০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪:০৫

শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত আওয়ামীপন্থী অধ্যাপক আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্বে

অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী  © ফাইল ফটো

বিতর্কিত এক অধ্যাপককে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামীকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, দুই কারণে সমালোচিত এই অধ্যাপক। প্রথমত, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষক এবং দ্বিতীয় তিনি শেয়ার কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত ছিলেন। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ভিসি নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনন্দিন আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম জ্যেষ্ঠ কোনো অধ্যাপকের মাধ্যমে পরিচালনার জন্য বলা হয়েছে। গত ২৯ আগস্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব মো. শাহীনুর রহমান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়েছে। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারারগণ পদত্যাগ করছেন এবং কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। ফলে তাদের পদত্যাগ ও অনুপস্থিতিজনিত কারণে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রমে অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। প্রশাসনিক কার্যক্রম চলমান রাখা ও আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনার নিমিত্ত নিয়মিত ভিসি নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন কাউন্সিল, ক্ষেত্রমতে বিভাগীয় চেয়ারম্যানগণের সঙ্গে আলোচনাক্রমে একজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপককে দিয়ে সাময়িকভাবে জরুরি প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব পালনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে পরামর্শ প্রদান করা হলো।

আরও পড়ুন: ত্রাণ দিতে গিয়ে দুর্ঘটনায় আহত চবি শিক্ষার্থী পলাশ মারা গেছেন

এদিকে, বিষয়টি জানানোর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম ডিন’স কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবেন অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী। তাছাড়া জরুরি বিবেচনায় সমাধানযোগ্য যেকোনো বিষয় আলোচ্যসূচি আকারে রেজিস্ট্রার ডিন'স কমিটিতে পেশ করবেন, পরবর্তীতে ডিন'স কমিটি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। গত রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) ডিনস কমিটির এক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ফাইল ছবি

তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া প্রজ্ঞাপনের সাথে ডিন’স কমিটি দায়িত্ব পালনের বিষয়টি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে অভিযোগ উঠছে। এছাড়াও সেখানে আহ্বায়ক হিসেবে (জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে) ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন ও আওয়ামীপন্থী অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দিন নিজামীকে মনোনীত করায় আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। 

জানা যায়, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর তৎকালীন চেয়ারম্যান ড. খায়রুল হোসেন, কমিশনার অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী এবং মুখপাত্র সাইফুর রহমানের পদত্যাগ এবং বিএসইসিকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর দাবিতে মানববন্ধন করে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্যপরিষদ।

বিনিয়োগকারীরা তখন বলেছিলেন, বিএসইসির ব্যর্থতায় ধ্বংস হয়ে গেছে দেশের পুঁজিবাজার। টানা দরপতনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তাদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ অবস্থায় আমাদের রাস্তায় নামার কোনো বিকল্প নেই। কেননা, আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। ক্যাপিটাল মার্কেটকে ক্যাসিনো মার্কেটে পরিণত করার মূল নায়ক হিসেবে উল্লেখ্য করে খায়রুল হোসেন ও হেলাল উদ্দিন নিজামীদের পদত্যাগ চাই। 

তবে সেসময় অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দিন নিজামী পদত্যাগ করেনি। পরের বছর ২০২০ সালে  ৯ বছর দায়িত্ব পালন করে সরকারের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বিএসইসি থেকে বিদায় নিয়েছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের এই অধ্যাপক।

আরও পড়ুন: চবি ছাত্রলীগের ৬ নেতাসহ ৪০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

জানা যায়, অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। চবির সর্বশেষ ডিন নির্বাচনে তিনি আওয়ামীপন্থী হলুদ দল থেকে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি এই অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও গত মে মাসে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।

এ বিষয়ে মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম ডিন’স কমিটির মাধ্যমে পরিচালনা করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেখানে জ্যেষ্ঠতার জন্য অধ্যাপক নিজামীকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। যদিও এটি খুবই সাময়িক সময়ের জন্য। তবে যদি ভিসি নিয়োগে বিলম্ব হয় আমরা ডিন’স কমিটি ও বিভাগীয় চেয়ারম্যানদের সাথে আলোচনা করে একজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপককে দায়িত্ব দেওয়া হবে।

চবির প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমান বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন’স কমিটির সিদ্ধান্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এভাবে তাকে দায়িত্ব দেওয়া ঠিক হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়টির বিএনপি-জামায়তপন্থী এক অধ্যাপক বলেন, ডিন’স কমিটির মাধ্যমে বিতর্কিত এই অধ্যাপককে দায়িত্ব দেওয়া সমীচিত হয়নি। তিনি তো শেখ হাসিনার দোসর। শিগগির বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগ দেয়া না হলে তার পদত্যাগের দাবি জানানো হবে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামীর সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।