০২ আগস্ট ২০২৪, ০৮:৩৫

৬ ইমেরিটাস অধ্যাপক ও সাবেক ৪ ভিসির সঙ্গে বৈঠক ঢাবি প্রশাসনের

  © লোগো

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৬ ইমেরিটাস অধ্যাপক ও সাবেক ৪ জন ভিসির সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রশাসন। বৈঠকে কোটা আন্দোলন ঘিরে নিহতদের প্রতি শোক ও শ্রদ্ধা এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনার পাশাপাশি সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের নিন্দা, ঘটনাগুলোর দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য তদন্ত, দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া, গ্রেপ্তার ও আটক সব শিক্ষার্থীকে অবিলম্বে মুক্তির ব্যবস্থা করা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংহতি পুনঃস্থাপন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে বৈধ শিক্ষার্থীদের মেধার ভিত্তিতে আসন বণ্টন প্রভৃতি বিষয় আলোচনায় এসেছে।

বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ঢাবির ভিসি কার্যালয়সংলগ্ন লাউঞ্জে সাবেক ভিসি ও ইমেরিটাস অধ্যাপকদের নিয়ে এই বৈঠক হয়। বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী, অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ ও অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান অংশ নেন।

ছিলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক, অধ্যাপক রফিকুন নবী, অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক হাশেম খান ও অধ্যাপক আতিউর রহমান। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষে বৈঠকে ছিলেন ভিসি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, দুই প্রো-ভিসি অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ ও অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, প্রক্টর অধ্যাপক মাকসুদুর রহমান ও রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার।

সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মূলত ঢাবির শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন ঘিরে অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে গত ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পুলিশি অভিযানের পর সেদিন সন্ধ্যা নাগাদ আবাসিক হলগুলো থেকে শিক্ষার্থীদের চলে যেতে বাধ্য করা হয়। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের একধরনের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার ইমেরিটাস অধ্যাপক ও সাবেক ভিসিদের নিয়ে বৈঠক করল প্রশাসন।

বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে সাবেক দুজন ভিসি বলেন, বৈঠকে সাম্প্রতিক আন্দোলন ঘিরে নিহতদের প্রতি শোক ও শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। এত মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য তদন্তের কথা তারা বলেছেন। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ও আটক সব শিক্ষার্থীকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করার কথা বলেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যত দ্রুত সম্ভব খুলে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে হলে আসন বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আসন বরাদ্দের বিষয়টি যাতে কর্তৃপক্ষের হাতে থাকে, তা–ও বলা হয়েছে।

ক্যাম্পাসে বিভিন্ন মতের শিক্ষার্থীদের সহাবস্থানের পরিবেশ নিশ্চিত করতেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি বৈঠকে আহ্বান জানানো হয়েছে বলেও জানান সাবেক দুই ভিসি। তারা বলেন, সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্মানের জায়গাটা ক্ষুণ্ন হয়ে থাকলে দ্রুততার সঙ্গে তা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সব মিলিয়ে একটা গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে।

এ বিষয়ে ভিসি অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, বৈঠকে সাম্প্রতিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে পরিচালিত হবে, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। 

তিনি বলেন, আমরা শুধু বৈধ শিক্ষার্থীদের হলে থাকার ব্যবস্থা করার যে সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যে নিয়েছি, তা কার্যকর কীভাবে করা যায়, সেসব বিষয়ে সবার মতামত নিয়েছি। পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে কনসলিডেশন (সংহতি) কীভাবে রক্ষা করা যায়, তাও আলোচনায় এসেছে।

কোটা আন্দোলন ঘিরে ক্যাম্পাসে যা যা ঘটেছে, তা তিনি বৈঠকে ব্যাখ্যা করেছেন বলে জানান ভিসি। তিনি বলেন, বৈঠকে নিহতদের প্রতি শোক প্রকাশ করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করা হয়েছে। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করা হয়েছে। ঘটনাগুলোর চলমান বিচার বিভাগীয় তদন্ত যেন দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়, তা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।