রাত ১২টার পর রাবিতে হল গেইট বন্ধ থাকবে, অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন
সরকারি চাকরিতে প্রবেশে কোটা প্রথার বাতিল চেয়ে চলমান আন্দোলনের ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সকল হল গেইট রাত ১২ টা থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারের নেতৃত্বে একটি জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উপাচার্যের ব্যক্তিগত বাসভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে চলমান বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা এবং উদ্ভৃুত পরিস্থিতি মোকাবেলায় করণীয় ঠিক করতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। চলমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হরে কড়াকড়ির পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পুলিম মোতায়েনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবেলায় টহল বাড়াবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আসাবুল হক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে আলোচনা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আমরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ কাজ করছি। আপাতত ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে কাজ করবো। শিক্ষার্থীদের কোনো ধরনের উস্কানি এবং গুজবে কান না দেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এর আগে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) চলমান আন্দোলনে সারাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ঘটনায় ছয়জন নিহত হয়েছেন। সকাল থেকেই রাজধানীসহ সারাদেশে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ খবর পাওয়া যায়। নিহতের মধ্যে চট্টগ্রামে তিনজন, ঢাকায় দু্ইজন ও রংপুরে একজন রয়েছে।
আরও পড়ুন: কোটা আন্দোলন: সারাদেশে নিহত ৬
এদিন বেলা তিনটার দিকে চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়। এ সময় কয়েকজন অস্ত্রধারীকে গুলি করতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে হাতবোমার বিস্ফোরণও ঘটানো হয়। যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এ হামলা চালিয়েছেন বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন।
চট্টগ্রামে নিহত তিনজনের মধ্যে দুজনের পরিচয় জানা গেছে। তাঁরা হলেন মো. ফারুক (৩২) ও মো. ওয়াসিম (২২)। ফারুক একটি আসবাবের দোকানের কর্মচারী এবং ওয়াসিম চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ও কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক বলে জানা গেছে। অপরজনের পরিচয় জানা যায়নি। এ ছাড়া আহত অন্তত ২০ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
এদিকে আজ বিকেলে রাজধানীর ঢাকা কলেজের সামনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষের মধ্যে এক যুবক নিহত হয়েছেন। তাঁর মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নিহত ওই যুবককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর নাম-পরিচয় জানা যায়নি। এছাড়াও সন্ধ্যায় সিটি কলেজের সামনে থেকে রক্তাক্ত একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত নিহতের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: সব স্কুল কলেজ মাদ্রাসা ও পলিটেকনিক অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ
রংপুরেও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। নিহত আবু সাঈদ (২২) রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তাঁর বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা আন্দোলন সমন্বয় কমিটির সদস্য ছিলেন।
এর আগে রবিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধার নাতি-পুতিরা কোটা পাবে না, তো কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে?’ এমন বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদে মুখর হয়ে পড়েন।
এরপর সোমবার রাত থেকেই কোটা সংস্কার ইস্যুতে চলমান আন্দোলন নতুন রূপ পেতে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন হল থেকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। এরপর রাত দুইটার দিকে তারা হলে ফিরে যান এবং আজ সকালে থেকেই আন্দোলন নতুন দানা বাধতে থাকে। পরবর্তীতে বিকেলের দিকে ছাত্রলীগ আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালালে সংঘর্ষ ও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এখন পর্যন্ত নিহতের পাশাপাশি কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থীর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।