শিক্ষার্থীদের হলে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করছেন ঢাবি উপাচার্য
শিক্ষার্থীরা হলে ঠিকমতো সিট পেয়েছেন কিনা তদারকি করতে হলে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নতুন উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ। ছাত্রজনতার গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ঢাবির ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের এই অধ্যাপক। উপাচার্য হওয়ার পর থেকেই ইতিবাচক নানা কার্যক্রমের জন্য বারবার আলোচিত হয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার (০১ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে শিক্ষার্থীদের কক্ষে গিয়ে শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নিতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে হলের শিক্ষার্থী মো. মোক্তাদির দস্তগীর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সকালের কর্মকাণ্ড! রুমের মধ্যে তৈরি হচ্ছি, সকালবেলা ক্লাসে যাব। হঠাৎ একজন বললো আপনারা কি ফ্রি আছেন? স্যার এসেছেন। হ্যাঁ নিশ্চয়ই! সেকি! স্বয়ং ভিসি স্যার হাজির। কেমন আছো বাবা? তোমরা সবাই ডেস্ক, বেড পেয়েছো তো? কোনো সমস্যা নেই তো বাবা! স্যার আমরা ঠিকঠাক। এমন ভিসিই কি চেয়েছিলাম, যিনি ঘুম ভাঙতেই এসে হাজির হবেন খোঁজ নিতে?’
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ-২’ নামক ফেসবুক গ্রুপে সুর্মী চাকমা নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আই উইশ, ভিসি স্যার যদি অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের এসে জিজ্ঞেস করতেন, মা, বাইরে থাকার আর্থিক সামর্থ্য আছে? দূর থেকে ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়া করতে হয়, অনেক বেশি রিকশা ভাড়া তাই না? টাকা-পয়সা দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে না? রাস্তাঘাটে হ্যারাস হতে হয় তোমাদের মেয়েদের, খুব ভয়ে থাকি মা তোমাদের নিরাপত্তার জন্য। রান্না করে খেতে কষ্ট হয় তাই না? তুমি তো রান্নাবান্না খুব ভালো করতেও পার না। তোমাকে তো আবার বাজারও করতে হয়। এসবের পর পড়াশোনা করার সময় পাও তো? অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করলে কেমন হয় বলো তো? এট লিস্ট তোমাদের বাসা ভাড়ার টাকাটা তো বাঁচবে।’
এর আগে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর সকালে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে (আইএমএল) ইনফরমাল টি-শার্ট পরে ইনস্টিটিউটটির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন উপাচার্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পদে থেকেও একজন অধ্যাপকের এমন আচার-আচরণে মুগ্ধ হন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
নিজের অনুভূতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করেন শিক্ষার্থী তাহমিদা নামে একজন লেখেন, ‘আইএমএলে নিচতলার টেবিলে বসে হোমওয়ার্ক করছিলাম। হঠাৎ একজন বয়স্ক ধরনের মানুষ এলেন। খুবই ইনফরমাল টি-শার্ট পরিহিত। মাথায় ক্যাপ ছিল। দ্রুত গতিতে হাঁটতে হাঁটতে নিচতলায় এদিক সেদিক দেখে নিলেন। মনে হবে জগিং করতে বের হয়েছেন। ভাষা ইনস্টিটিউট হওয়ায় সব বয়সের মানুষকেই এখানে দেখা যায়। এই সিনারিও তেমন অস্বাভাবিক না।
আরও পড়ুন: চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ প্রত্যাশীদের ওপর পুলিশের টিয়ারশেল নিক্ষেপ
একটু পরে, তিনি হঠাৎ করে আমাদের টেবিলের সামনে এসে বললেন ‘তোমরা কেমন আছ? আমি নিয়াজ আহমেদ, ভাইস চ্যান্সেলর। আমি আসলে জানতে এসেছি তোমরা কোন ব্যাচের। তোমাদের ক্লাস শুরু হয়েছে তো? ইনস্টিটিউটের ইন্টারনাল অনেক সমস্যা থাকতে পারে, সেগুলো সব আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তোমাদের তো ক্লাস শুরু করতে হবে। তোমরা সবাইকে ক্লাসে আসতে বলবা। ক্লাস শুরু না করলে তো হবে না। তোমাদের গতকাল ক্লাস হয়েছে? এর আগের দিন হয়েছে?’ শেষে বললেন, ‘তোমরা সবাই ভালো থেকো।’
তাহমিদা আরও লেখেন, ‘উনি পরিচয় না দেওয়া পর্যন্ত আমরা একজন স্টুডেন্ট ও বুঝতে পারিনি উনি কে। ভাইস চ্যান্সেলর হচ্ছেন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবকের পদ, গুরুদায়িত্বের পদ। সর্বোচ্চ সম্মানের পদও বটে। প্রচণ্ড ব্যস্ততার মাঝেও স্যার এত সাধারণভাবে এসে আমাদের খোঁজ নিলেন, এই দৃশ্যটাকে আমি রিলেট করেছি একজন ন্যায়পরায়ণ, দায়িত্ববান শাসকের সাথে, যিনি ছদ্মবেশে তার জনগণের খোঁজ নেন। এটা যদিও স্বাভাবিক একটা দৃশ্য হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু বিগত দিনগুলোতে এই পদের যে অপব্যবহার আমরা দেখেছি, সে হিসেব করলে, এটা অস্বাভাবিকই মনে হয়। আমি অনেক ইমপ্রেসড।’