জাবিতে সিনিয়রকে মেসেঞ্জার গ্রুপে এড করে ‘র্যাগ’ দিল ৮ জুনিয়র
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আইন ও বিচার বিভাগের ২০২২-২৩ সেশনের (৫২ তম) ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে একই বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের (৫১ ব্যাচের) এক শিক্ষার্থীকে র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী ফারহাদুল ইসলাম ৫১ ব্যাচের শিক্ষার্থী হলেও এক বছর পিছিয়ে ৫২ ব্যাচের সাথে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী প্রক্টর এবং আইন ও বিচার বিভাগের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন।
এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের কাওসার আহমেদ রেজাউল, শেখ রাসেল হলের মাহদি হোসাইন ও মুশফিকুল আলম তমাল, বেগম সুফিয়া কামাল হলের শাহরিন সুহা ও তারিন আহমেদ নিতু, মীর মশাররফ হোসেন হলের রাতুল ইসলাম ফারদিন ও বখতিয়ার উদ্দিন এবং বীরপ্রতিক তারামন বিবি হলের তাইয়েবা মীম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ ২০২২-২৩ সেশনের (৫২ তম ব্যাচের) শিক্ষার্থী।
অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, ৫২তম ব্যাচের মুশফিকুল আলম তমাল শ্রেণীকক্ষে অনুমতি ছাড়া ফারহাদুল ইসলামের ফোনের কথোপকথনের ছবি তুলে মেসেঞ্জার গ্রুপে হেনস্তার উদ্দেশ্যে ছড়িয়ে দেয়। পরবর্তীতে ফারহাদুল এ বিষয়ে জানতে চাইলে তমাল এবং তার ব্যাচের ৭ জন বন্ধু-বান্ধবী মিলে একটি মেসেঞ্জার গ্রুপ খুলে। সেই গ্রুপে ফারহাদকে যুক্ত করে সাইবার বুলিং ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এক পর্যায়ে ভুক্তভোগী ঐ গ্রুপ থেকে বের হয়ে গেলে পুনরায় তাকে গ্রুপে যুক্ত করে নানাভাবে হেনস্তা করা হয়। (বুলিং ও গালিগালাজের তথ্য-প্রমাণাদি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের হাতে এসেছে)।
এ বিষয়ে সহকারী রেজিস্ট্রার (প্রক্টর অফিস)মো: সোহেল রানা বলেন, আমরা লিখিত অভিযোগ পত্র পেয়েছি। অফিস থেকে প্রক্টর স্যার বরাবর অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও শৃঙ্খলাবিধি অনুযায়ী এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষক ও ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা উম্মে হাবিবা বলেন, আমরা গতকাল ভুক্তভোগীর কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বর্তমানে আমাদের চেয়ারম্যান স্যার দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। স্যার দেশে ফিরলে আমরা একাডেমিক মিটিংয়ে বিষয়ে আলোচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ফারহাদুল ইসলাম বলেন, একদিন শ্রেণিকক্ষে অনুমতি ছাড়া তমাল আমার মেসেঞ্জার কথোপকথন এর ছবি তুলে হেনস্তার উদ্দেশ্য মেসেঞ্জার গ্রুপে ছড়িয়ে দেয়। পরবর্তীতে আমি তার কাছে জানতে চাইলে কোনো জবাব না দিয়ে উল্টো তারা ৮ জন মিলে মেসেঞ্জার গ্রুপ খুলে সেখানে আমাকে যুক্ত করে বুলিং ও নানা ভাবে হেনস্তা করে, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে একপর্যায়ে আমি গ্রুপ থেকে লিভ নিলে তারা পুনরায় আমাকে এড দিয়ে নানাভাবে হেনস্তা করে। এ ব্যাপারে আমি বিভাগের চেয়ারম্যান ও প্রক্টর অফিস বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ফারদিন ইসলাম অভিযোগের কথা স্বীকার করে বলেন, আমরা ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ খুলেছি তবে সেখানে আমি কোনো গালিগালাজ বা বুলিং করিনি। আমার অন্যান্য বন্ধুরা তাকে গালিগালাজ করেছে এবং নানাভাবে হেনস্তা করেছে।
তবে বুলিং এর কথা অস্বীকার করেছে কাওসার আহমেদ। তিনি বলেন, আমরা শুধু ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ খুলে তার কাছ থেকে জবাব চেয়েছি। অভিযুক্ত অন্যান্যদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা সাড়া দেননি।
এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ করেছেন বিভাগের অন্যান্য শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।