০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১১

ঢাবির জগন্নাথ হলে বিজ্ঞানী সত্যেন বোস পাঠাগারে ভাঙচুর ছাত্রলীগের 

জগন্নাথ হলে সত্যেন বোস পাঠাগার  © সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ‘সত্যেন বোস পাঠাগার’-এ হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। 

বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানায় সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। এছাড়াও আজ বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন। এর আগে ২ সেপ্টেম্বর রাতে জগন্নাথ হলের  পিংকর চৌধুরী রাতুল ও রাজদীপ চৌধুরী রানুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কিছু কর্মীর দ্বারা লুটপাট ও হামলার ঘটনা ঘটে।

অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘জগন্নাথ হলে সত্যেন বোসের নামানুসারে ‘সত্যেন বোস পাঠাগারে’ ভাঙচুর হয়েছে। এর নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা নাই। যেই সংগঠন এই পাঠাগারটি পরিচালনা করে তাদের একজন নেতা আমাকে জানিয়েছে এই অপকর্মটি নাকি ছাত্রলীগ করেছে। দেখেন অবস্থা’

এ ঘটনায় লিখিত বক্তব্যে দেন সত্যেন বোস পাঠাগারের সম্পাদক মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে হল বন্ধ ঘোষণার সময় পাঠাগারটি প্রশাসন তালাবদ্ধ করে রাখে। ২ সেপ্টেম্বর রাতে পিংকর চৌধুরী রাতুল ও রাজদীপ চৌধুরী রানুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কিছু কর্মী পাঠাগারটির তালা ভেঙে কিছু জিনিসপত্র নিয়ে যায়। আমাকে ফোন করে হুমকি প্রদান করে এবং জগন্নাথ হলে গিয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করতে চাপ দেয়।

এই পরিস্থিতিতে পাঠাগারের সঙ্গে যুক্ত জগন্নাথ হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী তাদের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তারা উত্তেজিত ‘মব’ তৈরি করে তাদের লাঞ্ছনা, আটকে রেখে দীর্ঘসময় জেরা ও মারধর করে। হল প্রাধ্যক্ষের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগের উত্তেজিত কর্মীরা তাদের ফোন চেক করে, সে সময় অন্যদের সঙ্গে তাদের ফোনালাপ লাউড দিয়ে মবকে শোনায়- যা রীতিমত মানবাধিকার লঙ্ঘন।

গণআন্দোলনের মাধ্যমে পরাজিত শক্তি ছাত্রলীগ হল প্রভোস্ট মিহির লাল সাহার সহযোগিতায় এরকম একটি ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, আমরা আগেও দেখেছি ড. মিহির লাল সাহা নানাভাবে ছাত্রলীগকে শেল্টার দিয়েছেন এবং নানা অপকর্মে ছাত্রলীগকে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন।

এ সময় জগন্নাথ হলে হামলা এবং লাঞ্ছনার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, অতিসত্বর ক্যাম্পাসে চলমান সব অরাজকতার সমাধান চাই।

এদিকে জগন্নাথ হলে ‘সত্যেন বোস পাঠাগার’-এ হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জ্ঞাপন করেছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক সুহাইল আহমেদ বলেন, খুব সম্প্রতি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন হলে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’র বেশে একাধিক মহলের অগণতান্ত্রিক আচরণের প্রদর্শন আমরা খেয়াল করছি। জগন্নাথ হলে জগৎখ্যাত বিজ্ঞানী সত্যেন বোসের নামানুসারে ‘সত্যেন বোস পাঠাগার’ সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কর্তৃক পরিচালিত হয়ে আসছে দুই যুগের বেশি সময় ধরে। সেই পাঠাগারে গিয়ে হামলা-ভাঙচুর ও শিক্ষার্থী হেনস্তার ঘটনা রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি বৈ ভিন্ন কিছু নয়।

সুহাইল আহমেদ বলেন, ‘এই হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিচারের দাবি করছি। এর পাশাপাশি সত্যেন বোস পাঠাগারের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু ও হলে হলে এই সব মহলের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানাই। যে গণতান্ত্রিক পরিবেশের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এই রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে, আজকের সময়ে পরাজিত শক্তিগুলোর সেই অভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থী আচরণের হীন উদ্দেশ্য সম্পর্কে ছাত্রসমাজকে সজাগ থাকার জন্য আহ্বান করছি।’

উল্লেখ্য, ঢাবি শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের উদ্যোগে ও ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের পরিচালনায় ১৯৯৮ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক, প্রখ্যাত বিজ্ঞানী সত্যেন বোসের নামে সত্যেন বোস পাঠাগার পরিচালিত হয়ে আসছে। দীর্ঘদিন ভাসমান থাকার পর শিক্ষার্থীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে তৎকালীন প্রভোস্টের সহযোগিতায় পাঠাগারটি জগন্নাথ হলে একটি কক্ষ বরাদ্দ পায়।