ঢাবির হলে যেভাবে হত্যা করা হয় তোফাজ্জলকে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে তোফাজ্জল নামে এক মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ঘটেছে। তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কারা জড়িত বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হওয়া না গেলেও তার নিথর দেশের পাশে লাঠি হাতে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীদের দেখা গেছে।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় চোর সন্দেহে তোফাজ্জলকে হলের গেস্টরুমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দফায় দফায় তাকে মারধর করা হয়। এ সময় তাকে ভাতও খেতে দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা।
প্রত্যক্ষদর্শী, হলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে জানা গেছে, তোফাজ্জলকে যখন গেস্ট রুমে নেওয়া হয়, তখন সেখানে প্রথম এবং দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। তারা তোফাজ্জলকে হালকা মারধর করে ক্যান্টিনে খাবার খাওয়াতে নিয়ে যান। এর পর তাকে এক্সটেনশন বিল্ডিং-এর গেস্ট রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বিভিন্ন ব্যাচের প্রায় ৩০ জন। এদের মধ্যে ২০-২১ এবং ২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থীরা তোফাজ্জলকে সবচেয়ে বেশি মারধর করেছে।
সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, গেস্ট রুমে তোফাজ্জলের হাত বেঁধেছে জালাল। সুমন চোখ বন্ধ করে মেরেছে তাকে, মারতে মারতে ও (তোফাজ্জল) পড়ে গেছে। এরপরে পানি এনে তাকে পানি খাওয়ানো হলে সে উঠে বসে। এসময় সবাই হাততালি দেয়। সবাই খুশি হয় কারণ তাঁকে আবার মারতে পারবে। এরপর আবার শুরু হয় পেটানো। এই দফায়ও সবচেয়ে বেশি মেরেছে ফিরোজ। পরে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ১৮-১৯ সেশনের জালাল আসে। জালাল এসে আরও মারতে উৎসাহ দেয়; বলে— ‘মার, ইচ্ছামতো মার; মাইরা ফেলিস না একবারে’। এসময় গ্যাস লাইট দিয়ে পায়ে আগুনও ধরিয়ে দেয়। পরে সুমন এসে তোফাজ্জলের ভ্রু ও চুল কেটে দেয়।”
‘পরে তোফাজ্জলকে হলের মেইন বিল্ডিংয়ের গেস্টরুমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পরে জালাল প্রচুর মারে তাকে। বুট জুতা পরে এসে তোফাজ্জলের আঙ্গুল মাড়িয়ে ছেঁচে ফেলেন। এ সময় এক শিক্ষার্থী জালালকে বলে, ‘ভাই এগুলো কি করেন? তা শুনে হেসে দেয় জালাল। তোফাজ্জলের গোপনাঙ্গে লাঠি দিয়ে জোরে জোরে আঘাত করে জালাল। অনেক সিনিয়র এসে তাদের ফেরানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে।’
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে ফজলুল হক মুসলিম হলের এক শিক্ষার্থী গণমাধ্যমকে জানান, ‘মারধরকারীরা চেষ্টা করছিল মারপিট করে তাঁর স্বীকারোক্তি নিবে যে চুরি হওয়া ফোন সেই নিয়েছে। মারধরের এক পর্যায়ে দুই-তিনটা ফোন নম্বর দেয় তোফাজ্জল। সেই নাম্বারে ফোন দিলে অপর পাশ থেকে জানানো হয় মানসিক বিকারগ্রস্ত। কিন্তু ওরা (শিক্ষার্থীরা) বিশ্বাস করতে চায়নি। সেখানে আসা শিক্ষকদের সামনেও তোফাজ্জলকে পেটানো হয়। শিক্ষকরা বাধা দিতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এরপর প্রক্টরিয়াল টিম আসে। কিছু অভিযুক্তরা টিমের কাছে তোফাজ্জলকে দিতে চাচ্ছিল না। ২৫ মিনিট ধরে শিক্ষকরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু স্যারদের কথা তাঁরা মানেনি। পরে প্রক্টরিয়াল টিম বুঝতে পারে তোফাজ্জলের অবস্থা খুবই খারাপ। এত মারলে কেউ বাঁচতে পারে না। তার মাংসগুলো খসে পড়ে গেছে। তার গোপনাঙ্গে প্রচুর আঘাত করা হয়েছে। আঙুলগুলো পুরো ছেঁচে ফেলা হয়েছে। পরে অবস্থা খারাপ দেখে এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের পাঁচ-ছয় জনের একটি দল তোফাজ্জলকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে রাত ১২টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় চিকিৎসক তোফাজ্জলকে মৃত ঘোষণা করলে সটকে পড়েন ওই শিক্ষার্থীরা।’
এসব বিষয়ে এখন পর্যন্ত অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।