং আদেশ এর ৫ নং ধারার ৫(১)(h) অংশে কমিশনের ক্ষমতা ও কার্যাবলিতে সরকারকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ডিগ্রি প্রদানের ক্ষমতা প্রদানের লক্ষ্যে বিশেষ সক্ষমতা সম্পন্ন কোন উপযুক্ত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিশেষ ডিগ্রি প্রদান করার ক্ষমতা অর্পণের নিমিত্তে সুপারিশ করতে পারবে মর্মে উল্লেখ রয়েছে।
ইউজিসির আইনে এই আদেশ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দিন খান বলেন, ইউজিসির এই আদেশ কলেজগুলোকে ডিগ্রি প্রদানের ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে। কিন্তু কলেজগুলোর কাঠামোগত পরিবর্তন করতে হলে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। আর আমাদের কলেজগুলোর যে অবস্থা তাতে সেখানে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার সুযোগ কতখানি সেটা ভেবে দেখতে হবে। কলেজগুলো আগে একরকম ছিল, কিন্তু এখন তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত, আবার নতুন করে কোন কাঠামোতে তাদের যুক্ত করা হলে এটা ভেবেচিন্তে করতে হবে।
অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন আরও যোগ করেন, সাতটি কলেজ আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল। এটা অনেকটা অক্সফোর্ডের অধীনে যে-সব কলেজগুলো আছে সেটার মতো। তবে যুক্তরাজ্যের বেশকিছু কলেজ আছে, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধীনে। তাদের বৈশ্বিক মানদণ্ড এতটা ভালো যে, আমরা সরাসরি সেই কলেজ বা ইন্সটিটিউটগুলোকে চিনি। এই কাঠামোটা অনেক জটিল, তবে প্রণয়ন করা গেলে চমৎকার হবে।
পরিগণিত বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা
বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে কলেজ তবে বিশ্ববিদ্যালয় নয় এমন পদ্ধতিটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বীকৃত। যেখানে কলেজগুলোর শক্ত মনিটরিং ব্যবস্থা থাকে। প্রতিষ্ঠানগুলোর নামের পাশে বিশ্ববিদ্যালয় না থাকলেও শিক্ষাধারা নির্ধারণেও তাদের হাতে ক্ষমতা থাকে। উচ্চশিক্ষা সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে কলেজগুলোকে প্রতিষ্ঠা করা গেলে সেখানে শিক্ষা ও গবেষণায় মান রক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি নিরসনে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে। অর্থাৎ একটা বিশ্ববিদ্যালয় যা করে তার সবই হবে কলেজগুলোতে। কারণ পরিগণিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণায় কলেজগুলো ইউজিসির নিয়ম কানুন মেনে চলতে বাধ্য থাকে।
এছাড়া এসব কলেজের অ্যাকাডেমিক ও আর্থিক স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করা গেলে সেশনজট কমিয়ে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষক সংকট নিরসন, নিশ্চিত করা জরুরি। স্বায়ত্তশাসন পেলে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, পেশাজীবীদের খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষক সংকট নিরসন করতে পারবে। এতে ইন্ডাস্ট্রি একাডেমিয়া সম্পর্কের উন্নতি হবে। এসব কলেজে শিক্ষক পদায়ন নীতিমালা ইউজিসির সমন্বয়ে করা গেলে শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকদের গবেষণামুখী করাও সম্ভব হবে।
কলেজগুলোতে বর্তমান চিত্র অনুযায়ী ইন্ডাস্ট্রি অ্যাকাডেমির সাথে তাদের কোন রিলেশন নেই। এর বাইরে শিক্ষকদের গবেষণায় অনাগ্রহ, শিক্ষার্থীদের ল্যাবরেটরি না থাকা, শিক্ষক সংকট, সামগ্রিক পরীক্ষা পদ্ধতিতে অসঙ্গতি, তীব্র সেশনজটের দেখা পাওয়া যায়। উচ্চশিক্ষা সংশ্লিষ্টরা মনের করেন, কলেজগুলোকে মনিটরিং করার জন্য ইউজিসির একটা আলাদা ডিভিশন হতে পারে। তবে সেটার জন্য ইউজিসির পর্যাপ্ত সংস্কারেও উদ্যোগী হতে হবে। আইকিউএসির মনিটরিং, কলেজের অ্যাকাডেমিক কমিটিতে ইউজিসি-মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিত্ব এবং শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার খাতা দেখার বিষয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক দিয়ে মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।
