জাবির সাবেক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর দিনে চিকিৎসকের ৬৬ এন্ডোস্কপি করা নিয়ে প্রশ্ন
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাবেক শিক্ষার্থী রাহিব রেজার মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসকের অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতাও পেয়েছে প্রমাণ স্বাস্থ্য অধিদফতর। এবার ল্যাবএইড হাসপাতালের চিকিৎকের একদিনে ৬৬টি এন্ডোস্কপি করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বুধবার রাতে সাংবাদিক হাসান মেসবাহ তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে ল্যাবএইড হাসপাতালের চিকিৎসকের একদিনে ৬৬টি এন্ডোস্কপি করা নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, 'ঘটনার দিন ৬৬টি অ্যান্ডোস্কপি করেছেন ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল। একজন ডাক্তারের পক্ষে একদিনে ৬৬টি অ্যান্ডোস্কপি করা সম্ভব? তার কি হাত ১০টি? নাকি মহামানব তিনি?
তিনি জানান, 'একটি অ্যান্ডোস্কপি করতে কমপক্ষে ২০ মিনিট লেগেছে। সে হিসেবে ৬৬টি অ্যান্ডোস্কপি করতে সময় লাগবে ১৩২০ মিনিট। অর্থাৎ ২২ ঘন্টা। তাহলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে একটানা ২২ ঘন্টা কাজ করতে হবে। ঘুম, খাওয়া, ব্যক্তিগত জীবন, বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে চাকরি... সবই কি ২ ঘন্টায়?
হাসান মেসবাহ আরও বলেন, 'এই মৃত্যুর দায় তিনি এড়াতে পারেন? ল্যাবএইড হাসপাতালে বসেই এমন প্রাকটিস? একদিনে ৬৬টি অ্যান্ডোস্কপি করার কারণ কি সেবা না টাকা? কত টাকা লাগে আমাদের? রাহিব রেজার ৩ বছরের একটি কন্যা সন্তান আছে। এখনো বাবাকে খোঁজে বাবার সেই রাজকন্যা...।'
জানা গেছে, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সকালে ল্যাবএইড হাসপাতালের আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাহিব রেজার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ক্ষতিপূরণ ও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করে তার পরিবার।
রিটের শুনানি শেষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। কমিটিতে একজন আইনজীবীকে রাখতে বলা হয়।
বুধবার (২৪ অক্টোবর) হাইকোর্টে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। পরে সংবাদ সম্মেলনে রাহিব রেজার পরিবারের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম বলেন, এন্ডোসকপির প্রক্রিয়া, এন্ডোসকপিকালীন এবং পরবর্তী স্টেজেও চিকিৎসায় চরম অবহেলা করা হয়েছে। রাহিব রেজা সর্বোচ্চ ঝুঁকির রোগী ছিলেন। অতিরিক্ত ওজন, কার্ডিয়াক ইস্যুও ছিল। অস্ত্রোপচারের আগে যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে সেখানেই এসব শনাক্ত হয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে হলেও সত্য, ওনারা কোনো রিপোর্টই দেখেননি। ফলে কোনো ঝুঁকি আছে কি না, না জানায় কোনো ব্যবস্থাই নেননি। এর মধ্যেই এনেসথেশিয়া দিয়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। এখন প্রশ্ন এসেছে, কে এনেসথেশিয়া দিয়েছিল?
এ আইনজীবী বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন বলছে: সেখানে দক্ষ কোনো এনেসথেশিস্ট ছিল না। এটা অবাক করে দিচ্ছে। এত বড় হাসপাতালে, এত বড় একজন ডাক্তার, তার টিমে কোনো দক্ষ এনেসথেশিস্ট নেই। কোনো ঝুঁকি যাচাই ছাড়াই এন্ডোসকপি করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এন্ডোসকপিতে সম্পৃক্ত ৮-৭ জনেরই অভিজ্ঞতার কোনো কাগজ তদন্ত কমিটি পায়নি। অর্থাৎ অদক্ষ লোক দিয়ে এন্ডোসকপি করা হয়েছে। এখানে স্বপ্নীল ও হাসপাতাল উভয় সমান অপরাধী। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, একইদিন একই ডাক্তার আরও ৬৬টি এন্ডোসকপি ও কলোনোসকপি করেছেন।
রাশনা ইমাম বলেন, এখনও ক্লিয়ার না, রিএজেন্ট কী ব্যবহার করা হয়েছিল? এমনকি ল্যাব এইডের এন্ডোসকপি সেটআপে ত্রুটি পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে, এন্ডোসকপির পর রোগীর শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য জটিলতা দেখা দিয়েছিল, সেখান থেকে ৮৫ মিনিট ধরে সময় নষ্ট করা হয়েছে। ফলে রোগীকে পরে আইসিইউতে নিলেও বাঁচানো যায়নি।