৩০ জুলাই ২০২৪, ০৭:২২

চট্টগ্রামে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে আহত ১০,আটক ২০

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন  © টিডিসি ফটো

টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছুড়ে  চট্টগ্রাম নগরীর চেরাগী মোড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। এসময় পুলিশের লাঠিপেটায় দুই শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে দাবি করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে তিন পুলিশ সদস্যসহ ১০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। সেসময় ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে, নগরের বিভিন্ন এলাকায় মোবাইল তল্লাশি চালিয়ে কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ। 

সোমবার (২৯ জুলাই) বিকেল তিনটায় নগরীর জামালখান চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আগে থেকে পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনী সেখানে অবস্থান নেয়। তাই সেখানে জড়ো হননি শিক্ষার্থীরা। প্রেসক্লাব থেকে একটু দূরে তারা নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে জড়ো হতে থাকেন।

এর আগে জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনের নেতৃত্বে মিছিল বের করে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ। তারাও চেরাগী পাহাড় মোড়ে অবস্থান নেয়।

যুবলীগের নেতাকর্মীরা ব্র্যাক ব্যাংকের সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। সাড়ে তিনটার দিকে যুবলীগের মিছিল থেকে কয়েকজন গিয়ে শিক্ষার্থীদের হাত থেকে ফেস্টুন কেড়ে নিলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এসময় পুলিশ কয়েকজনকে আটক করে প্রিজন ভ্যানে তোলার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধস্তাধস্তি হয়।

পুলিশ একজনকে বেধড়ক পিটিয়ে প্রিজন ভ্যানে তুলে নেয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা প্রিজন ভ্যানের সামনে ও পেছনে ব্যারিকেড দিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরে পুলিশ জড়ো হয়ে তাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। শিক্ষার্থীরা পুনরায় নগরীর মোমিন রোডের কদম মোবারক এতিমখানা মার্কেটের সামনে রাস্তার পাশে বসে বিক্ষোভ করতে থাকে। 

একপর্যায়ে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এসময় পুলিশের ছুড়া সাউন্ড গ্রেনেডে কোতোয়ালি থানার এসআই মোশাররফ আহত হন। এরমধ্যে বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ আন্দরকিল্লা মোড়ে গিয়ে রাস্তার পাশে থাকা বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড দেয়। পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীরা। 

জানা গেছে, বেসরকারি সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিনিয়ারিং দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. ইমন, বাকলিয়া সরকারি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্র আজমাঈন করিম নিহাল, গাছবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী জুলহাজ হোসেন এবং চট্টগ্রাম আইন কলেজের শিক্ষার্থী মো. নজরুলকে  আন্দোলন থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই সংঘর্ষের ঘটনায়  সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দুই সাংবাদিক আহত হন। তারা হলেন, দৈনিক দেশ রুপান্তরের ফটো সাংবাদিক আকমল হোসেন ও নিউজ ২৪’র ক্যামেরা পারসন মো. আবু জাবেদ।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কাজী তারেক আজিজ বলেন, সভা-সমাবেশের জন্য শিক্ষার্থীরা পুলিশের কাছ থেকে অনুমতি নেয়নি। এছাড়া কারফিউ চলাকালে শিথিল থাকলেও কোনো সভা-সমাবেশ করা যায় না। কেউ আইন ভঙ্গ করে কর্মসূচি পালন করলে পুলিশ আইনিভাবে বিষয়টি মোকাবিলা করবে।

এই ঘটনায় ২০ জনকে আটক করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ২০জনকে আটক করা হয়েছে।  যাচাই-বাছাই শেষে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ সময় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে পুলিশের লাথি ও হেনস্তার শিকার হোন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের নিউজ কনট্রিবিউটর শেখ আব্দুল্লাহ ইয়াসিন। সে সময় ছাত্রলীগের একনেতা তাকে অশালীন অশ্রাব্য ভাষায় গালিও দেন। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনের পুলিশ কমিশনার মোঃ সাইফুল ইসলাম বিপিএম (বার)কে অবগত করা হলে তিনি  এই ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন বলে আশ্বস্ত করেন। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এমনটা হওয়ার কথা নয়। আমি খোজ খবর নিয়ে জড়িতদের প্রতি ব্যবস্থা নিবো।

এদিকে আনুমানিক সাড়ে ৪টার দিকে সমন্বয় খান তালাত রাফি ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বলেন, চট্টগ্রামে পুলিশ শিক্ষার্থীদের উপর টিয়ারগ্যাস ছুড়ছে। বোনদের উপর পুলিশি হামলা করা হয়েছে। সহযোদ্ধারা, সবাইকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।আমরা আজকের কর্মসূচী সমাপ্তি ঘোষণা করছি। 

অন্যদিকে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে নগরের কাজির দেউড়ি মোড়েও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়।

আন্দোলনকারী বলেন, শিক্ষার্থীদের হত্যা, গণগ্রেপ্তার ও তুলে নেওয়ার প্রতিবাদে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করছিলাম। এসময় যুবলীগের সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। পুলিশ বিনা অপরাধে আমাদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে।

নগরীর  কোতোয়ালি থানার সহকারী কমিশনার  অতনু চক্রবর্তী বলেন, দুই পক্ষ মুখোমুখি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিয়েছি।