২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৩৬

ছাত্রলীগের নেত্রীদের পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করার হুমকি রাবি প্রাধ্যক্ষের

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়  © সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের ছাত্রলীগের পদধারী আবাসিক ছাত্রীদের হলছাড়া করার হুমকি দিয়েছেন প্রাধ্যক্ষ জামিরুল ইসলাম। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ।

হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, ‘পুলিশ ফোর্স, সেনাবাহিনী সকল কিছু রেডি আছে। তোমরা যদি উল্টাপাল্টা কিছু করো, তাহলে প্রত্যেকটা মেয়েকে এখান থেকে অ্যারেস্ট করে থানায় নিয়ে চালান দেওয়া হবে। সকল কিছু আমাদের কাছে আছে। আমাদের রূঢ় হতে বাধ্য কোরো না। তোমাদের স্পর্ধা এটা। একজন প্রভোস্ট যখন কোনো অর্ডার করেন, সেটা আইন। তোমরা শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ করেছ।’

গত বৃহস্পতিবার ওই হলে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় প্রাধ্যক্ষ জামিরুল ইসলাম ওই হুমকি দেন। ওই সভার ২৩ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের একটি অডিও ক্লিপে প্রাধ্যক্ষকে হুমকি দেওয়ার কথা শোনা যায়।

ওই হলের এক আবাসিক ছাত্রী সাংবাদিকদের অডিও ক্লিপটি সরবরাহ করেছেন। এ সময় তিনি তাদের উদ্দেশে এই মন্তব্য করার কথা স্বীকার করে বলেছেন, ‘আসলে এভাবে মন্তব্য করাটা ঠিক হয়নি।’

আরও পড়ুন: ০২৫-এ পড়ানো হবে ২০১২ সালের সিলেবাস, ২০২৬ সালে কী?

অডিওতে ছাত্রলীগ নেত্রীদের উদ্দেশে প্রাধ্যক্ষ জামিরুল ইসলামকে বলতে শোনা যায়, ‘স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা আন্দোলন করেছে। হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, পঙ্গু হয়েছে। তোমাদের তো অস্তিত্ব থাকার কথা না, তোমাদের তো মাথামুণ্ডু আলাদা হয়ে যাওয়ার কথা। তোমাদের তো সেটা হয় নাই। সেদিন তোমাদের একটা ডিসিশন দেওয়ার পরও তোমরা যাও নাই। এতে তোমরা আইন ভঙ্গ করেছ। তোমাদের হল থেকে বহিষ্কার করার জন্য সিম্পলি এই অভিযোগটাই যথেষ্ট।’

যারা ছাত্রলীগের পদধারী, তাদের প্রত্যেককে চলে যাওয়ার হুমকি দিয়ে প্রাধ্যক্ষ বলেন, ‘তুমি পোস্টেড ছিলা কি না, তুমি দরিদ্র, তোমাকে জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, আজ তোমাদের মুখ থেকে এসব গান বের হচ্ছে। এসব কোনো গান চলবে না। যারা পোস্টেড (পদধারী) ছিলা, তাদের চলে যেতে হবে। মাদক কারবারি যারা ছিলা, চলে যেতে হবে। এলিগেশন আসলে চলে যেতে হবে। তুমি ছিলা কি ছিলা না, আমরা তদন্ত করে তুমি ইনোসেন্ট হলে আমরা তোমাদের ফিরিয়ে নিয়ে আসব।’

এর আগে ১৪ সেপ্টেম্বর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক লাভলী নাহারের সই করা এক নোটিশে হলে অবস্থানকারী ছাত্রলীগের পদধারী শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগ করতে সময় বেঁধে দেন। পরদিন ১৫ সেপ্টেম্বর দুপুরের মধ্যে তাদের বেরিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়, কিন্তু শিক্ষার্থীরা হল ছাড়েননি।

আরও পড়ুন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সব রাজনীতি’ বন্ধ নাকি শুধু ‘দলীয় রাজনীতি?

পরে বৃহস্পতিবার সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে বেলা ১১টায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কয়েকটি হলের প্রাধ্যক্ষসহ হল কর্তৃপক্ষ আলোচনায় বসে। সেখানেই ছাত্রলীগ পদধারী ছাত্রীদের উদ্দেশে নানা ধরনের মন্তব্য করেন অধ্যাপক জামিরুল ইসলাম।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যাপক জামিরুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ওই হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমি কথাগুলো বলেছিলাম। তবে এটা সাধারণ কনভারসেশনের অংশ ছিল না। তার আগে অনেক সাধারণ কথা হয়েছিল। আমি তাদের বলেছিলাম, ‘বাবা তোমরাই তো শিক্ষকদের প্রাণ। তোমাদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তোমরা আমাদের কিছু সময় দাও, তারপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা তোমাদের আবার হলে ফিরিয়ে আনব। তোমাদের বিরুদ্ধে সিরিয়াস এলিগেশন নাই, থাকলে তোমরা হলে আসতে না। তোমরা ইনোসেন্ট, তোমরা ভালো, তবে আমাদের কিছুটা সময় দাও।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার আবার মিটিং ছিল সেই কারণে তড়িঘড়ি করে উচ্চস্বরেই কিছু বলেছিলাম এবং কিছু শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যেটা বলা আসলে আমার বলা ঠিক হয়নি। শিক্ষক হিসেবে ওই শব্দগুলো অ্যাভয়েড করতে পারলে ভালো হতো।’

এ বিষয়ে উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব বলেছেন বিষয়টি তিনি দেখবেন।