২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩৩

চার দফা দাবিতে রাবির সাংবাদিকতা বিভাগে তালা শিক্ষার্থীদের

বিভাগে তালা লাগিয়ে আন্দোলন করছেন রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা  © টিডিসি ফটো

সেশনজট নিরসন, চার মাসে সেমিস্টারসহ চার দফা দাবিতে বিভাগে তালা লাগিয়ে আন্দোলন করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় বিভাগে তালা ঝুলিয়ে দেন তারা। এ সময় তাদের চার দফা নিয়ে স্লোগান দিতে দেখা যায়। 

আন্দোলন চলাকালে ‘পরীক্ষা কেন ধীরগতি, কী করছেন সভাপতি’, ‘রেজাল্ট কেন দশ মাসে, রেজাল্ট চাই এক মাসে’, ‘দুই বছরে দুই সেমিস্টার ,ধিক্কার ধিক্কার’, ‘শিক্ষকদের স্বেচ্ছাচারিতা, রুখে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘১২ মাসে সেমিস্টার, চলবে না চলবে না’, ‘পরিবারের নামে প্রতারণা চলবে না, চলবে না’, ‘মিষ্টি কথা বাদ দেন, আমাদের ছেড়ে দেন’, ‘আমরা কেন আদু ভাই, জবাব চাই জবাব চাই’ এমন স্লোগান দিতে থাকেন তারা।

বিভাগের ৩০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী কামরুজ্জামান ফাহাদ বলেন, আমরা আজকের মধ্যেই পরীক্ষার ডেট চাই। আর কোনো সময় দিতে রাজি না। আর এক্সাম পূজার ছুটির আগেই শেষ হওয়া চাই। না হলে এক্সাম দেব না। আমাদের নেক্সট সেমিস্টারগুলা চারমাসে করতে হবে এবং এটার ক্যালেন্ডার ২-১ দিনের মধ্যেই তৈরি করতে হবে। আর আমাদের নিশ্চয়তা দিতে হবে, এটা মেনে চলা হবে। কেননা বিগত সময়গুলাতে দেখেছি, ক্যালেন্ডারে একটা পরীক্ষার ডেট থাকলেও ঠিকমতো ক্লাস হয়নি, পরীক্ষাও হয়নি।

এ সময় মাস্টার্সের শিক্ষার্থী শেখ ফাহিম আহমেদ বলেন, আমরা চাই না আমাদের ছোট ভাই-বোনেরা আমাদের মতো সেশনজোটের মতো মানসিক যন্ত্রণায় থাকুক। কতটা ধীরগতি হলে একটা সেমিস্টার শেষ করতে ১২ মাস লেগে যায়। আমরা চার দফা দাবিতে আজ এখানে দাঁড়িয়েছি। গত ২২ সেপ্টেম্বর আমরা বিভাগের সভাপতি বরাবর চার দফা পেশ করে দুই দিনের আল্টিমেটাম দিই। এ চার দফা দাবি মেনে না নেওয়ায় আমরা বিভাগে তালা দিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি।

তাদের দাবিগুলো হলো-
১. ৩০ ব্যাচের (২০২০-২১ সেশন) ২০২৩ সালের ৩ ডিসেম্বরে কোর্স শুরু হয়। এরপরে ৬ জুন, ২০২৪ সালে ২য় বর্ষ, ২য় সেমিস্টারের পরীক্ষা শুরু হয়। পরে বিভিন্ন কারণে পরীক্ষা বন্ধ হয়। এরপর বিভাগ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পরীক্ষা শুরুর কথা বলা হয়। কিন্তু সেটি হয়নি। এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর বিভাগের মতবিনিময় সভায় জানতে পারেন, অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত অধ্যাপক মুসতাক আহমেদ এ পরীক্ষা কমিটির সভাপতি। তিনি প্রশ্ন এবং পরীক্ষাসংশ্লিষ্ট আনুসাঙ্গিক কাগজপত্র নিজের কাছে রেখেছেন বলে জানিয়েছে বিভাগের সভাপতি। যার ফলে পরীক্ষা শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। এ পরীক্ষা কবে শুরু হবে সেটিও বিভাগ আমাদের স্পষ্ট করেনি।

একজন অন্যায়কারী কত শক্তিশালী হলে একাই একটা ব্যাচের পরীক্ষা বন্ধ করে রাখতে পারে। দিনের পর দিন কেটে যাচ্ছে অথচ কোনো সমাধান আসছে না। এই এক সেমিস্টার প্রায় ১০ মাসেও শেষ হয়নি। একজন শিক্ষকের কারণে একটা ব্যাচের পরীক্ষা থেমে আছে। যেখানে আমরা ৪ মাসে সেমিস্টার শেষের দাবি জানাচ্ছেন তারা, সেখানে ১০ মাস হয়ে যাচ্ছে। ব্যাপারটি অযৌক্তিক এবং কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।

২. ৩১ ব্যাচের (২০২১-২২ সেশন) ২য় বর্ষ, ১ম সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হয় গত বছরের ২৫ নভেম্বর। ক্লাস শুরুর পর প্রায় ১০ মাস হয়ে যাচ্ছে অথচ কোনো অদৃশ্য কারণে পরীক্ষার ফরম ফিলাপের ডেট পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে না, সেটিও বিভাগ স্পষ্ট করেনি। অথচ রাবির কয়েকটি বিভাগ এবং ঢাবিতে ১২ মাসে তিনটি করে সেমিস্টার শেষ হয়। অবস্থা কত করুণ সেটার বোঝার জন্য এর থেকে বেশি কিছু প্রয়োজন হয় না। 

আরো পড়ুন: ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ পর্যায়ের ভর্তি ও মাইগ্রেশন বন্ধের তারিখ ঘোষণা

৩. অধ্যাপক মোসতাক আহমেদের চারটি গুরুতর অভিযোগ ডকুমেন্টসসহ এনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমরা তার অপসারণের আবেদন করেছেন তারা। কিন্তু তাদের পরে চারুকলার এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ দিলে প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে। এর মূল কারণ সেই বিভাগের শিক্ষকদের সহযোগিতা। তাদের বিভাগ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কী ধরনের সহযোগিতা বা কী কাগজপত্র দেওয়া হয়েছে, তা স্পষ্টভাবে জানাতে হবে। 

৪. প্রত্যেক বর্ষের শিক্ষার্থী ভয়াবহ সেশন জটে পড়ছে। বিভাগের কাছে কয়েক দফা আলোচনা করলেও তারা শুধু আশ্বাসই দিয়ে গেছেন। কোনো কার্যকর পদক্ষেপ তারা দেখতে পাননি। তাই সব সেমিস্টার এখন থেকে পরীক্ষাসহ চার মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে। অর্থাৎ এক বছরে তিন সেমিস্টার যাতে শেষ হয়, সেটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।

প্রসঙ্গত, গত ২২ সেপ্টেম্বর বিভাগের সভাপতির নিকট চার দফা দাবি দিয়ে দুই দিনের আল্টিমেটাম দেন শিক্ষার্থীরা। তবে তাদের দাবি মেনে না নেওয়ায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তারা।