ঢাবির নতুন ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার হিসেবে আলোচনায় ৯ শিক্ষকের নাম
দেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে। এরপর রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পদ থেকে পদত্যাগের হিড়িক পড়ে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা পদত্যাগ করেছেন। সর্বশেষ শনিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদত্যাগ করেছেন।
পদত্যাগের ফলে শূন্য এসব পদে শিগগিরই নিয়োগের তোড়জোড় চলছে। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ ৪ পদে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে। এসব পদের মধ্যে রয়েছে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন), উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও কোষাধ্যক্ষ। এসব পদের মধ্যে ইতোমধ্যেই পদত্যাগ করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। গুঞ্জন রয়েছে দুই উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ও অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ পদত্যাগের।
এখন একটি সুন্দর বাংলাদেশ প্রত্যাশা করছে সবাই। আশা করি, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেটি করবেন। একইসঙ্গে শিগগির একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করে গণতান্ত্রিক উপায়ে গণতান্ত্রিক দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
এদিকে শীর্ষ এই ৪ পদে কারা নিয়োগে পাচ্ছেন- তা নিয়ে ইতোমধ্যেই আলোচনা-গুঞ্জন শুরু হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে; যাতে এগিয়ে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ জ্যেষ্ঠ শিক্ষক। এরমধ্যে থেকে চারজনকে নিয়োগ দিয়ে যেকোনো সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে- এমনটাই জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়-মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র।
জানা যায়, এসব পদে নিয়োগে পেতে এগিয়ে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের সাবেক আহ্বায়ক ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আরও পড়ুন: পদত্যাগ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য
রয়েছেন অর্ন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে জোর আলোচনায় থাকা ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি)-এর উপ-উপচার্য ও ঢাবির উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান। ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড, ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলস সোয়ানসি, এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে উচ্চ শিক্ষাগ্রহণ ও গবেষণা করা অধ্যাপক খান দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যে একাডেমিক ও কার্যকরী ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজমেন্টের উন্নয়নে অবদান রাখছেন।
এছাড়াও সাদা দলের বর্তমান আহ্বায়ক ও পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. লুৎফর রহমান; সাদা দলের বর্তমান যুগ্ম-আহ্বায়ক ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান; প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. মামুন আহমেদ; আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজিম উদ্দিন খান, ফিন্যান্স বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান এবং একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান রয়েছেন আলোচিতদের তালিকায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ ৪ পদে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে। এসব পদের মধ্যে রয়েছে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন), উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও কোষাধ্যক্ষ। এসব পদের মধ্যে ইতোমধ্যেই পদত্যাগ করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।
এর আগে গত বছরের ৪ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯তম উপাচার্য হিসেবে সাময়িক দায়িত্ব নেন অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। ৯ মাস পর আজ শনিবার তিনি পদত্যাগ করেছেন। তবে এখনও দুই উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদত্যাগ করেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী, দায়িত্ব বণ্টনের ভিত্তিতে ঢাবি উপ-উপাচার্য (প্রো-ভিসি) পদ দুটি। উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) এবং উপ-উপাচার্য (প্রশাসন)। উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) বিভিন্ন দায়িত্বের পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্বেও থাকেন। উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) বিভিন্ন দায়িত্বের পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে থাকেন।
আরও পড়ুন: মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ ৬ শিক্ষকের পদত্যাগ
বর্তমানে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) দায়িত্বে আছেন সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। ২০২২ সালের ১২ এপ্রিল দ্বিতীয় মেয়াদে ৪ বছরের জন্য তাকে এই নিয়োগ দেওয়া হয়।
চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন আওয়ামীপন্থী নীল দলের আহ্বায়ক ও ফার্মেসি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার। চার বছরের জন্য নিয়োগ দিয়ে সেদিন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। এদিকে, ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ লাভ করেছিলেন।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনা: গণতন্ত্রের আইকন যেভাবে একনায়ক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ এই ৪ পদে নিয়োগে পেতে আলোচনায় থাকা একাধিক জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের সঙ্গে কথা হয় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের। তবে তারা কেউই বিষয়টি নিয়ে সরাসরি বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, যেসব ছাত্র-জনতার কারণে দেশের অভ্যুত্থান হয়েছে, সেজন্য আমরা স্যালুট জানায়। এখন একটি সুন্দর বাংলাদেশ প্রত্যাশা করছে সবাই। আশা করি, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেটি করবেন। একইসঙ্গে শিগগির একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করে গণতান্ত্রিক উপায়ে গণতান্ত্রিক দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
আরও পড়ুন: কী হয়েছিল শেষ মুহূর্তে, যে পরিস্থিতিতে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা
শিক্ষকরা জানান, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ এসব পদে নিয়োগ দেবেন। সেটি যাকে দেওয়া হোক না কেন, পালন করার চেষ্টা করা হবে।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা মনে করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরে রয়েছে এমন কাউকে শিক্ষক হিসেবে চান। একই সাথে সৎ, যোগ্য এবং শিক্ষকতা-প্রশাসনে দক্ষ ব্যক্তিরাই যেন সুযোগ পান সে প্রত্যাশাও জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল পদত্যাগ করেছেন। তার ফাইল আমরা পেয়েছি। এখন সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবো। তার পদত্যাগপত্র গৃহীত হলে—নতুন উপাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে।