রাবি ছাত্রলীগ কর্মীকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয়ার অভিযোগ জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক ছাত্রলীগ কর্মীকে ট্রেন থেকে নামিয়ে বেধড়ক মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) রাত ৯টার দিকে রাজশাহী রেলস্টেশনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করতে গিয়ে তাঁর ১২ জন সহপাঠী আহত হয়েছেন।
মারধরের পর আজিজুল হক (আকাশ) নামের ওই ছাত্রলীগ কর্মীকে পুলিশে সোপর্দ করা হলে শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে আদালতে পাঠানো হয়। ঘটনার সময় উপস্থিত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হামলাকারীরা নিজেদের শিবিরের নেতাকর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।
ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী সহপাঠীরা জানান, তাঁরা একই শিক্ষাবর্ষের ২৫ জন মিলে ট্রেনে পঞ্চগড় ভ্রমণের উদ্দেশে রাজশাহী রেলস্টেশন যান। বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেসে করে রাত ৯টায় যাত্রা শুরুর কথা ছিল। তবে ৯টা বেজে ২০ মিনিট পার হলেও ট্রেন না আসায় তাঁরা সবাই ট্রেনেই অপেক্ষা করছিলেন। হঠাৎ অচেনা ২৫-৩০ ব্যক্তি এসে ট্রেনের জানালা দিয়ে তাঁদের কাছে বিভাগের নাম জানতে চায়। পরে শিক্ষার্থীরা বিভাগের নাম জানালে তারা বিভাগের এক ছাত্রলীগ কর্মী সানির খোঁজ করেন। শিক্ষার্থীরা জানান এই নামে তাঁদের সঙ্গে কেউ নেই।
অভিযুক্তরা তাঁদের এক শিক্ষার্থীকে দেখিয়ে বলে ওই যে সানি। তবে ওই শিক্ষার্থী তাঁর পরিচয়পত্র দেখালে তারা আশ্বস্ত হয়। একপর্যায়ে তারা আকাশকে দেখে সন্দেহ করে এবং সানি ভেবে ধাওয়া করলে তিনি ট্রেন থেকে নেমে দৌড় দেন। সে সময় হামলাকারীরা বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আকাশকে ধাওয়া দেয়। একপর্যায়ে হকিস্টিক দিয়ে তাঁর মাথায় সজোরে আঘাত করে। এতে আকাশের মাথা ফেটে যায়। আকাশ জানান, তিনি ওই শিক্ষার্থী নন, যাকে শিবির খুঁজছে।
সহপাঠীরা আরও জানান, আকাশকে যখন ধাওয়া শুরু করে তখন তাঁকে বাঁচাতে তাঁর পেছনে বিভাগের অন্য শিক্ষার্থীরাও দৌড়ে যান। এরপর আকাশকে ধরে অচেনা ব্যক্তিরা নানাভাবে মারধর শুরু করে। তখন শিক্ষার্থীরা গিয়ে তাঁদের বন্ধুকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে তাঁরাও মারধরের শিকার হন। দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অচেনা ব্যক্তিদের ধস্তাধস্তি হয়। শিক্ষার্থীরা বারবার বলেন যাকে সন্দেহ করে মারা হচ্ছে, তিনি সানি না। তাঁদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এ সময় আকাশের মোবাইল ও মানিব্যাগ কেড়ে নেয় অচেনা ব্যক্তিরা। পরে আকাশকে তাঁরা অন্য কোথাও নিয়ে যেতে চায় এবং শিক্ষার্থীদের চলে যাওয়ার জন্য বলে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা জোরজবরদস্তি করলে তারা আকাশকে নিয়ে বোয়ালিয়া থানায় যায়। থানার সামনে এসে তারা নিজেদের শিবির বলে পরিচয় দেয় এবং আকাশকে থানায় রেখে তারা চলে যায়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোজাম্মেল হোসেন বকুল (সাজ্জাদ বকুল) বলেন, ‘গতকাল রাতে বিষয়টি জানার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও বিভাগের কয়েকজন শিক্ষকসহ আমরা থানায় গিয়েছিলাম। প্রথমে আহত আকাশের প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করেছি। তাকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছে বা তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা আছে কি না তা থানার ওসি জানাতে পারেননি।’
অভিযোগের বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি আবদুল মোহাইমেন বলেন, একজন শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়েছে শুনেছি। তবে ওই শিক্ষার্থী কে বা কেন মারধর করা হয়েছে, তা জানি না। ওই ঘটনার সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির জড়িত নয়।
একই দাবি করেন রাজশাহী মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. সিফাত আলম। তিনি বলেন, একটা পক্ষ শিবিরের নাম ব্যবহার করে বিশৃঙ্খলা চেষ্টা করতে পারে। কারও ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করব।
আর রাজশাহী মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, কে বা কারা জামায়াতের নাম ব্যবহার করে এটা করেছে, তা জানি না। তবে জামায়াতের কেউ জড়িত থাকলে আমি বিষয়টি জানতাম বা সেখানে উপস্থিত থাকতাম। তবে আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের কোনো সক্রিয় সদস্য যারা আন্দোলনে হামলা বা হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল, তাদের ধরে পুলিশে সোপর্দ করা হবে।
এ ব্যাপারে বোয়ালিয়া মডেল থানার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী মাসুদ বলেন, গতকাল রাতে জামায়াতের কিছু লোক এক ছাত্রলীগ কর্মীকে থানায় সোপর্দ করেছেন। পরে জামায়াতের করা আগের এক মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।