চবিতে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীকে হত্যার হুমকি
কোটা পদ্ধতি সংস্থারের দাবিতে আন্দোলনকারী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) নাট্যকলা বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী খান তালাত মাহমুদ রাফিকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একই বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের হৃদয় আহমেদ রিজভীর বিরুদ্ধে। অভিযোগ করে প্রক্টর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী। গতকাল রবিবার (৮ জুলাই) রাত সাড়ে দশটার দিকে বাবার নাম্বারে ফোন দিয়ে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অভিযোগকারী রাফি।
অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী উল্লেখ করেন, আমি খান তালাত মাহমুদ রাফি, নাট্যকলা বিভাগের ২০২২- ২৩ সেশনের নিয়মিত শিক্ষার্থী। সম্প্রতি চলমান বাংলাদেশে কোটা আন্দোলন অর্থাৎ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ব্যানারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমন্বয় করছি। গতকাল (৭ জুলাই) রাত আনুমানিক ১০টা ২৫ মিনিটে অজ্ঞাত নাম্বার থেকে আমার বাবার নাম্বারে কল দিয়ে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। বলা হয় আপনার ছেলেকে যদি কোটা আন্দোলন থেকে সরে যেতে না বলেন তাহলে হয়ত আপনার ছেলেকে আর পাবেন না, তার লাশটা পাবেন। দেখা যাবে যে কোথাও না কোথাও মেরে ফেলে রাখা হয়েছে। পরে লাশটা এম্বুলেন্সে করে পাঠানো হবে। পরে আব্বু পরিচয় জানতে চাইলে লোকটি বলে, “আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। ক্যাম্পাসেই থাকি।” এটা বলে ফোন কেটে দেয়। এমতাবস্থায় আমি এখন ক্যাম্পাসে ও ক্যাম্পাসের বাইরে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেছি।
জানতে চাইলে রাফি বলেন, এ বিষয়ে আমি প্রক্টর বরাবর অভিযোগপত্র দিয়েছি। আব্বুকে স্থানীয় থানায় জিডি করতে বলেছি। আমিও নিরাপত্তা চেয়ে হাটহাজারী থানায় জিডি করব।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে হুমকিদাতা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপগ্রুপ চুজ ফ্রেন্ড উইথ কেয়ার (সিএফসির) অনুসারী। থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হলে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও সিএফসির উপগ্রুপের নেতা সাদাফ খান বলেন, ‘যার নামে অভিযোগ করা হয়েছে তাকে আমি চিনিই না। আন্দোলন যে কেউ করতে পারে। কারো ব্যক্তিগত বিষয়ের দায় একান্তই ওই ব্যক্তির। ছাত্রলীগের সাথে এর কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
জানতে চাইলে ভুক্তভোগীর বাবা বলেন, ‘কাল রাতে একটি নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে বলে আপনার ছেলেকে কোটা আন্দোলন থেকে সরে যেতে বলেন। তাহলে হয়ত লাশটা পাবেন। অ্যাম্বুলেন্স করে পাঠানো হবে। পরিচয় জানতে চাইলে সে ফোন কেটে দেয়। আমি চাই আমার ছেলেকে যেন নিরাপত্তা দেওয়া হয়।’
হুমকি দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন অভিযুক্ত শিক্ষার্থী রিদয় আহমেদ রিজভী বলেন, আমি রাফিকে ডিপার্টমেন্টের ছোটভাই হিসেবে চিনি। তার বাবাকে ফোন দিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগটি মিথ্যা। রাফি একদিন এসে পরিচিত হয়েছিল আমার সাথে। আমি এখনো বাড়িতে অবস্থান করছি। তাকে হত্যার হুমকি দিবো কেন? আমি এবিষয়ে জানি না। রাফি নিজেও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের একজন সদস্য। মুক্তিযুদ্ধ কোটা আমাদের অধিকার যা হাইকোর্ট আমাদের দিয়েছে, সরকার দেয়নি। আমি এই কোটার কোনো বিরোধিতা করি না।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. অহিদুল আলম বলেন, ‘ছেলেটা অভিযোগপত্র দিয়েছে। যেহেতু তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে এটা ক্রিমিনাল কেস হয়ে গেছে। এটা পুলিশ তদন্ত করবে। আমরা ভুক্তভোগীকে থানায় জিডি করতে বলেছি।’