১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২২:৫৮

জাবিতে মোবাইল চোর সন্দেহে কর্মচারীকে আটকে রেখে মারধর

জাবি  © টিডিসি ফটো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) মোবাইল চোর সন্দেহে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলার খাবারের দোকানের এক কিশোর কর্মচারীকে তুলে এনে হলে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। আজ মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে এ ঘটনা ঘটে৷ 

অভিযুক্তরা হলেন- ইতিহাস বিভাগের ৪৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী কাব্বির হোসেন, লোক প্রশাসন বিভাগের ৪৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুল জলিল, ইতিহাস বিভাগের ৪৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী রোকনুজ্জামান রোকন এবং প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ৪৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম ৷  

জানা যায়, গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলার খাবারের দোকান 'বাংলার স্বাদে' খাবার খাওয়ার সময় ফোন রেখে চলে আসেন ইতিহাস বিভাগের ৪৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী কাব্বির হোসেন। কিছুক্ষণ পর ফোন নেয়ার জন্য দোকানে গেলে তিনি ফোনটা সেখানে না পেয়ে উপস্থিত স্টাফ এবং দোকানের মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করেন৷ এসময় টেবিল পরিষ্কার করা এক কিশোর স্টাফকে সন্দেহ হয় তার৷ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে অস্বীকার করে৷ এসময় ওই শিক্ষার্থী তাকে ফোন চুরির বিষয়টি স্বীকারের জন্য চাপ দেন, না হয় হলে তুলে নিয়ে আসার হুমকি দেন৷ 

পরবর্তীতে আজ সকাল সোয়া ১১টার দিকে দোকান থেকে তাকে তুলে নিয়ে আসেন কাব্বির ও তার বন্ধুরা।এসময় ওই কিশোরকে চড় থাপ্পড় মারেন এবং হলের এ ব্লকের ২৬২ রুমে নিয়ে আটকে রাখেন তারা৷ এছাড়া ছাদে নিয়ে ১ ঘণ্টা রোদে দাঁড় করিয়ে রাখেন বলে অভিযোগ করেন ওই কিশোর।  

ঘটনা জানাজানি হলে শিক্ষার্থীরা এবং হল প্রশাসন মিলে তাকে হল প্রশাসনে নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ প্রক্টরিয়াল টিম এবং হল প্রশাসন কিশোরকে হলে আটকে রাখার সত্যতা খুঁজে  পান৷

সাংবাদিক ও হল কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে মারধরে অভিযুক্ত ইতিহাস বিভাগের ৪৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী কাব্বির হোসেন বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় 'বাংলার স্বাদ' হোটলে গতকাল রাতে খাবার খেয়ে আমার ফোনটা ভুলে রেখে আসি। এর কিছুক্ষণ পর আসি সেখানে গেলে ফোনটি পাইনি। পরে তাকে সন্দেহ হলে আজকে সকাল ১১টার দিকে তাকে হলে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করি। তবে তিনি মারধর ও রোদে দাঁড় করে রাখার বিষয়টি অস্বীকার করেন।

এ বিষয়ে বাংলার স্বাদ হোটেলের কিশোর কর্মচারী বলেন, আমাকে তারা তুলে নিয়ে যান, মোবাইল চুরির কথা স্বীকার করতে চাপ দেন। এ ছাড়া আমাকে হলে ৪ ঘণ্টা বন্দি করে রাখে এবং চড় থাপ্পড় ও মারধর করেন। মোবাইল সমমূল্যের ২০ হাজার টাকা দাবি করেন।

এক পর্যায়ে তারা আমাকে হলের ছাদে এক পায়ে দাঁড় করিয়ে রাখে এবং প্রায় এক ঘণ্টা রোদে দাড় করিয়ে রাখে।

এ বিষয়ে মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ মাহমুদুর রহমান বলেন, আমরা অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের প্রথমত শোকজ করবো। যদি ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হয় তাহলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও  যাদের ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে ৪৫ ও ৪৬ ব্যাচ তাদের হল ছাড়ার ব্যাপারে সামনের এক দুই মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত আসবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত প্রক্টর অধ্যাপক রাশিদুল আলম বলেন, আমরা দুই পক্ষকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

উল্লেখ্য, অভিযুক্ত শিক্ষার্থী কাব্বির হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদলের সহ-সভাপতি নবীনুর রহমান নবীনের খুব কাছের বলে জানা গেছে। এছাড়া অভিযুক্ত শিক্ষার্থী রোকনুজ্জামান রোকন ছাত্রদল নেতা রাজু ইসলাম রাজনের হাত ধরে ছাত্রদলের রাজনীতিতে প্রবেশ করেছে বলে জানা গেছে। এর আগে ছাত্র দল নেতা নবীনের নির্দেশে দোকান দখলের অভিযোগ উঠেছিল।