০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৪০

ঢাবির বিভিন্ন ভবন আধুনিক হলেও ‘উপেক্ষিত’ জরাজীর্ণ কেন্দ্রীয় মসজিদ 

ঢাবির কেন্দ্রীয় মসজিদ  © ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ স্থাপনা ভগ্ন ও জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। মসজিদের দেয়ালে ফাটল, ওয়াশরুম সংকট, বৃষ্টি হলে টিন গলে মসজিদে পানি প্রবেশ করে, ওয়াশরুম নিয়মিত পরিস্কার না করা, মসজিদের পাখা নষ্ট, শীতাতপ নিয়ন্ত্রীত ব্যবস্থা না থাকাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত ঐতিহাসিক স্থাপনাটি। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় সংস্কারের দাবি তুললেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ঢাবির বিভিন্ন নতুন নতুন ভবন হলেও কেন্দ্রীয় মসজিদের যে কোনো ধরনের সংস্কার অনীহা কর্তৃপক্ষেরে।

১৯৬৬ প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই মসজিদের বয়স ৫৮ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। স্থাপনাটি সময়ের সাথে সাথে ভগ্ন ও জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে যা অনতিলম্বে সংস্কার করা না হলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের ধর্মীয় চর্চার ব্যাঘাত সহ অবকাঠামোগত দুর্ঘটনায় প্রাণনাশের ঝুঁকি রয়েছে।

শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ধারণক্ষমতা অনুযায়ী অজু করার জন্য নেই পর্যাপ্ত ট্যাপ। রয়েছে ওয়াশরুম সংকটও। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও অব্যবস্থাপনা মসজিদটিতে নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিদের ভোগান্তিতে যোগ করেছে নতুন মাত্রা।

শুধু তাই নয়, কম ধারণক্ষমতা সম্পন্ন পানির ট্যাংক ব্যবহারে কারণে নামাজের পূর্বে প্রায়ই তীব্র পানির সংকট দেখা দেয়। এমনকি মহিলাদের জন্য নির্ধারিত অজুখানায় পুরুষের অবাধ প্রবেশ, ওয়াশরুম তালাবদ্ধ থাকা, পানির ট্যাপ নষ্ট হয়ে পড়ে থাকা যেনো নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব সমস্যা সমাধান করে মসজিদটিকে আধুনিক ও প্রযুক্তি সম্পন্ন সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

অন্যদিকে মসজিদে নেই কোনো ধরনের ইসলামিক বই। যে কয়েকটি কোরআনের বই দেখা যায়, সেগুলোও ধুলোবালিতে ভরে থাকে। সংরক্ষণের জন্য নেই পর্যাপ্ত পরিবেশ।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একসময় মসজিদে কোরআন-হাদিসসহ প্রায় ৩০০-৪০০ ইসলামিক বইয়ের লাইব্রেরি ছিল। এগুলো কাঠের আলমারিতে রাখার কারণে ২০০৫ সালের দিকে উইপোকা সব বই নষ্ট করে ফেলে। এরপর মসজিদে আর বইয়ের সংখ্যা বাড়ানো হয়নি। ফলে অল্প কিছু বই থাকলেও সেগুলো পড়ার অনুপযুক্ত। তাছাড়া বর্তমানে বড় দুইটি বইয়ের তাকে ৫০-৫৫টি কোরআন শরিফ ছাড়া বড় দুইটি তাক সম্পূর্ণ খালি পড়ে রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ ঘুরে দেখা যায়, মসজিদের মোট পাঁচটি টয়লেটের দুটোই তালা বদ্ধ। খোলা থাকা বাকি ৩টা থেকে চড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। টয়লেটের পাশে থাকা প্রস্রাবের স্থানগুলোরও একই চিত্র। এছাড়া ওজুর জন্য ব্যবহৃত কয়েকটি ট্যাপও নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। একই চিত্র মহিলাদের ওজুর ট্যাপগুলোতেও।

মসজিদের দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে।  এছাড়া মসজিদে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বলতে কিছুই নেই। পুরোনো ফ্যানগুলো কার্যত অকেজো হয়ে পড়েছে, যার ফলে গরমের সময় নামাজ আদায় করা মুসল্লিদের জন্য দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।

এছাড়াও নারীদের জন্য বরাদ্দকৃত নামাজের রুমের অবস্থাও উদ্বেগজনক। এখানে বাথরুমের অবস্থা খুবই নাজুক এবং অপরিস্কার। বাথরুমের দুর্গন্ধ প্রায়শই নামাজের রুমে পৌঁছায়, যা নারীদের জন্য একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। তাছাড়া, নারীদের জন্য বরাদ্দকৃত রুমে কোনো সিলিং ফ্যানও নেই যা আছে দুটি স্ট্যান্ড ফ্যান। এর ফলে মসজিদে নামাজ আদায় করতে আগ্রহী নারীরা প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, দুঃখজনক হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মসজিদের সংস্কার ও উন্নয়নের কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করে নি। মসজিদের ছাদ, দেয়াল ও ফ্লোর মেরামত, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, নামাজ আদায়ের স্থান সম্প্রসারণ এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সংস্কার এখন আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঢাবি শিক্ষার্থী আরিফ বলেন, ঢাবির কেন্দ্রীয় মসজিদের দিকে ঢাবি প্রশাসনের কোনো নজর নেই। আমি লাইব্রেরিতে পড়ার পাশাপাশি এখানে নামাজ পড়ি। ওয়াশরুম সমস্যা তো আছেই। মাঝে মাঝে ভেতরের সাউন্ড সিস্টেম সমস্যা করে। ওযু খানায় ট্যাবগুলোও কয়েকটা নষ্ট। কেউ দেখছে না এটা। এই সমস্যার দ্রুত সমাধান জরুরি। আর সবচেয়ে বড় কথা লাইব্রেরি, হল, ক্যাম্পাস সব কিছু আলোচনায় থাকলেও এতদিনের ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদটি নিয়ে কারও কোনো মাথা ব্যথা নাই।

কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে পড়তে এসে সকাল থেকে রাত অব্দি ৫ ওয়াক্ত নামাজই কেন্দ্রীয় মসজিদে পড়েন ঢাবি শিক্ষার্থী আরমানুল হক। তিনি বলেন, সমস্যাগুলো দীর্ঘদিনের। পুরোনো মসজিদ তাই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সমস্যা হবে। এখন যেমন কয়েকটি ফ্যান ঘুরে নাসহ নানা ছোট ছোট সমস্যা। তবে প্রশাসন ও মসজিদ কমিটির এ বিষয়ে আরও সজাগ দৃষ্টি রাখা জরুরি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম ইমদাদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন,আমাদের মসজিদে তেমন কোনো সমস্যা নেই। পাইপ লাইনে একটু সমস্যা হয়েছিল,সেটা নিরসন হয়ে গেছে। যখন কোনো অনুষ্ঠান থাকে তখন ওজুখানায় একটু পানি সল্পতা দেখা দেয়।বৃষ্টি হলে মসজিদের বারান্দার টিন থেকে পানি পড়ে, এটা শিঘ্রই ঠিক করা হবে। নতুন ওয়াশরুম তৈরির পরিকল্পনা চলতেছে। সম্পূর্ণ মসজিদটা রং করা খুবই প্রয়োজন।  আমরা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে দ্রুত রং করার ব্যবস্থা করবো।