চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালে ২৬ লাখ টাকা নয়ছয়, ফেরত দিতে গড়িমাসি ঢাবি অধ্যাপকের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আরবি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফের বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান থাকাকালীন বিভাগের ফান্ড থেকে ২৬ লাখেরও বেশি টাকা অবৈধভাবে উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে বিভাগ কর্তৃক গঠিত একটি তথ্যানুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২ বছরের ব্যবধানে আত্মসাৎকৃত অর্থ থেকে মাত্র ৮ লাখ ৩৮ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন আরবি বিভাগের সাবেক এই চেয়ারম্যান। বাকি টাকাগুলো ফেরত দিতে গড়িমাসির অভিযোগ উঠেছে।
বিভাগ প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী, ২০১৬ সালের জুন থেকে ২০২০ সালের ২১ মার্চ পর্যন্ত আরবি বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউসুফ। ২০২০ সালের ২২ মার্চ অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল কাদির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের এক বছরের মধ্যেও তিনি বিভাগের ব্যাংক হিসেব বুঝে না পেয়ে বিভাগের সোনালি ব্যাংকের হিসেবের বিবরণ সংগ্রহ করেন। বিবরণীতে অসংগতি লক্ষ্য করলে তা বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটির সভায় উত্থাপন করা হয়। অ্যাকাডেমিক কমিটিতে পর্যালোচনা করে তৎকালীন চেয়ারম্যানকে সমন্বয়ক করে চার সদস্যের একটি যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিভাগের ফান্ড হতে অধ্যাপক ইউসুফের বিরুদ্ধে ২৬ লাখ ৪১ হাজার ৯১২ টাকা উত্তোলনের সত্যতা মিলেছে বলে জানানো হয়েছে। তদন্ত কমিটির তথ্যানুযায়ী, তিনি ২১ টি চেকের মাধ্যমে ১৭ লাখ ৮৮ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন যার কোন তথ্য তিনি হিসেব বইতে উলেখ করেননি। এর মধ্যে চেয়ারম্যান থাকার সময় ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা পুনরায় বিভাগের অ্যাকাউন্টে জমা করেন।
এছাড়াও, জেনারেটরের নামে ভুয়া বিল, চেয়ারম্যান থাকাকালে চেয়ারম্যানের মাসিক ১০০০ টাকা যোগাযোগ ভাতা গ্রহণ করা-যা সম্পূর্ণ অননুমোদিত, অ্যাকাডেমিক কমিটির সভা না করেও সভার আপ্যায়ন খরচ দেখানো, একই খরচ একাধিকবার উল্লেখ করাসহ নানা খরচ দেখিয়ে আরো টাকা তিনি বিভাগের ব্যাংক হিসেব থেকে তুলে নেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিভাগের একাধিক শিক্ষক জানান, অর্থ আত্মসাৎ এর বিষয়টি জানাজানি হলে ৮ লাখ টাকা জমা দিয়ে বাকি টাকা না দিতে বিভিন্নভাবে গড়িমসি করেন।
এ বিষয়ে বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল কাদির দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, তিনি বিভাগে ২টি চিঠি জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে একটিতে তিনি সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। এখন ক্ষমা চাইলেই কি হিসাব নিকাশ শেষ হয়ে যাবে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং বিভাগের শিক্ষক দিয়ে হিসাব নিকাশ করতে বলেন। বাইরের ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক দিয়ে কেনো হিসাবনিকাশ করতে হবে। এটা আমার বোধগম্য নয়।নিয়ম মোতাবেক হিসাব নিকাশ করা হয়েছে।
অভিযুক্ত শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউসুফ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমি ডিপার্টমেন্টের প্রধান, ডিন এবং প্রো-ভিসি (শিক্ষা)-কে একটা চিঠি দিবো যে কী কারণে আমার হিসাবগুলো ফাইনাল করা হয়নি। আমার বিরুদ্ধে যে যাচাই- বাছাই কমিটি গঠন করা হয়েছে সে সম্পর্কে আমার কথা হলো, যিনি কমিটি গঠন করেছেন তিনি আমার ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান। যিনি আমার বিচার করবেন তিনি কিভাবে যাচাই-বাছাই কমিটির প্রধান হন।
এ কমিটি নিরপেক্ষ হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ কমিটি নিরপেক্ষ হয়নি। আমার বিরুদ্ধে তারা ২৬ লাখ টাকার যে তথ্য দিয়েছে, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগতো দেয়া উচিত। এটা তারা আমাকে না দিয়ে একতরফা হিসাব করেছেন। তারা আমার বিরুদ্ধে যে কাজটি করছেন, আমি চাইলে তাদের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করতে পারি।
তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি ডিন মহোদয়কে জানিয়েছি, তিনি ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যানসহ সিনিয়র অধ্যাপকদের কে নিয়ে হিসাবের সমাধান করতে বলেন।
তিনি আরো বলেন, প্রফেসর এ বি এম সিদ্দিকুর রহমান নিজামী চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় তার হিসাবনিকাশ যাচাইয়ের জন্য প্রফেসর আব্দুল কাদেরকে আহ্বায়ক করে সাবেক উপাচার্য প্রফেসর আখতারুজ্জামান একটি যাচাই বাছাই কমিটি গঠন করে। প্রফেসর আব্দুল কাদের পরবর্তীতে এই কমিটির কার্যক্রমে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। অথচ সেখানে কমিটি হয়ে আছে। সেই হিসাবটাও আমার মনে হয় সামনে আসা দরকার।
আরবি বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. যুবাইর মুহাম্মদ এহসানুল হক বলেন, বিষয়টি এখনও চলমান রয়েছে। তিনি কিছু টাকা ইতোমধ্যে ফেরত দিয়েছেন।