১৭ আগস্ট ২০২৪, ১৮:১৬

চট্টগ্রামে ‘বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ভাবনা’ শীর্ষক নাগরিক সংলাপ অনুষ্ঠিত

নাগরিক সংলাপ   © টিডিসি ফটো

রাষ্ট্র সংস্কার ও মেরামতের মাধ্যমে নতুন এক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে চট্টগ্রামে আয়োজিত হয়েছে ‘বৈষম্যহীন রাষ্ট্রভাবনা’ নাগরিক সংলাপ। শনিবার (১৭ আগস্ট) চট্টগ্রামের জিইসিতে সমাজ ও রাষ্ট্রচিন্তা কেন্দ্র সেন্টার ফর সোশ্যাল এন্ড পলিটক্যিাল থট (সিএসপিটি) এর উদ্যোগে এই নাগরিক সংলাপের আয়োজন করা হয়েছে।

এতে ছাত্র-শিক্ষক, রাজনীতিবিদ ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিবৃন্দ এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়করা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনায় বক্তারা বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যকর ভূমিকায় করণীয়, দেশের অর্থনীতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়াসহ জাতীয় প্রতিষ্ঠানসমূহে বিরাজনীতিকরণ করে দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে মতামত ব্যক্ত করা হয়। 

সংলাপে সিএসপিটি'র পরিচালক অধ্যাপক ড. এনায়েত উল্যা পাটওয়ারীর সভাপতিত্বে প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন, মার্কেটিং বিভাগের ড. মো. ফুয়াদ হাসান, লোক প্রশাসন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মমতাজ উদ্দিন,  প্রাণরসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রেজওয়ানুল হক এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিক লতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শহিদুল ইসলাম। 

এছাড়াও বক্তব্য রাখেন, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ, লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. আমীর নসরুল্লাহ এবং দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মোজাম্মেল হক। এতে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়করা ও শিক্ষার্থীরাও বক্তব্য রাখেন। 

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, দেশের সকল স্থান থেকে দুর্নীতি রোধ করতে পারলেই আমরা একটি সুন্দর দেশ গড়ে তুলতে পারবো। বাংলাদেশের সব দল এবং মতের মানুষদের আহ্বান করবো, আপনারা দেশ সংস্কার করার জন্য যে সময়টুকু প্রয়োজন তা আমাদের এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দিবেন। সংস্কারের কাজ শেষ হলেই সরকার গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন দিবেন। 

সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, আমাদের সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো বৈষম্যবিহীন একটি রাষ্ট্র গঠন করা। দেশের প্রতিটি জায়গার বৈষম্য দূর না হওয়া পর্যন্ত ছাত্র-জনতার এ লড়াই চলবে। বক্তব্য রাখেন আরেক সমন্বয়ক মোহাম্মদ আলী। 

মানবাধিকার ও গণতন্ত্র বিষয়ে চবি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমরা উন্নয়নের অনেক গালগল্প করেছি। মানবাধিকারের গুরুত্ব দেইনি। নামে বেমানে অনেক সরকার দেখেছি। কিন্তু বৈষম্য দূর করতে পারিনি। সরকার জনগণের টাকায় চলা সরকারি সংস্থাগুলোকে ন্যাক্কারজনকভাবে ব্যবহার করেছে নাগরিকদের বিরুদ্ধে। ২০০৯ সালের পর থেকে যে হারে বিচারবহির্ভূত গুম ও খুন হয়েছে তা অবর্ণনীয়। 

তিনি আরও যোগ করেন, সরকার র‍্যাবকে দিয়ে এসকল কাজ করেছে। র‍্যাব নিয়ে আলোচনা শুরু হলে পুলিশ ও বিজিবি দিয়ে এসকল গুম খুন জারি রাখা হয়। তাদের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য আমাদের করের টাকা ব্যবহার করেছে। আমাদের গণতন্ত্রকে শেষ করে দেয়া হয়েছে। আমরা দেখেছি কীভাবে আবু সাইদকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা অধিকার আদায়ের জন্য ৩ বার স্বাধীন হয়েছি৷ ২৪ এর স্বাধীনতা হচ্ছে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করার স্বাধীনতা৷ এই রাষ্ট্রের বৈষম্য দূর করতে হলে সবার আগে মানবিকতার নিশ্চিত করতে হবে। 

অর্থনৈতিক সংকট ও বৈষম্য নিয়ে চবি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, যদি অর্থনীতির সংকটের কথা বলি, তাহলে আমাদের এ সংকট উত্তরণের জন্য কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা বাজারে গেলে বুঝতে পারি অর্থনীতির কি অবস্থা। ইতোমধ্যে মূল্যস্ফীতি ডাবল ডিজিট অতিক্রম করেছে। এর মূল ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষজন। স্বৈরাচারী হাসিনার বাসার কাজ করা ব্যক্তি ৪০০ কোটি টাকার মালিক। নেতাদের বাড়ি পুড়ে যাওয়ার পর ৫ কোটি টাকা পাওয়া যায়। এমতাবস্থায় বলা যায় দেশ চরম একটি অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে।  

শিক্ষানীতি নিয়ে চবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শহিদুল হক বলেন, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় রন্ধ্রে রন্ধ্রে সমস্যা। ১১-১২ বছরে যৌনশিক্ষার অবাধ জানাশুনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিবর্তনবাদ, ট্রান্সজেন্ডার এখানে সংযোজন করা হয়। এ ছাড়া ধর্ম শিক্ষাকে উপেক্ষা করা হয়েছে সব সময়। প্রস্তাবনা, কলাম, বক্তৃতার মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি তুলে ধরতে হবে। দেশে বৈশ্বিক শক্তির প্রভাব যাতে বৃদ্ধি না পায় সে বিষয়ে নিয়মিত লেখালেখি করতে হবে। নতুন কারিকুলামের ত্রুটিগুলো বিভিন্নভাবে সরকারের কাছে তুলে ধরতে হবে৷ 

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী বলেন, নিজের নেতাদের কাছ থেকে সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার আছে সব নাগরিকের এবং এটাও জনগণের মৌলিক অধিকার। কোরিয়ায় একটা প্রবাদ আছে, ‘তোমার হাতে যতগুলোই সুন্দর মুক্তা থাকুক না কেন, এগুলো যদি একসঙ্গে একই সুতোয় না গাঁথো, তাহলে কখনোই একটা সুন্দর গলার হার বানাতে পারবে না’। আমাদের দেশের কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা একাকী কোনো দলের বা গোষ্ঠীর পক্ষে সম্ভব না। এ জন্য সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। যারা একসঙ্গে কাজ করবে তাদের সামনেই রয়েছে সুন্দর ভবিষ্যৎ।