২১ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:২৮

‘বিশাল জনগোষ্ঠীর অধিকার কেড়ে নেয়াকে গণমাধ্যমের বৈধতা দেয়া অদ্বিতীয় ঘটনা’

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস-সচিব ও প্রথিতযশা সাংবাদিক শফিকুল আলম  © সংগৃহীত

গত ১৫ বছরে বিশাল জনগোষ্ঠীর অধিকার কেড়ে নেয়াকে গণমাধ্যমের বৈধতা দেয়া অদ্বিতীয় ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস-সচিব ও প্রথিতযশা সাংবাদিক শফিকুল আলম। তিনি এ বিষয়ে গবেষণা করতে গবেষকদের পরামর্শ দিয়েছেন। 

সাংবাদিক শফিকুল আলম বলেন, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের বিশাল একটি জনগোষ্ঠীর অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে এবং গণমাধ্যম যেভাবে তা বৈধতা দিয়েছে, তা ইতিহাসে খুব অদ্বিতীয় ঘটনা। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশ এবং বিশ্বের গবেষকরা একটি নির্মোহ গবেষণা করতে পারেন।

গতকাল রবিবার (২০ অক্টোবর) বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘ফ্যাসিবাদী বয়ান নির্মাণে গণমাধ্যমের ভূমিকা: একটি পর্যালোচনা’ শীর্ষক এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।  

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস-সচিব আরও বলেন,  (বর্তমান বাংলাদেশে) আমরা যেন কখনোই কোনো জনগোষ্ঠীকে বাদ না দেই। গত ১৫ বছরের প্রতি পরতে পরতে এটা ছিল। বিভিন্ন পত্রিকায় শিরোনামের মাধ্যমে গ্রেপ্তারকে ন্যয্যতা দিয়েছে। বিচারবহির্ভুত হত্যাকে ন্যয্যতা দিয়েছে। ২০১৩ সালের ৬ মে হেফাজতের উপর ক্রাকডাউনের পর একটি পত্রিকার লেখক প্রথম পাতায় হেফাজতকে ‘এনশিয়েন্ট এনিমেল’ এর সঙ্গে তুলনা করেছে। কিভাবে গণতন্ত্র না থাকাই ভালো, তা দেখানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের আগেও বাংলাদেশের গণমাধ্যমে পাকিস্তানি আমলের কায়দায় ছাত্রদের সন্ত্রাসী, দুর্বৃত্ত হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। অনেকে গণমাধ্যমে গিয়ে অনবরত এমন মতামত দিয়েছেন। গণমাধ্যমকে সঠিক পথে আনতে সকল মতের মানুষকে জায়গা দিতে হবে। গত ১৫ বছরে গণমাধ্যমকে নিজেদের ভূমিকা নিয়ে একটি নিজস্ব অনুসন্ধান করার আহবান জানান তিনি।

শফিকুল আলম ছাড়াও এ অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আমাদের দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এবং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি।

আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আগে দেশকে সংগঠিত করতে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ছিল, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে তার কোনো ভূমিকা নেই। সেখানে জিয়াউর রহমান, তাজউদ্দিন আহমেদ, নজরুল ইসলাম, জেনারেল এ জে ওসমানীর ভূমিকা ছিল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পর ইতিহাস বিকৃত করে মুজিব বন্দনা শুরু করা হলো। শেখ মুজিবের শাসন আমলে যে ফ্যাসিবাদের বীজ বপন করা হয়েছিল, তা ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালে আমরা দেখেছি।

গত ১৫ বছরে কীভাবে গণমাধ্যমে ফ্যাসিবাদী বয়ানকে বৈধতা দিয়েছে তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রথমত গণমাধ্যমে শেখ মুজিবের বন্দনা করা শুরু হলো। এমনভাবে তাকে উপস্থিত করা হলো যেন মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ মানেই মুজিব। তা গণমাধ্যমের মাধ্যমে হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ইসলামের প্রতি একধরনের বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে। সেখানে জঙ্গি কার্ড খেলা হয়েছে। কৃষক পরিবার থেকে একটা ছেলেকে তুলে এনে ডিবি হেফাজতে রেখে পরে কোনো একটি বাড়িতে ট্রান্সফার করা হতো। আসলে এসবে কোনো জঙ্গী নেই। তৃতীয়ত, সমাজের একটি গোষ্ঠীকে খাটো করে উপস্থাপন করা হয়েছে। সমাজে বিভেদ তৈরি করা হয়েছে। চতুর্থত, যেহেতু ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছে, তাই তাদের প্রতি অনন্তকালের কৃতজ্ঞতার বয়ান তৈরি করা হয়েছে। পঞ্চমত, উন্নয়নের ফানুস তৈরি করা হয়েছে। সর্বশেষ, শেখ হাসিনাকে তোষামোদ করা হয়েছে। এভাবে গণমাধ্যম ফ্যাসিবাদকে পরিপুষ্ট করেছে।
 
তিনি বলেন, এখন গণমাধ্যম নতুন বয়ানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ ফেরানোর চেষ্টা করছেন। তারা দেখানোর চেষ্টা করছে, শেখ হাসিনা খারাপ, তবে শেখ মুজিব ভালো ছিলেন। তারা শেখ মুজিবের একটি কাল্ট চরিত্র এখনো টিকিয়ে রাখতে চায়। অথচ মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়ে শেখ মুজিব যা করেছেন, ১৫ বছর সময় পেলে তিনি শেখ হাসিনা থেকেও ভয়ংকর হতেন।