০৩ আগস্ট ২০২৪, ০৯:৪৬

এবার ছাত্রলীগ নেতাদের ‘গেস্টরুম’ করাচ্ছে ঢাবি শিক্ষার্থীরা!

ঢাবির এক হলে গেস্টরুমের দৃশ্য  © সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হলগুলোতে ছাত্রলীগ কর্তৃক গেস্টরুম নামক টর্চার সেলে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। দিনে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনটির মিছিল-মিটিংয়ে না গেলেই রাতে নানা ধরনের নির্যাতন-নীপিড়নের শিকার হতে হত সাধারণ শিক্ষার্থীদের। গেস্টরুমের ভয়ে হলে উঠে না বেশিরভাগ শিক্ষার্থী পাশাপাশি হল ছাড়তেও বাধ্য হয়েছে অনেক শিক্ষার্থী।  শিক্ষার্থীরা অভিযোগ দিলেও এ ব্যাপারে প্রশাসন ছিল চরম উদাসীন।

তবে এবার গণেশ উল্টে গেছে। নির্যাতনের সেই তীরই এবার ছাত্রলীগের দিকে। জানা গেছে, অনলাইনে মেসেঞ্জার গ্রুপ খুলে ছাত্রলীগ নেতাদেরকে যুক্ত করে নিজেদের সাথে হওয়া ভাষাগুলো ব্যবহার করে তাদেরকে গালাগাল করছেন বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা। একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, অনলাইনে তারা যে ভাষা ব্যবহার করছেন, ছাত্রলীগের গেস্টরুমে তাদের সঙ্গে এর থেকেও খারাপ আচরণ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এই মেসেঞ্জার গ্রুপগুলোর নাম দিয়েছে ভার্চুয়াল গেস্টরুম।

গ্রুপগুলোর একাধিক স্ক্রিনশট দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের হাতে এসেছে। সেখানে দেখা যায়, প্রতিটি হলের ছাত্রলীগের ক্যান্ডিডেট এবং সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকে যুক্ত করেও গালাগাল করছে শিক্ষার্থীরা। 

পড়ুন:  ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দামের ফেসবুক পেজ গায়েব

নাম না প্রকাশের হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের এক শিক্ষার্থী জানান, প্রথম বর্ষে হলে উঠার পর থেকে ছাত্রলীগের নির্যাতন শুরু হয়েছিলো। তার মধ্যে অন্যতম ছিলো গেস্টরুম। গালিগালাজ থেকে শুরু করে মারধর সব কিছুর শিকার হয়েছি। রাতের পর রাত দাড় করিয়ে গালাগালি মারধর করেছে। মুখ বুজে সহ্য করা ছাড়া কোনো উপায় ছিলো না। এখন সুযোগ পেয়ে ভার্চুয়ালি শিক্ষার্থীরা ফিরিয়ে দিচ্ছে তবে সেটা ১০ শতাংশও নয়।

এদিকে ভার্চুয়াল গেস্টরুমে বিভিন্ন স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে অনেক শিক্ষার্থী তাদের সাথে হওয়া নির্যাতনের বিষয়ে মুখ খুলছে। বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা মেসেঞ্জার গ্রুপখুলে তাদেরকে ভার্চুয়াল গেস্টরুম নিচ্ছে। এতে অনেক ছাত্রলীগ নেতা গ্রুপগুলো থেকে লিভ নিলেও আবার এড করে গালাগালি করছে শিক্ষার্থীরা। 

ছাত্রলীগ নেতাদের  ভার্চুয়াল গেস্টরুম প্রথমে শুরু করে মাস্টারদা সূর্য সেন হলে। তারপর একে একে হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হল, বিজয় একাত্তর হল, কবি জসীমউদ্দীন হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলসহ অন্যান্য হল। মেয়েদের হলেও ছাত্রলীগ দ্বারা যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদেরকে ভার্চুয়াল গেস্টরুম করাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। 

ভুক্তভোগী সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, ছাত্রলীগের সভা-সমাবেশে যেতে বাধ্য করা হয় তাদের। না গেলে জবাবদিহির জন্য ডাকা হয় গেস্টরুমে। গভীর রাতে হল থেকে বের করে দেওয়াসহ মারধরও করা হয়। গেস্টরুমে যেতে কেউ অনিচ্ছা প্রকাশ করলে ‘শিবির অপবাদ’ দিয়ে হল ছাড়তেও বাধ্য করা হয়। কোনও শিক্ষার্থীর ফেসবুকে প্রকাশিত মতও যদি বিপক্ষে যায়, তাহলেও নির্যাতনের শিকার হতে হয়। এছাড়া জুনিয়রদের প্রতি বিভিন্ন অসদাচরণ ও অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহারও করা হয় গেস্টরুমে।

পড়ুন: আজ নামছে ওয়ারফেজ, শিরোনামহীন, চিরকুট, মাইলস, জলের গান

বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তৌসিফুল ইসলাম লিখেছেন, হয়তো ভার্চুয়াল গেস্টরুম নিয়ে মজা করছি। কিন্তু এসব আসলে ছাত্রদের সঙ্গে বছরের পর বছর শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের জন্য ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। শিক্ষা নেব আমরা সবাই।