রাবিতে হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের মারধরের শিকার ছাত্রলীগ নেতা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলে ছাত্রলীগের নেতা সোহাগ রানাকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা গণধোলাই করেছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সোহাগ রানা বিভিন্ন সময় হলের শিক্ষার্থীদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে আসছিলেন, জোরপূর্বক সিট থেকে নামিয়ে দিতেন এবং সিট বাণিজ্য করতেন। এছাড়া, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী এক শিক্ষার্থীকে মারধরের পরিকল্পনা করার অভিযোগও তার বিরুদ্ধে উঠেছে।
বুধবার (১৪ আগম্ট) বিকেল পৌনে ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হল থেকে আটক হন ওই নেতা। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
ওই ছাত্রলীগ নেতার নাম সোহাগ রানা। তিনি শহীদ শামসুজ্জোহা হল শাখা ছাত্রলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং অর্থনীতি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বুধবার পৌনে চারটার দিকে শহীদ শামসুজ্জোহা হলে প্রবেশ করেন সোহাগ রানা। বিষয়টি জানাজানি হলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে হলের প্রধান ফটক আটকে দেয়। এ সময় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, জোরপূর্বক সিট থেকে নামিয়ে দেয়া, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও সিট বাণিজ্যের অভিযোগ তোলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
একপর্যায়ে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা তাকে গণধোলাই দিয়ে হলের বারান্দার পিলারে বেঁধে রাখেন। এ সময় তার ফোন থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী হলের এক শিক্ষার্থীকে শিবির ট্যাগ দিয়ে মারধরের পরিকল্পনার কথপোকথনও পান তারা। পরে হল প্রাধ্যক্ষ ও বিভাগের শিক্ষক এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের হলে ডেকে নেয় শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, এদিন বিকেল ৬টার দিকে হলে প্রবেশ করেন অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন খান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন। এর কিছুক্ষণ পরে সোহাগের বাঁধন খুলে দেয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে হলের গেস্টরুমে তাকে নিয়ে বসেন শিক্ষকরা। প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক একরামুল ইসলাম আসলে প্রাধ্যক্ষ কক্ষে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছাত্রলীগ নেতা সোহাগ শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে পরবর্তীতে হলে আসবেন না বলে মুচলেকা দেন।
মুচলেকাতে সোহাগ উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি শহীদ শামসুজ্জোহা হল ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক। বিগত সময়ে এই হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের হয়রানি, রুম থেকে নামিয়ে দেয়া, সীট বাণিজ্য ইত্যাদি অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। আমি অনুতপ্ত। আমি সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আগামীকে আমি কোনো ধরনের অপকর্মের সঙ্গে জড়িত হবো না কথা দিচ্ছি। যদি পরবর্তীতে কোনো ধরনের অপকর্মের সঙ্গে জড়িত হই সেক্ষেত্রে সব ধরনের আইনানুগ শাস্তি মাথা পেতে নেব। পরবর্তীতে আমি এই হলে অনুপ্রবেশের চেষ্টাও করব না।’