ঢাবিতে পরীক্ষা দিতে এসে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের দুই নেতা গ্রেপ্তার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে পরীক্ষা দিতে এসে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
এ দুজন হলেন ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের হল শাখার পদপ্রত্যাশী হাসান সাইদি এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার উপ-দপ্তর সম্পাদক কাজী শিহাব উদ্দিন তৈমুর। দুজনই বিজয় একাত্তর হলের শিক্ষার্থী।
ঢাবির শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, এই দুজন পরীক্ষা দিতে এলে কয়েকজন শিক্ষার্থী তাদের দেখে ফেলেন এবং ইনস্টিটিউটের পরচালককে জানান। পরে তাদের পরীক্ষার কক্ষ থেকে থেকে সরিয়ে আলাদা কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। খবর পেয়ে প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্য ও পুলিশ আসে এবং তাদের শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়।
ইনস্টিটিউটের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম বলেন, গত দুদিন থেকে চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছিল। তারা যখন পরীক্ষা দিতে আসে, তখন কয়েকজন তাদের দেখে ফেলেন। পরে কয়েকজন গিয়ে পরিচালকের সঙ্গে কথা বলেন এবং নিরাপত্তা বিবেচনায় তাদের আলাদা রুমে নিয়ে রাখেন।
তিনি বলেন, প্রক্টরিয়াল টিম আসার পর আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত হয় তাদের পরীক্ষা বাতিল করা হবে এবং তাদের শাহবাগ থানায় দেওয়া হবে।
তাদের পুরোনো মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাবির প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা তাদের আটক করার পর পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল টিম সেখানে যায় এবং তাদের আটক করে শাহবাগ থানায় দেওয়া হয়। তাদের নামে মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এর আগে গতকাল বুধবার (২৪ অক্টোবর) রাতে আওয়ামী লীগের এই ছাত্রসংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। একই সঙ্গে এই ছাত্রসংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা–পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে, বিশেষ করে বিগত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হত্যা, নির্যাতন, গণরুমকেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ, যৌন নিপীড়নসহ নানাবিধ জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল এবং এ সম্পর্কে প্রামাণ্য তথ্য দেশের সব প্রধান গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এবং কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের অপরাধ আদালতেও প্রমাণিত হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, গত ১৫ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা আন্দোলনরত ছাত্র–ছাত্রী ও সাধারণ জনগণকে উন্মত্ত ও বেপরোয়া সশস্ত্র আক্রমণ করে শত শত নিরপরাধ শিক্ষার্থী ও ব্যক্তিদের হত্যা করেছেন এবং আরও অসংখ্য মানুষের জীবন বিপন্ন করেছেন। এ ছাড়া সরকারের কাছে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক, ধ্বংসাত্মক ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যের সঙ্গে জড়িত রয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সেহেতু সরকার ‘সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯’–এর ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করল এবং এই আইনের তফসিল-২–এ ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ নামের ছাত্রসংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করল।