ঘটনার শুরু ছয় মোবাইল ও ৪ মানিব্যাগ চুরির মধ্য দিয়ে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে তোহাজ্জল নামে মানসিক ভারসাম্যহীন এক তরুণকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে ছয়টি মোবাইল ও ৪টি মানিব্যাগ চুরির ঘটনার জেরে এমন কাণ্ড ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে ফজলুল হক মুসলিম হলের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হলে টুর্নামেন্ট চলছে। বুধবার দুপুরে খেলার সময় ৬টি মোবাইল ও চারটি মানিব্যাগ চুরির ঘটনা ঘটে। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সেই ক্ষোভ থেকেই তোফাজ্জলের এমন পরিণতি হয়ে থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা।
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে ফজুলল হক মুসলিম হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী বৃহস্পতিবার সকালে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বুধবার একটি ব্যাগে ৬টি মোবাইল ও ৪টি মানিব্যাগ রাখা হয়েছিল। ব্যাগটি কমেন্ট্রি বক্সের পাশে রাখা হয়। সেখান থেকে কে বা কারা ব্যাগ চুরি করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় সন্ধ্যায় শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। পরে হলের গেস্টরুমে তারা হট্টগোলের আওয়াজ পান।’
২০১৮-১৯ সেশনের এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘আমরা গেস্টরুমে গিয়ে দেখি একজনকে পেটানো হচ্ছে। দুপুরে চুরির ঘটনায় হলের সিসিটিভি ফুটেজ চেক করা হয়েছে। যাকে মারধর করা হচ্ছিল তার সঙ্গে চোরের চেহারার কোনো মিল ছিল না। তবুও তাকে কেন পিটিয়ে হত্যা করা হলো বিষয়টি আমাদের কারোই বোধগম্য নয়। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই। দোষী যেই হোক না কেন তার শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
এদিকে চোর সন্দেহে ভারসাম্যহীন তরুণকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ঘটনায় জড়িতদের কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন ঢাবি প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ। বৃহস্পতিবার সকালে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান তিনি।
ঢাবি প্রক্টর বলেন, ‘অনেক কষ্টের বিনিময়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। সেখানে এ ধরনের ঘটনা আমাদের পুরো অর্জনকে ম্লান করে দিয়েছে। ক্যাম্পাসের মধ্যে এ ধরনের ঘটনা কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। কেউ চুরি করতে আসলেও তাকে পিটিয়ে হত্যার অধিকার কারো নেই। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দায়ীদের শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িতদের মামলা করা হবে।’
এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জাল নামে ভারসাম্যহীন ওই তরুণকে দফায় দফায় মারধর করা হয়। হত্যার আগে নিহত তরুণকে ভাত খেতে দিয়েছিল হলের শিক্ষার্থীরা।
নিহত তোফাজ্জলের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটার কাঠালতলি ইউনিয়নে বলে জানা গেছে।
হল সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যায় চোর সন্দেহে তোফাজ্জলকে আটকের পর গেস্টরুমে নিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। সেখানে তাকে রাত ১০টা পর্যন্ত দফায় দফায় মারধর করে শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে ওই যুবককে ক্যান্টিনে বসিয়ে ভাতও খাওয়ানো হয়। এরপর পুনরায় মারধর করা হয় বলে জানা গেছে।
রাত ১০টার দিকে হলের হাউস টিউটররা ঘটনাস্থলে গেলে রাত ১২টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যায় কয়েকজন শিক্ষার্থী। পরে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করলে ওই শিক্ষার্থীরা সেখানে রেখেই সরে যায়।
জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ফারুক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, নিহতের লাশ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। শাহবাগ থানা থেকে পুলিশ এসেছিল। পরবর্তী কার্যক্রম তারাই এগিয়ে নেবে।