২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৩৬

রাবির নবীন শিক্ষার্থীকে র‌্যাগিং, আবরারের মতো মারার হুমকি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক নবীন শিক্ষার্থীকে ছাত্রাবাসের নিজ কক্ষে র‍্যাগিং ও আবরার ফাহাদের মতো পিটিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মার্কেটিং বিভাগের দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নিজের নিরাপত্তা চেয়ে প্রক্টর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগপত্র দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।

অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থী হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অন্তর বিশ্বাস এবং একই বিভাগের দ্বিতীয় শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান নাবিল। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম মোহাম্মদ রকি। তিনি দর্শন বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থী।

অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, ক্যাম্পাস সংলগ্ন বিনোদপুরের লেবুবাগান এলাকার ‘বিশ্বাস ম্যানসন’ ছাত্রাবাসের ২০৪ নম্বর কক্ষে থাকেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। সেখানে মোহাম্মদ রকি মানসিক নির্যাতন, হয়রানি ও হুমকির শিকার হন।

অভিযোগপত্রে মোহাম্মদ রকি উল্লেখ করেছেন, ‘আমি মোহাম্মদ রকি গতকাল রোববার রাত পৌনে ১২টা থেকে প্রায় দেড়টা পর্যন্ত মানসিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছি। ‘‘বিশ্বাস ম্যানসন’’ ছাত্রাবাসের ২০১ ও ২০৫ নম্বর রুমের দুজন শিক্ষার্থী গতকাল রাত ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে আমার কক্ষে আসেন। শুরুতেই তাঁরা আমাকে নানা রকম বিব্রতকর প্রশ্ন করেন। ফলে আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হই। 

কথাবার্তার একপর্যায়ে তাঁরা আমাকে বলেন, ‘‘তোকে হলের গেস্টরুমে নিয়ে যাব, গেস্টরুমে নিয়ে গিয়ে তোকে আদর-আপ্যায়ন করব।” এরপর তাঁরা বলেন, ‘‘শেষবারের মতো তোর মাকে কল দে, কল দিয়ে বলবি আর কোনো দিন দেখা না-ও হতে পারে, আমি কোনো ভুল করলে, আমাকে মাফ করে দিও।” একপর্যায়ে তারা বলেন, ‘‘আবরার ফাহাদকে কীভাবে মারা হয়েছিল জানিস?” আমি বলি, “জ্বি ভাই, পিটায়ে মারা হয়েছিল।” তারপর তাঁরা বলেন, ‘‘তোকে এভাবে মারলে তখন কী করবি?” তারপর আমি চুপ থাকি।’ 

অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করেন, ‘তারা হুমকি দিয়ে বারবার আমাকে হলের গেস্টরুমে যেতে বলেন। আমি যেতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁরা আমাকে বলেন, ‘‘তুই যদি হলের গেস্টরুমে যেতে না চাস, তাহলে মেসে শিবির ডেকে নিয়ে এসে তোকে মারব।” এরপর তাঁরা আমাকে বলেন, ‘‘তোর রুমমেটদের সেমিস্টার ফাইনাল ৭ তারিখে শেষ হবে। ৮ তারিখ রাতে তোর সঙ্গে আমরা পার্টি দেব।” এরপর তারা আনুমানিক রাত দেড়টার দিকে রুম থেকে বের হয়ে যায়। এমতাবস্থায় আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’ 

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রক্টর অফিসে দুই পক্ষকে ডাকা হয়। এসময় দুই সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম ও অধ্যাপক ড. মো. নাসির উদ্দীন ও মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মশিহুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।  

অভিযুক্ত মার্কেটিং বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল হোসেন নাবিল বলেন, গতকাল আমাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিভাগের বড় ভাই ওই ছেলের রুমে নিয়ে যায়। যখন আমি রুমে যাই, তখন আমার ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই তার (রকি) সাথে মজা করে। আমিও ছিলাম পিছনে। কিন্তু আমি সেরকম ইনফ্লুয়েন্স করিনি। শিবির কথাবার্তা, মারা বা কোনো অত্যাচার করিনি। আমি তাকে বলে এসেছি তোমরা ফ্লোরে এক সঙ্গে আছো, মিলেমিশে থাকবা। রুমে আসবা আড্ডা দিবা। তোমার কোনো সমস্যা হলে আমাকে নক করতে পার। 

আবরার ফাহাদের মতো হত্যার হুমকি বিষয়ে তিনি বলেন, এটা আমরা উদাহরণ হিসেবে বলেছি। আমরা বলেছি বিশ্ববিদ্যালয় এখন সে রকম নেই যে আবরার ফাহাদের মতো হবে। তারসাথে এমন হলে আমাদের জানাতে বলেছি, কিন্তু সে বিষয়টি অন্যভাবে নিয়েছে।

অভিযুক্ত আরেক শিক্ষার্থী মো. অন্তর বিশ্বাস বলেন, আমি তারসাথে খুবই নরমালি কথা বলি। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল তার সঙ্গে একটা সুসম্পর্ক তৈরি করা। কিন্তু ব্যাপারটা এতোদূর চলে যাবে আমি বুঝতে পারিনি। ওই শিক্ষার্থীকে আমরা হুমকি দিয়েছি এই ব্যাপারটি ভুল। আমি তাকে বলেছিলাম, আবরার ফাহাদের সঙ্গে যেটা ঘটেছে ওটা র‍্যাগিং, তোমার সঙ্গে যেমনভাবে কথাবার্তা হচ্ছে এটাকে তুমি র‍্যাগিং হিসেবে নিও না আর শিবিরের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক একটি ঘটনা। গতকাল আমরা নতুন শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলাম, অত্যন্ত চমৎকার একটা দিন ছিল। কিন্তু আজকের দিনটি কিছুটা হলেও বিষাদময়। কারণ একজন নতুন শিক্ষার্থীকে যেভাবে র‍্যাগিং দেওয়া হয়েছে, সেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা শিক্ষক হিসেবে এই বিষয়গুলোকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দিতে পারি না। অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা আমরা করব।