ক্যাম্পাসে থেকে সেতু ভবন পোড়ানোর মামলায় রিমান্ডে জাবির আরিফ
কোটা সংস্কারপন্থী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় সেতু ভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বনানী থানায় করা মামলায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থী আরিফ সোহেলের ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, সেতু ভবনে আগুন লাগার সাথে আরিফ সোহেলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তিনি তখন তাদের সাথে ক্যাম্পাসে অবস্থান করছিলেন। তাকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৮ জুলাই আরিফ সোহেল ক্যাম্পাসে আন্দোলন অংশ নিয়েছেন। ওইদিন বিকাল ৩টা ৩৩ মিনিটে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব ফয়জুন্নেসা হল সংলগ্ন রাস্তা থেকে আরিফ সোহেলসহ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
পরে ৩টা ৪২ মিনিটে মিছিলটি উপাচার্যের বাসভবনের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে তারা। সমাবেশে আরিফ সোহেল ৩টা ৪৯ মিনিটে বক্তব্য রাখেন। সমাবেশ শেষে করে সেখান থেকে আন্দোলনকারীরা তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জমায়েত হওয়ার জন্য বিকাল ৪টা ৬ মিনিটে রওনা দেন।
এরপর আরিফ সোহেলকে ৪টা ২০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন রেজিস্ট্রার অফিসের সামনে আন্দোলনকারীদের সাথে কথা বলতে দেখা যায়। আন্দোলনকারীরা পুলিশের উপস্থিতি দেখলে বিকাল ৪টা ২৭ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন রাস্তা থেকে একটা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। সেখানেও জাবি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক আরিফ সোহেলকে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়।
তারপর ৪টা ৩৫মিনিটে আরিফ সোহেলসহ তাদের আ ফ ম কামাল উদ্দিন হল সংলগ্ন রাস্তায় দেখা যায়। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করলে তারা কয়েকটি অংশে বিভক্ত হয়। বিকাল ৬টা পর্যন্ত তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়কে মিছিল করতে দেখা যায়।
অন্যদিকে ওইদিন সেতু ভবনে আগুন লাগার বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার খালেদা ইয়াসমিন গনমাধ্যমেকে জানিয়েছিলেন, আমরা বিকাল ৫টার দিকে মহাখালী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ভবন ও বানানী সেতু ভবনে আগুনের খবর পাই। খবর পেয়ে দ্রুত চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
আরিফ সোহেলকে গ্রেফতারের বিষয়ে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী বলেন, আরিফ সোহেলকে তার নিজ বাড়ি থেকে গোয়েন্দা বাহিনী লোক গ্রেপ্তার করার পর প্রায় ৪০ ঘণ্টা আমরা তার কোন খবর পাইনি। তারপর শুনি তাকে সেতু ভবনে আগুন দেওয়ার মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে এবং ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আরিফ সোহেল সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন করছিল এবং প্রথম সারিতেই নেতৃত্ব দিচ্ছিল। যেটা ভিডিওতে সুস্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। এ থেকে বোঝা যায়, তাকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও হয়রানি মূলক মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ও এখন রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ডিবি পরিচয়ে জাবির কোটা আন্দোলনের সমন্বয়ককে তুলে নেওয়ার অভিযোগ
অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী বলেন, আমরাও চাই, সেতুভবনে যারা আগুন দিয়েছে তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। কিন্তু যার কোনো সম্পৃক্ততা নেই তাকে কেন গ্রেফতার করা হবে? শিক্ষার্থীরা কখনোই সেতু ভবনে আগুন দিতে পারে না। তাদেরকে পরিকল্পিতভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। আমরা চাই, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলেনের জাবি শাখার সমন্বয়ক আরিফ সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার সমন্বয়ক আহসান লাবিব বলেন, আমাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ আছে— ১৮ জুলাই সারাদিন আরিফ সোহেল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করছিল। তিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন করছিলেন। তাকে যে মামলা দেওয়া হয়েছে তার সম্পূর্ণ মিথ্যা ও সাজানো। আমরা তার নিঃশর্ত মুক্তি চাই। তা না হলে আমরা আরও জোরালো আন্দোলনে যাব।
প্রসঙ্গত, গত ২৯ জুলাই সেতু ভবনে হামলার ঘটনায় ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে আলোচিত ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আসিফ মাহতাব উৎস ও জাবি শিক্ষার্থী আরিফ সোহেলের ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে দেশজুড়ে নাশকতাকারীদের নজিরবিহীন তাণ্ডবের মধ্যে গত ১৮ জুলাই সেতু ভবনেও হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সেতু ভবনের কেয়ারটেকার রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে বনানী থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় সেতু ভবনের ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
এর আগে, গত ২৭ জুলাই (শনিবার) দিবাগত রাত সোয়া তিনটার দিকে সাদা পোশাকধারী আট-নয়জনের একটি দল আরিফ সোহেলকে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় তারা নিজেদের সিআইডি ও ডিবি পুলিশ পরিচয় দেয়। এর দুইদিন পর তাকে আদালতে হাজির করে ডিবি পুলিশ। সেতু ভবনে হামলার ঘটনায় বনানী থানায় করার মামলায় আরিফ সোহেলের ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।