০১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৬

‘ছাত্ররাজনীতি হবে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের স্বার্থে’

চবিতে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির সংকট ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়  © টিডিসি

‘ছাত্ররাজনীতি হবে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের স্বার্থে। ছাত্ররাজনীতি ও গুন্ডামি দুইটা নারী অঙ্গনের সমাইয়া শিকদার, বিষয়। ছাত্ররাজনীতি মানে গুন্ডামী, মাস্তানী, হল দখলদারি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি না। আমরা বিগত ১৬ বছর এগুলোই দেখে এসেছি। শিক্ষার্থীরা এটা চাই না।’

৩১ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) বেলা ৩টায় স্টুডেন্টস অ্যাল্যায়েন্স ফর ডেমোক্রেসির (স্যাড) উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অডিটোরিয়ামে প্রায় ১৭টি রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের অংশগ্রহণে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির সংকট ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা। 

আলোচনায় বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের আজাদ হোসেন বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতি ও গুন্ডামী দুইটা আলাদা বিষয়। ছাত্ররাজনীতি মানে গুন্ডামি, মাস্তানি, হল দখলদারি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি না। আমরা এত দিন রাজনীতির নামে এসব দেখে এসেছি। তাই ছাত্ররাজনীতি সম্পর্কে বিরূপ ধারণা তৈরি হয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠবে ছাত্ররাজনীতি তাহলে কি? আমার মতে সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান যে সংকট তা সংশোধনের জন্য লড়াই করাই ছাত্র রাজনীতি।’

আরও পড়ুন: চবিতে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেপ্তার

বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রচার সম্পাদক সাইদ বিন হাবিব বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির অন্যতম বড় সংকট ভিন্ন দল ও মতকে সহ্য করতে না পারা। আমরা ইতিপূর্বে দেখতাম একক আধিপত্য বজায় রাখতে অনুগত দলদাস তৈরি করা হতো। কিন্তু ইসলামি ছাত্রশিবির মনে করে রাজনৈতিক আদর্শ কখনো চাপিয়ে দেওয়া যায় না। আদর্শের ক্ষেত্রে জোর-জবরদস্তি করা যাবে না। প্রতিটি দল ও মত তার আদর্শ প্রচার করবে, শিক্ষার্থীরা যে আদর্শ পছন্দ করবে তা গ্রহণ করবে। পাশাপাশি সব রাজনৈতিক দলের মধ্যেও সহিষ্ণুতা থাকবে যেন যেন অন্য মত কে সুযোগ করে দিতে পারে।’

বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর প্রতিনিধি জশদ জাকির বলেন, ‘আমি ছাত্ররাজনীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কোনো কারণ দেখি না। কারণ মহাবিশ্বের একটি বালুও রাজনীতিবহির্ভূত না। এখানে প্রশ্ন হওয়া উচিত কোন ধরনের রাজনীতি থাকবে বা থাকবে না। ছাত্ররাজনীতির সবচেয়ে বড় সংকট কোন সিনিয়র সংগঠনের লেজুড় থাকা। ছাত্র হয়েও সিনিয়র কোনো সংগঠনের উদ্দেশ্য সার্ভ করা।’

নারী অঙ্গনের প্রতিনিধি সুমাইয়া শিকদার বলেন, বিগত স্বৈরাচারবিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলনগুলোতে নারীদের বাঁধভাঙা অংশগ্রহণ ছিল। কিন্তু অতীতের মত বর্তমানেও রাষ্ট্রীয় কাজে নারীদের অংশগ্রহণে অনেক প্রতিবন্ধকতা কাজ করছে।এগুলো দূর করার জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে।

আরও পড়ুন: ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি চাই না: চবিতে হাসনাত আবদুল্লাহ

রাষ্ট্রচিন্তার প্রতিনিধি আল মাশনুন বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের নিপীড়ন চলেছে প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদে। আমরা দেখেছি, শিবির করার কারণে এবং শিবির ট্যাগ দিয়ে ছাত্রদের মারধর করে তুলে নেওয়া হতো। প্রশাসন ছাত্রদের রক্ষা না করে উল্টো পুলিশে দিয়ে দিতো। ছাত্রলীগ এতবড় দানব হতে পারত না যদি প্রশাসন সাহায্য না করত। আমরা বিশ্বাস করি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থী তার ন্যূনতম অধিকার ভোগ করবে। হলে তার একটি সিট থাকবে, খাবারের মান ভালো হবে। তাহলে শিক্ষার্থীকে হলের সিটের জন্য অনিচ্ছাসত্ত্বেও কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী হতে হবে না; বরং শিক্ষার্থীরা রাজনৈতিক দল কে জবাবদিহিতার আওতায় আনবে।’

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রতিনিধি শাহরিয়ার ফারুক ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক পরিবর্তন নিয়ে কাজ করছি। এখন আর মানুষ গতানুগতিক রাজনীতি চায় না। আমরা চাই সুস্থ রাজনীতি, মেধা বিকাশের রাজনীতি। আগের রাজনীতি ছিলো কে কার থেকে বড় মুজিবাবাদী তা প্রমাণের রাজনীতি। এসব জায়গা থেকে দূরে সরিয়ে দায়িত্ববোধ ও জবাবদিহিতার রাজনীতি করবে ছাত্রদল। আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, ক্যাম্পাসে শোডাউন ও দখলদারিত্বের রাজনীতি ছাত্রদল করবে না।’

আরও পড়ুন: গবেষণায় ৬৪ লাখ টাকা বরাদ্দ পেলেন চবির এক বিভাগের তিন শিক্ষক

এ ছাড়া প্রতিনিধিদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের ঈশা দে, স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসির আবির বিন জাবেদ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের মোনাল চাকমা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রিজাউর রহমান, গাউসিয়া কমিটির মুনতাসীর মাহমুদ, ক্লাব অ্যালায়েন্স অফ সিইউ এর সাজ্জাদ হোসেন, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের ধ্রুব বড়ুয়া, ছাত্র অধিকার পরিষদের তামজিদ উদ্দীন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিশের সাকিব মাহমুদ রুমী, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের তারেক মনোয়ার ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের আমিনুল ইসলাম রাকিব।

মুক্ত আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বক্তারা শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে করা প্রশ্নেরও জবাব দেন।