ইউজিসির আদেশ ১৯৭৩ এবং সাত কলেজের কাঠামোগত পরিবর্তনে অভিমত জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান ড. এস এম এ ফায়েজ জানান, বিষয়টি সরকারের বিবেচনাধীন। কাজেই আমরা আপাতত পর্যবেক্ষণ করছি। এই মুহূর্তে আমার কোনো মন্তব্য করা সমীচীন হবে না।
বিশেষজ্ঞদের মত
সাত কলেজের সমস্যা নিরসনে শিক্ষা নিয়ে ভাবনা রয়েছে এমন শিক্ষাবিদদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস। তাদের মনে করেন, কলেজগুলোর কাঠামো পরিবর্তনের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজন রয়েছে। কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং শিক্ষার মৌলিক সংকট বাংলাদেশের বৃহত্তর শিক্ষা ক্ষেত্রের অগোছালো ল্যান্ডস্কেপের আরেকটি বহিঃপ্রকাশ। কাজেই এখান থেকে উত্তরণ হতে হলে পরিকল্পিত উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
কথা বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক শিক্ষকদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের নেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন। সাতটি কলেজের বর্তমান পরিস্থিতির দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে কলেজগুলোও বৈষম্যের শিকার আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও ভোগান্তি পোহাচ্ছে। বাস্তবতা হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিজের ভার বহন করতেই অপারগতা প্রকাশ করছিল। তার উপর এই কলেজগুলো যুক্ত হওয়ার পর নতুন করে এখানে বাগতি বিড়ম্বনার পথ সৃষ্টি হয়েছে।
এই অধ্যাপক মনে করেন, এমন পরিস্থিতিতে কলেজগুলোকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া ছাড়া কোন পথ নাই। অধ্যাপক মামুন বলেন, কলেজগুলোকে আলাদা করার মানে এই নয় যে, নামের পাশে বিশ্ববিদ্যালয় শব্দটি যুক্ত করতেই হবে। বর্তমান কাঠামোতে কলেজ পর্যায়ে মাস্টার্স রাখার সুযোগ নেই। মাস্টার্স থাকতে হলে থিসিস করাতে হয়, থিসিসের জন্য গবেষণা, পর্যাপ্ত ল্যাব সুবিধা, যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক থাকা আবশ্যক। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের পিএইচডি থাকতে হয়, গবেষণা থাকতে হয়। কিন্তু শিক্ষা ক্যাডার থেকে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্তদের দিয়ে অনার্স মাস্টার্স চালানো সম্ভব না। তাই কাঠামোর পরিবর্তন জরুরি।
এই অধ্যাপক আরও যোগ করেন, যুক্তরাজ্যের রাসেল গ্রুপ কিংবা ভারতের ডিমড ইউনিভার্সিটির কাঠামোয় অনেক কলেজ আছে যেগুলো বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে ১৫ থেকে ২০ নাম্বারে থাকে। আমাদের সেরকম পরিবর্তন নিয়ে আসা জরুরি। কিন্তু আমাদের কলেজগুলোতে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই, ল্যাব সুবিধা নেই। তাদের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পদ্ধতি অসামঞ্জস্যপূর্ণ। ফলে এখানে যথাযথ মান নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
