২৩ আগস্ট ২০২৪, ২২:২৮

বন্যার্তদের জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিশ্রম করছে ঢাবি শিক্ষার্থীরা

বন্যার্তদের জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিশ্রম করছে ঢাবি শিক্ষার্থীরা  © সংগৃহীত

এ যেন কাজী নজরুলের সেই কবিতার মত ❝দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ,ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মত? কে আছ জোয়ান, হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যত। এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার।❞

আকস্মিক বন্যায় ২ দিন যাবৎ বিপর্যস্ত দেশের ১২ টি জেলা, পানি বন্দি ও ক্ষতির মুখে পড়েছেন প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ। ঠিক এমন সময়ই দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে বন্যার্তদের ত্রাণ সংগ্রহ করে বন্যা কবলিত অঞ্চলে পৌঁছে দিচ্ছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। না খেয়ে না ঘুমিয়ে হাড় ভাঙা খাটুনি খেটে সকলে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে দিবারাত্রি। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকা পরিদর্শন করে দেখা যায়, সকাল ১০ টা থেকে  রাত সাড়ে ৮ টা পর্যন্ত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে গণত্রাণ সংগ্রহ করেছে ঢাবি শিক্ষার্থীরা। গতকালের ন্যায় আজও সকাল থেকে রাত অবধি এ ত্রাণ সংগ্রহের কাজ করা হয়। এসময় হাজার হাজার মানুষ ভিড় করে টিএসসিতে। শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষার্থীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে জনতার থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছে, ত্রাণ গ্রহণ করেছে।

পরিদর্শন করে দেখা যায়, শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে ত্রাণ সংগ্রহ করছে। টিএসসির গেইটে একটি টিম ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ করেছে। তারা ত্রাণ সামগ্রীবাহী গাটি রিকশা গুলোকে প্রবেশ করিয়ে ত্রাণ সামগ্রী নামিয়ে অন্য পাশ দিয়ে বের করে দিয়েছে, একটি টিম টিএসসির প্রধান ফটকে নগদ অর্থ সংগ্রহে ছিলো। একটি টিম গাড়ি থেকে নামানো ত্রাণগুলো ভেতরের গেমস রুম ও ক্যাফেটেরিয়ার ভেতরে নেওয়ার দায়িত্বে ছিলো। অন্য একটি টিম সেখানে সব কিছু দেখা শোনা ও গোছানোর দায়িত্বে ছিলো।

দুপুর পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে ত্রাণ সংগ্রহ চললেও বিকেল বাধে বিপত্তি। হঠাৎ করেই বিকেলে ত্রাণ দাতাদের ভিড় বেধে যায়। একযোগে আসতে থাকে অনেক গাড়ি। এদিকে অর্থ সংগ্রহের স্বার্থে পাশেই কনসার্ট অনুষ্ঠিত হওয়ায় ভিড় লেগে যায় টিএসসির মোড়ে। গাড়ি চলাচল বিঘ্ন হচ্ছিলো। ত্রাণ সংগ্রহ করতে হিমশিম খাচ্ছিলো শিক্ষার্থীরা। তাদের কঠোর পরিশ্রমে আজকের মত সফল হয়েছে ত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচি। 

বিকেলে গণত্রাণ সংগ্রহে হাত লাগান বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহসহ অন্যান্য সমন্বয়কবৃন্দ। সেসময় একদল শিক্ষার্থীকে বাইরে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজে দেখা যায়। এবং টিএসসির প্রধান ফটক থেকে ক্যাফেটেরিয়া পর্যন্ত লাইন ধরে দাঁড়িয়ে হাত বদলের মাধ্যমে ত্রাণ সামগ্রী গুলো ভেতরে নেওয়া হয়। 

সকাল থেকে রাত অবধি এভাবেই পরিশ্রম করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তবে পরিশ্রমের এখানেই শেষ নয় বলে জানিয়েছেন তারা। স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষার্থী জাহিদ জানান, মাত্র একটা ধাপ শেষ হলো। একটু বিশ্রাম নিয়ে এগুলো প্যাকেটিং করে ট্রাকে তুলতে হবে। বিপুল পরিমাণে ত্রাণ সংগ্রহ করা হয়েছে। আরও লোকবল হলে ভালো হয়। 

আরেক শিক্ষার্থী আমির হামজা বলেন, আমরা সকাল থেকে এখানে কাজ করছি। আমি বিশ্রাম নিলে আমার জায়গায় অন্য কেউ কাজ করছে। কাজ থেমে নেই। আমাদের পরিশ্রমের থেকে শত শত মানুষের জীবন আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। 

শিক্ষার্থীরা বলছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে এই দেশ আবার স্বাধীনতা অর্জন করেছে। সুতরাং এই ব্যানারে ত্রাণ সংগ্রহে থাকবে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও জবাবদিহিতা। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে দেশে স্বৈরাচারের পতন ঘটেছে এবং এখন থেকে দেশে যেকোনো ক্রান্তিকালে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঢাল হয়ে দাঁড়াবে।