ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ, দিনে ৮ জন মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা নিচ্ছেন

মশার কামড় থেকে বাঁচতে শরীরে পলিথিন মুড়িয়েছেন গণরুমের এক শিক্ষার্থী।
মশার কামড় থেকে বাঁচতে শরীরে পলিথিন মুড়িয়েছেন গণরুমের এক শিক্ষার্থী।  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। বাড়ছে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এ বছর ডেঙ্গুর আক্রমণ প্রবল। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালেও চিকিৎসা নিয়েছেন ও নিচ্ছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী। এডিস মশাবাহিত এ রোগের প্রকোপ দেখা দেয়ায় আতঙ্কও দেখা দিয়েছে অনেকের মনে। 

শিক্ষার্থীরা বলছেন, শহরের অন্য এলাকাগুলো মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও মশা নিধনের দায়িত্ব ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের। কিন্তু এ কাজে সংস্থাটির কর্মীদের ভুল ও অবহেলা রয়েছে। তাই মশা নিধন হচ্ছে না। শুধু সিটি কর্পোরেশনের উপর নির্ভর না করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেও বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

গত ১৮ থেকে ২০ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা নেয়া শিক্ষার্থীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৮, ১৯ ও ২০ নভেম্বর যথাক্রমে ১০৫, ৯৮ ও ১০০ জন শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী বিভিন্ন ভাইরাসজনিত জ্বরে আক্রান্ত। আর গড়ে ৮ থেকে ১০ জন বিভিন্ন মাত্রার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত। এদের মধ্যে কেউ মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি হন। কেউ সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে। স্বল্পমাত্রায় আক্রান্তরা ওষুধ সেবনের পরামর্শ নিয়ে বাসাবাড়িতেই থাকছেন। 

বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ডেঙ্গু আক্রান্ত চার শিক্ষার্থী ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন। অফিস সহকারীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী ডেঙ্গু আক্রান্ত বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকেই উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হচ্ছে। 

বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন আবাসিক হল সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, শীতকাল শুরু হওয়ার আগেই হলগুলোতে মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে। দিন কিংবা রাত সব সময়ই কমবেশী মশার আনাগোনা কক্ষগুলোতে। আবাসিক, একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনের আশপাশের ড্রেন ও ঝোপঝাড়েও মশার উপদ্রব দৃশ্যমান। গণরুমে (সাধারণত প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা থাকে) শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে নিচে বিছানা করে থাকতে হয়। তাই এসব কক্ষে কয়েল জ্বালানো বা মশারি টানানোর কোন উপায় নেই। এখন প্রায় সবকটি বিভাগে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়ে গেলেও ইতোমধ্যেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হল ছেড়েছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করার স্বপ্নে যেসব শিক্ষার্থী এখনও হলে রয়ে গেছেন মশার কামড়ে তাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিও ব্যাহত হচ্ছে। 

ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির জন্য শিক্ষার্থীরা মশা নিধনে প্রশাসনের নির্বিকার ভূমিকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ব্যবস্থাপনা না থাকাকেই দায়ী করছেন। তারা বলছেন, কয়েকদিন পরপর সিটি কর্পোরেশনের কর্মীরা বিকট আওয়াজে ধোঁয়ার ওষুধ স্প্রে করে গেলেও তা কাজে আসছে না। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব উদ্যোগে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে অবস্থার উন্নতি হবে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের প্রধান মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. সারওয়ার জাহান মুক্তাফী বলেন, ‘প্রতিদিনই জ্বরে আক্রান্ত অনেক রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। এর মধ্যে অনেকে ভাইরাসজনিত জ্বরে আক্রান্ত আর কিছু আছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। বছরের এ সময়টাতে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সবসময় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়ে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশী।’ 

ঢাবির প্রধান মেডিকেল অফিসার ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে শিক্ষার্থীদের মশারি ব্যবহারের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘এ সময়টাতে মশারি ছাড়া কোনভাবেই ঘুমানো যাবে না। শিক্ষার্থীদের প্রতি আরও পরামর্শ থাকবে তারা যেন ঝোপঝাড় বা মশার উপদ্রব আছে এমন জায়গায় বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে বা বসে না থাকেন।’ সচেতনভাবে চলাফেরা করলে এ পরিস্থিতি থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। 

জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মূলত এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর মৌসুম। রোগবৃদ্ধির প্রবণতা অনুযায়ী এ বছরের নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহেও এ রোগের প্রকোপ থাকতে পারে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রাব্বানী বলেন, সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় মশা নিধনের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে এ কার্যক্রম যেন আরও জোরদার করা হয় সে বিষয়ে আমরা সিটি কর্পোরেশনের সাথে কথা বলেছি। তারা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘আমি দায়িত্বগ্রহণ করেছি বেশীদিন হয়নি। তাই মশা নিধনে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তা জানিনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী ও টেকনিক্যাল অফিসার বিষয়টি ভালো বলতে পারবে ।’ 


সর্বশেষ সংবাদ