সার্বজনীন পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে চবি শিক্ষক সমিতির অর্ধদিবস কর্মবিরতি

সার্বজনীন পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে চবি শিক্ষক সমিতির অর্ধদিবস কর্মবিরতি
সার্বজনীন পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে চবি শিক্ষক সমিতির অর্ধদিবস কর্মবিরতি  © সংগৃহীত

সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। মঙ্গলবার (২৫ জুন) থেকে আগামী ২৭ জুন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মোট তিন দিন চলবে অর্ধদিবস কর্মবিরতি এবং ৩০ জুন রবিবার পালিত হবে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি। 

মঙ্গলবার (২৫ জুন) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ কর্মবিরতি অনুষ্ঠিত হয়।

কর্মবিরতির জন্য শিক্ষকগণকে কোনো ধরনের শ্রেণী কার্যক্রমে অংশ নিতে দেখা যায়নি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমে ছিল অচলাবস্থা। 

প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে বিভিন্ন  পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ। বৈষম্যমূলক এ পেনশন বাতিল না হলে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। 

সমিতির নেতৃবৃন্দ দাবি করেন, শিক্ষকগণ একটা জাতি গঠনে ভূমিকা রাখে। কিন্তু সার্বজনীন পেনশন তাদের উপরেই বৈষম্যের আঘাত। এতে শিক্ষকগণ কী জাতি গঠনে ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে প্রশ্ন তুলেন তাঁরা। এই বৈষম্য ও নিপীড়ন মূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান। 

এসময় চবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এ. বি. এম. আবু নোমান বলেন, বৈষম্যমূলক এ 'প্রত্যয় স্কিমে' নয় আমরা বরং স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মের মধ্যেই থাকতে চাই। আমাদের ন্যায্য দাবি পূরণ করতে হবে। তা-না হলে আমরা সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাবো।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৩ এর আইন অনুযায়ী চলে। নতুন নিয়মে শিক্ষকদের অধিকার ক্ষুন্ন হচ্ছে। এই নিয়মে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক যেতে রাজি নয়। এটি বাতিল করে প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তন করতে হবে। 

দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে বলে জানান সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান। সমিতির সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলা উদ্দিনসহ সমিতির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। এসময় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকগণ উপস্থিত ছিলেন।

চলতি বছরের ১৩ মার্চ, ২০২৪ সরকার সার্বজনীন পেনশনের প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে বলা হয়, আগামী ১ জুলাই থেকে যেসকল শিক্ষক, কর্মকর্তা কর্মচারী চাকরিতে যোগ দিবেন তাদের জন্য সার্বজনীন পেনশন স্কিমের 'প্রত্যয় স্কিম' বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাদের ক্ষেত্রে উক্ত প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার জন্য বিদ্যমান অবসর সুবিধা সংক্রান্ত বিধিবিধান প্রযোজ্য হবে না।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এই প্রজ্ঞাপনকে বৈষম্যমূলক আখ্যা দিয়ে সেটা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছে চবি শিক্ষক সমিতি।

এর আগে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহ্বানে প্রায় প্রতিটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে গত ২৬ মে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় পূর্বঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে আজ অর্ধদিবস কর্মবিরতিতে যায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকগণ।

এদিন সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত ক্লাস বর্জন করা হয়। একইসাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষকগণ একযোগে চবির প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধনসহ মৌন মিছিলের আয়োজন করে। 

প্রসঙ্গত, ঘোষণা অনুযায়ী, আগামীকাল ২৬ ও ২৭ জুনও অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন শিক্ষকরা। এছাড়াও, ৩০ জুন শিক্ষকরা পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন। পরীক্ষাসমূহ কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে। এরপরও দাবি আদায় না হলে আগামী ১ জুলাই থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।

 


সর্বশেষ সংবাদ