২১ আগস্ট ২০২৪, ১১:৫৭

চাঁদাবাজি ও ফাও খাওয়া ছাত্রলীগ নেতারা এখনো ঢাবির হলে

অভিযুক্ত তিন ছাত্রলীগ নেতা  © সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকায় ভ্রাম্যমাণ দোকান ও হোটেলগুলোতে নিয়মিত চাঁদা আদায় ও ফাও খাওয়ার অভিযোগ উঠেছে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হল ছাত্রলীগের ৩ নেতার বিরুদ্ধে। নিয়মিত চাঁদা না দিলে দোকান ও হোটেল মালিকদের শাসানো হয়, খাবার খাওয়ার পর টাকা চাইলে দেওয়া হয় হুমকি। এই তিন ছাত্রলীগ নেতা এখনো ঢাবির হলে অবস্থান করছেন বলে অভিযোগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগের তিন নেতা হলেন, মাজহারুল ইসলাম আকাশ, আসিফ আহমেদ সৈকত ও দেওয়ান বায়জিদ আহমেদ। আকাশ ও বায়জিদ ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতা, অন্যদিকে আসিফ আহমেদ সৈকত ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল ছাত্রলীগের কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

ঢাকা মেডিকেলের সামনে খাবারের দোকান বসানো একাধিক হোটেল মালিক এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, প্রতিনিয়ত শহীদুল্লাহ হলের ৭-৮ জন ফাও খায়, মন চাইলে তারা টাকা দেয়, না চাইলে দেয় না। টাকা চাইলে তারা রাতের বেলা এসে অকথ্যভাষায় গালাগালি করে এমনকি হোটেল বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয়। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অত্যাচারে একটি হোটেলের ৬ জন কর্মচারী চাকরি ছেড়ে নিজ এলাকায় চলে গেছেন। 

একটি হোটেলের ক্যাশিয়ারকে ছাত্রলীগ নেতা আসিফ আহমেদ সৈকতের ছবি দেখিয়ে ফাও খাওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে তিনি বলেন, নিয়মিত হোটেলে চাঁদাবাজি ও ফাও খাওয়ায় অগ্রগামী ছিলেন তিনি। এখন কিছুটা কম হলেও খাওয়া শেষে পুরোপুরি টাকা দেন না।

ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের মূল ফটকের বাইরে ৪-৫ জন দোকানীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ফুটপাতের দোকানগুলো থেকে দৈনিক ২০০-২৫০ টাকা নেওয়া হয়। বড় দোকানগুলো থেকে সপ্তাহে প্রায় ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করেন ছাত্রলীগ নেতারা। চাঁদা দিতে না চাইলে কোন দোকানি শান্তিতে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন না এবং দেওয়া হয় দোকান উচ্ছেদের হুমকি।

এদিকে ছাত্রলীগের এই তিন নেতা ঢাকা মেডিকেল মোড়ে অবস্থিত আনাস হোটেল প্রায় ৭০ হাজার টাকা চাঁদা নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। চাঁদা না দিলে কর্মচারীদের মারধর দোকান বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে কিছুদিন আগেও ছাত্রলীগ নেতারা এসে হোটেলের শাটার বন্ধ করে দেয় এবং ভেতরে থাকা কর্মচারীদের নানাভাবে হুমকি দেয় বলে জানা গেছে।

কর্মচারীদের ভাষ্যমতে, আনাস হোটেল চালুর পর থেকে প্রায় শতাধিক কর্মচারী চাকরি ছেড়ে চলে যান শুধুমাত্র ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার হয়ে। ঈদের সময় তারা মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে, গত দুই ঈদে তারা ৭০ হাজার টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হলের তৃতীয় বর্ষের পদার্থ বিজ্ঞানের এক শিক্ষার্থী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, চাঁদাবাজি করেই দিনের পর দিন পার করে আসছে শহীদুল্লাহ হল ছাত্রলীগের নেতারা। মেডিকেল মোড়, চানখারপুলের ভ্রাম্যমাণ দোকান ও হোটেলগুলো তারা এই চাঁদাবাজির আসর জমাতো। আসিফ আহমেদ সৈকত তাদের মধ্যে একজন। তারপরের সে হলে অবস্থান করছে। হল প্রশাসনকে অবগত করার মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত তিন ছাত্রলীগ নেতার (মাজহারুল ইসলাম আকাশ, আসিফ আহমেদ সৈকত ও দেওয়ান বায়জিদ আহমেদ) ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।

সার্বিক বিষয়ে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাবেদ হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ বিষয়ে এখনো কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পাইলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব।