১৫ জুলাই ঢাবি ভিসি চত্বরে হামলা

রড-হকিস্টিক, লাঠি-বাঁশ দিয়ে ছাত্রলীগের হাতে বেধড়ক মারধরের পরও কাউকে জানাতে পারিনি

  © সংগৃহীত

গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভিসি চত্বরে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী নিরীহ শিক্ষার্থীদের ওপর দফায় দফায় বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছিল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। সংঘর্ষে অন্তত দুইশ’ শিক্ষার্থী আহত হয়েছিল। এ ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত দুটি মামলা করা হয়েছে।

ঘটনার দিন ভিসি চত্বরে ছাত্রলীগের হামলার শিকার একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্স, ২য় সেমিস্টারের ছাত্র মুরাদ হাসান। এ ঘটনায় তিনি রড-হকিস্টিক, লাঠি-বাঁশ দিয়ে ছাত্রলীগের বেধড়ক মারধরের শিকার হলেও ভয়ে কাউকে জানাতে পর্যন্ত পারেননি। পরে অত্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা করে কয়েকজন বন্ধুর সহায়তায় চিকিৎসা করবে পেরেছিল বলে তিনি জানান। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ সেশনের এই শিক্ষার্থী মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে থাকেন। আজ রবিবার (২৭ অক্টোবর) ওই দিনের বিভীষিকাময় ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ‘আতঙ্কিত একটা অধ্যায়’ শিরোনামে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন।

স্ট্যাটাসে মুরাদ লেখেন, নিজের ক্যাম্পাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা যখন আমার উপরে কুকুরের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে অবচেতনে মনে হচ্ছিল বেঁচে ফিরবো কিনা? ১৫ জুলাই, ২০২৪ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরীহ, নিরস্ত্র সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপরে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা উগ্র হায়েনার মতো ঝাপিয়ে পড়ে যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের এক কলঙ্কিত অধ্যায়। 

“আমাদের নারী শিক্ষার্থীরাও ছাত্রলীগের ভয়াবহতা থেকে রেহাই পায়নি। ভিসি চত্বর, মল চত্বর কিংবা টিএসসির সামনের রক্তমাখা বোনদের চেহারা জুলাই বিপ্লবের প্রথম স্ফুলিঙ্গ। শিক্ষার্থীদের উপরে রক্তাক্ত হামলার প্রতিবাদে পরের দিন অর্থাৎ ১৬ তারিখের প্রতিবাদ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে শহীদ হন জুলাই অভ্যুত্থানের আইকন রংপুরের আবু সাঈদ।”

মুরাদ লেখেন, আমি আপাদমস্তক রড স্টাফ হকিস্টিক, লাঠি, বাঁশের বেধড়ক মারপিট ছাড়াও কিল, ঘুসি, লাথি খাওয়ার পরেও হাসপাতালে যাওয়া দূরের কথা কাউকে জানাতে পর্যন্ত পারিনি। অত্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা করে তিন চারজন বন্ধুদের মাধ্যমে যৎসামান্য চিকিৎসা ও ঔষদের ব্যবস্থা করতে পেরেছিলাম মাত্র । 

“আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কেমন দাসত্বের শিকলে বেঁধেছিল চিন্তা করতে পারেন?  আমরা এই গোলামির জিন্দেগি বরণ করতে বাধ্য ছিলাম কারণ হল ছেড়ে বাসা/মেস নিয়ে ঢাকায় থাকার মতো সামর্থ্য আমার ছিল না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের অবস্থাই আমার মতো। 

জুলাই বিপ্লবের বিরোধিতাকারী আওয়ামী পান্ডারা কিংবা গণহত্যার বয়ান উৎপাদনকারীরা, প্রত্যক্ষ সহযোগীরা, যাদের হাতে অজস্র মানুষের রক্ত লেগে আছে সেই সংগঠনকে নিষিদ্ধ করেই কি আমরা আমাদের দায়িত্ব ভুলে গেলাম!”

তিনি লেখেন, সারাদেশে নিষিদ্ধ এই দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতাভুক্ত করা তো দূরের কথা তাদের নামে বেনামে পূণর্বাসন হচ্ছে যা অত্যন্ত বিপজ্জনক। সাংস্কৃতিক জগতে ,মিডিয়াতে,টকশোতে, এখন শহীদ ভাইদের বীরত্ব গাথা কথা গল্প শোনার বিপরীতে পতিত স্বৈরাচার সরকারের দোসরদের গুণগান, সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের সরব উপস্থিতি, পোস্ট, শেয়ার আমাদেরকে লজ্জিত করে, রাগান্বিত করে।

তিনি আরও লেখেন, ১৫ জুলাইয়ে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরের হামলায় সরাসরি মাঠে থেকে নেতৃত্বে দিয়েছিলেন সদ্য নিষিদ্ধ সংগঠন "ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান"। এই অসাধারণ সম্পাদক নিজ হাতে আমাকে পিটিয়ে অত্যন্ত বাজে ভাবে জখম করে, যার বেদনা আমি আজও বয়ে বেড়াচ্ছি হয়তো সারা জীবনই তা বহন করতে হবে, এটা নিয়ে আমার কোন দুঃখ বা আফসোস নাই। 

“অন্তর্বর্তী সরকারে কাছে প্রশ্ন আর কত সময় লাগবে এই কুখ্যাত সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করতে? আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাইদ্বয় যারা সরাসরি উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োজিত আছেন তাদের কাছে প্রশ্ন আপনাদের আর কত সময় লাগবে এই সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করাতে চাপ প্রয়োগ করতে?

জুলাই বিপ্লবের বিরোধিতাকারী সন্ত্রাসী গ্রেফতার না করে, বিচারের সম্মুখীন না করে, আহতদের পূণর্বাসন না করে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের মূল্য আমার কাছে অর্থহীন।”

পরিশেষে তিনি লেখেন, যে ভাই-বোনেরা জীবন দান করে শহীদ হয়েছে, যারা নিজেদের অঙ্গ হারিয়েছে, চোখ যাদের অন্ধ হয়ে গেছে সেসব শহীদ ও আহত ভাইদের রক্তের কসম করে বলছি, এই চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের অতিসত্বর গ্রেফতার করুন, বিচারের আওতায় আনুন। শহীদ ভাইদের রক্তের সাথে বেঈমানি করবেন না, প্রতারণা করবেন না দয়া করে। কথায় আছে "Justice delayed Justice Denied."


সর্বশেষ সংবাদ