বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে: উপাচার্য
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেছেন, একটি দেশ বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টি করে। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয়—যেটি মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে। পৃথিবীতে এমন দ্বিতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পাওয়া যাবে না, যে বিশ্ববিদ্যালয় একইভাবে জ্ঞানের জগৎ সমৃদ্ধ করছে ও জাতীয় জীবনে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষ্যে সোমবার (১ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাবির ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে ‘তরুণ প্রজন্মের দক্ষতা বৃদ্ধিতে উচ্চশিক্ষা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উপাচার্য বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু জ্ঞান বিতরণে সীমাবদ্ধ নয়, জাতীয় জীবনে যখনই প্রয়োজন হয়েছে তখনই এই বিশ্ববিদ্যালয় ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। যখনই প্রয়োজন হয়েছে তখনই জাতির পিতার নেতৃত্বে ছয় দফার নেতৃত্ব দিয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা '৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছে। সর্বোপরি আমাদের জাতীয় জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি।
দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন এবং দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনন্য অবদান তুলে ধরে উপাচার্য বলেন, আত্মনির্ভরশীল, আত্মমর্যাদাশীল ও স্বাবলম্বী জাতি হিসেবে গড়ে উঠতে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, দক্ষতা-ভিত্তিক, আধুনিক, প্রায়োগিক ও জনকল্যাণমুখী শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে আমরা তরুণ প্রজন্মকে আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত করতে চাই। শিক্ষার্থীদের হতাশামুক্ত শিক্ষা জীবন নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যেই প্রথম বর্ষের সকল অসচ্ছল শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে তিনি অ্যালামনাই ও ইন্ডাস্ট্রির সহযোগিতা কামনা করেন।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় দেওয়া বক্তব্যে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাইদের উপর ক্ষোভ ঝাড়েন। অ্যালামনাইদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা যে কথাগুলো বলেন, সেগুলো বাস্তবায়নও করেন। আপনাদের উপর আমাদের নির্ভরশীলতা রয়েছে। আমরা চাই, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয়কে সহযোগিতা করবে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাইরা জাতীয় জীবনে সর্বত্র বিচরণ করছেন। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের যে উল্লেখযোগ্য অবদান থাকা দরকার, সেটি আমরা কখনো পাই না।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল ২০৩৫ সালের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে উচ্চতর গবেষণাধর্মী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ২০৪৫ সালের মধ্যে গবেষণা-প্রধান ‘আর আই’ ক্যাটাগরির বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই ‘অ্যাকাডেমিক মাস্টার প্ল্যান’ এবং ‘অ্যাকাডেমিক ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
জাতীয় নেতৃবৃন্দ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, গবেষক, অ্যালামনাই, ব্যবসায়ীসহ সকলের সহযোগিতায় গবেষণা, উদ্ভাবন ও দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বের শিক্ষা মানচিত্রে অনন্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
১৯২১ সালের এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো ‘তরুণ প্রজন্মের দক্ষতা বৃদ্ধিতে উচ্চশিক্ষা’। দিবসটি উপলক্ষ্যে ক্যাম্পাসে দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে ছিল পতাকা উত্তোলন, পায়রা উড়ানো, বেলুন উড্ডয়ন, কেক কাটা, থিম সং পরিবেশন, শোভাযাত্রা এবং আলোচনা সভা।
সকাল ১০টায় টিএসসির পায়রা চত্বরে জাতীয় সংগীত পরিবেশন, জাতীয় পতাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও হলসমূহের পতাকা উত্তোলন, পায়রা উড়ানো, বেলুন উড্ডয়ন, থিম সং পরিবেশন এবং কেক কাটার মধ্য দিয়ে দিবসটির কর্মসূচি শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
এর আগে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও অ্যালামনাইবৃন্দের অংশগ্রহণে স্মৃতি চিরন্তন চত্বর থেকে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন।
সকাল সাড়ে ১০টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে ‘তরুণ প্রজন্মের দক্ষতা বৃদ্ধিতে উচ্চশিক্ষা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য বেনজীর আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এ এফ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সাদ্দাম হোসেন। রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন।