গণহয়রানির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষকের পদত্যাগ
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা নিগ্রহের শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মব জাস্টিস’-এর ঘটনা ঘটছে। এসবের প্রতিবাদ জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রভাষক পলাশ বসাক স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) নিজের ফেসবুক আইডি থেকে একটি পোস্ট করেন তিনি। সেখানে তিনি লেখেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আমি ‘স্বেচ্ছায়' অব্যাহতি নিয়েছি। আমি আমার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি সেপ্টেম্বরের ৩ তারিখে।’
তিনি আরও লেখেন, ‘মব জাস্টিস’-এর মাধ্যমে ৫ আগস্টের আগে ও পরে সংঘটিত সব শিক্ষক নিগ্রহের বিরুদ্ধে এটা আমার নীরব প্রতিবাদ।’
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) গত দুই মাসে শিক্ষক নিপীড়নের সব ঘটনাকে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য বলে আরেকটি পোস্ট করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মব জাস্টিস’ চলতে পারে না বলেও জানান তিনি।
সেখানে তিনি বলেন, ‘যে প্রতিষ্ঠানে শুধুমাত্র একটি মাত্র মতের মানুষ থাকতে পারবে এমন বন্দোবস্ত যখন করা হয়, তখন সেই প্রতিষ্ঠানকে আপনি আর যা-ই বলুন না কেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়' বলতে পারেন না!’
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র আন্দোলনের নামে গত দুই মাসে শিক্ষক নিপীড়নের যত ঘটনা ঘটেছে, তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্মের পর এমন ঢালাও শিক্ষক নিপীড়নের নজির নেই। বিশ্বে অন্য কোনো দেশে এ রকম ঘটনা ঘটেছে বলে শুনিনি।’
‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা কোন মত পথের অনুসারী হবেন, তারা কী বলবেন কিংবা কী বলবেন না, সেটা শিক্ষার্থীরা বা অন্য কেউ নির্ধারণ করে দিতে পারেন না।’
‘বুদ্ধিজীবী বলে পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকেরা যদি স্বাধীনভাবে মত প্রকাশই না করতে পারেন, তাহলে বুদ্ধি বা জ্ঞানের চর্চা হবে কী করে? মব জাস্টিস বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতে পারে না।’
প্রভাষক পলাশ বসাক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে সব মত ও পথের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নিশ্চয়তা না থাকা দেশ ও সমাজের চরম ব্যর্থতার পরিচায়ক। শিক্ষক নিপীড়ন বন্ধ করতে না পারার দায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও সরকারকেই নিতে হবে। শিক্ষক নিপীড়নের উন্মাদনা অবশ্যই থামাতে হবে।’