পরীক্ষা না দিয়েই ফার্স্ট ক্লাস পেলেন রাবি ছাত্রী!
পরীক্ষা না দিয়েই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টার ফাইনালে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছেন এক শিক্ষার্থী। গত ১৬ অক্টোবর সেমিস্টারের রেজাল্ট প্রকাশ হলে বিষয়টি কেউ খেয়াল না করলেও আজ রবিবার ঘটনাটি জানাজানি হয়। তবে বিষয়টিকে অনিচ্ছাকৃত ভুল বলছেন পরীক্ষা কমিটির সভাপতি।
বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ মে ইতিহাস বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষা শুরু হয় এবং ৬ জুন শেষ হয়। চলতি মাসের ১৬ অক্টোবর ওই পরীক্ষার রেজাল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়। এতে দেখা যায়, শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরোজ মারিয়ার (২২) নামের পাশে ফলাফল জিপিএ ৩.৫০ লেখা রয়েছে। যিনি কিনা পরীক্ষায় অংশগ্রহণই করেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ওই শিক্ষার্থী অসুস্থতার কারণে দ্বিতীয় বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষাতেই অংশগ্রহণ করেননি। অর্থাৎ তিনি দ্বিতীয় বর্ষের গণ্ডিই পেরোতেই পারেননি। ফলে তিনি তৃতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষাতেও অংশ নেননি।
ঘটনাটি জানার পর ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। বিভাগের ফলাফল তৈরি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থীরা। তারা অভিযোগ করেন, কেউ পরীক্ষায় অংশ না নিয়েই ৩.৫০ রেজাল্ট পেলে আমাদের ফলও যে তারা ইচ্ছানুযায়ী বসিয়ে দেন না, তার গ্যারান্টি কী?
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষা না দিয়েই কীভাবে ফল পেতে পারে? এ থেকে বোঝা যায় পরীক্ষা কমিটির সদস্যরা যথাযথভাবে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন না করে ইচ্ছামতো রেজাল্ট তৈরি করেন। শিক্ষকদের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের কারণেই আমরা অনেকেই প্রত্যাশিত রেজাল্ট বঞ্চিত হই। আর অনেকেই অপ্রত্যাশিতভাবে ভালো ফলাফল করে।’
শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরোজ মারিয়া বলেন, ‘আমি মাতৃত্বকালীন অসুস্থতার জন্য দ্বিতীয় বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারিনি। তাই আমি এখনো তৃতীয় বর্ষে উঠতে পারিনি। বর্তমানে আমি ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সঙ্গে দ্বিতীয় বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারে অধ্যয়নরত আছি। কিছুদিন পর পরীক্ষা দেব। কিন্তু আজকে রেজাল্টের বিষয়টি জেনে খুব অবাক হয়েছি।’
পরীক্ষা কমিটির সদস্য অধ্যাপক মর্তুজা খালেদ বলেন, ‘এটা আসলে একটা ভুল হয়ে গেছে। মূলত একই রোল নম্বরের পুনঃভর্তির (পূর্ববর্তী শিক্ষাবর্ষ) এক শিক্ষার্থী থাকায় কোনোভাবে ওই শিক্ষার্থীর নামটি যুক্ত হয়ে গেছে। যা কোনোভাবেই উচিত হয়নি। তবে এটি সংশোধনের সুযোগ আছে। আমরা সেটি নিয়ে কাজ করছি।’
পরীক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাশেম বলেন, ‘এটি একটি অনিচ্ছাকৃত ভুল। পরীক্ষা কমিটির তিনজন টেবুলেটর (পরীক্ষা কমিটির সদস্য) ছিল মূলত তাদের গাফিলতির কারণেই এই ভুলটি হয়েছে। তবে বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এটি সংশোধনের জন্য আমরা ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ফেরদৌসী খাতুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।