সাত কলেজের সংকট, বাংলাদেশে স্বায়ত্তশাসিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থান এবং করণীয় প্রসঙ্গে কথা বলেছেন শিক্ষা অধিকার সংসদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এম নিয়াজ আসাদুল্লাহ। যিনি যুক্তরাজ্যের রেডিং বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির ভিজিটিং প্রফেসর ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির প্রফেসরিয়াল ফেলো। তিনি মনে করেন, সাতটি কলেজকে বর্তমান অবস্থায় ফেলে রাখার কোনো সুযোগ নেই। এজন্য সরকারের শক্তিশালী কেন্দ্রীয় তদারকি ব্যবস্থা সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষা ক্ষেত্রের অগোছালো ল্যান্ডস্কেপ পরিবর্তন করে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের পক্ষে মত দিয়েছেন এই শিক্ষাবিদ।
অধ্যাপক নিয়াজ আসাদুল্লাহ বলেন, সরকারের প্রস্তাবিত স্বায়ত্তশাসন সাতটি কলেজের কার্যক্রম পরিচালনা, পাঠ্যক্রম পরিচালনা এবং অভ্যন্তরীণ পরিচালনায় উন্নতির অনুমতি দিতে পারে। কিন্তু সত্যিকারের স্বায়ত্তশাসন-আর্থিক স্বাধীনতা, অ্যাকাডেমিক মান এবং গুণমানের নিশ্চয়তা-এর জন্য যথেষ্ট সংস্থান এবং রাষ্ট্রীয় সক্ষম ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন, যা শক্তিশালী কেন্দ্রীয় তদারকি ছাড়া নিশ্চিত করা যায় না।
এই অধ্যাপক আরও জানান, স্বায়ত্তশাসন এই কলেজগুলোকে ভারতের বিবেচিত (ডিমড) বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মতো উচ্চ-মানের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে পারে। তবে সেটির নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) সরকারের ধারাবাহিক দূরদর্শী বিনিয়োগের চিন্তা করতে হবে। অর্থাৎ কেবল স্বায়ত্তশাসনের নিশ্চয়তা যথেষ্ট নয়। ভারতেও মানহীনতার কারণে প্রায় তিন ডজনের বেশি ডিমড বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের দাবির সম্মুখীন হতে হয়েছে।
কলেজগুলোকে যুক্তরাজ্যের রাসেল গ্রুপের মতো একটি কনসোর্টিয়ামে রূপান্তর করার পক্ষে মত প্রকাশ করেন অধ্যাপক এম নিয়াজ আসাদুল্লাহ। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের আদলে সংস্কারের চিন্তাটা উচ্চাভিলাষী। রাসেল গ্রুপ উচ্চ-মানের গবেষণা, শিক্ষা এবং শিল্প অংশীদারিত্বের জন্য পরিচিত। তারা যুক্তরাজ্যের শীর্ষস্থানীয় গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির প্রতিনিধিত্ব করে। এর সাফল্য শক্তিশালী সরকার এবং শিল্প তহবিল, কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন এবং একটি সহযোগিতামূলক গবেষণা ইকোসিস্টেম দ্বারা সমর্থিত ছিল। বাংলাদেশে একই ধরনের পন্থা অবলম্বন করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতির প্রয়োজন হবে, যার মধ্যে নিবেদিত তহবিল, শিল্প অংশীদারিত্ব এবং এই প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে সহযোগিতা এবং গবেষণার উৎকর্ষতা বৃদ্ধির জন্য একটি শক্তিশালী শাসন কাঠামোর প্রয়োজন হবে।
বর্তমানে সাতটি কলেজের সঙ্কট বাংলাদেশের বৃহত্তর শিক্ষা ক্ষেত্রের অগোছালো ল্যান্ডস্কেপের আরেকটি বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করেন শিক্ষা অধিকার সংসদের এই আহ্বায়ক। তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে উচ্চ শিক্ষার অপরিকল্পিত সম্প্রসারণ অনেক ক্ষেত্রে গুণমানের চেয়ে পরিমাণকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষিত বেকার তৈরির কারখানায় পরিণত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক সূচকে তলানিতে। মান পুনরুদ্ধারে উচ্চ শিক্ষার প্রবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ এখন সময়ের দাবি। সম্প্রসারণের চেয়ে গুণগত মানকে অগ্রাধিকার দেওয়া, নিদৃষ্টভাবে ইউজিসির নেতৃত্ব নতুন করে সাজানো প্রয়োজন। যাতে তারা উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর যথাযথ মূল্যায়নের সুযোগ পায়। পাশাপাশি তারা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।