জাবিতে চাঁদার দাবিতে ভবন নির্মাণে ছাত্রলীগের বাধা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন তিনটি ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

সোমবার (০৩ জুন) বিকাল চারটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। জানা যায়, এদিন বিকালে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক টাওয়ারের নির্মাণাধীন স্থানে গিয়ে প্রকৌশলী ও শ্রমিকদের বলেন, 'কাজ করো বড় ভাইদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করা লাগে না? ভাইদের সঙ্গে কথা না বলা পর্যন্ত কাজ বন্ধ থাকবে।' এ সময় তারা শ্রমিকদের মারধর ও ভয়ভীতি দেখালে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে দেন। এছাড়া গেস্ট হাউস ও সুইপারদের জন্য নির্মিতব্য ভবনের কাজ বন্ধ করে দেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।

তবে মঙ্গলবার (৪ জুন) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছাত্রলীগ নেতাদের বাধার মুখেই আবারও কাজ শুরু করেছেন শ্রমিকরা। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান তারা।

এদিকে প্রকল্প অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, তিনটি ভবনের মধ্যে দু'টি ভবনের কাজ করছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দুই সাবেক সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাইফুর রহমান সোহাগের মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মারধরের শিকার এক কর্মচারী বলেন, 'বিকেল চারটার দিকে কয়েকজন এসে আমাদের মারধর করে। এ সময় সেখানে দায়িত্বরত প্রকৌশলীকেও মারধর করে। তারা আমাদের কাজ বন্ধ রাখতে বলে। তারপরও কাজ চলতে থাকে৷ পরে ঢালাই গাড়ি আসলে সেগুলো তারা ফিরিয়ে দেয়৷'

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নির্মাণাধীন ভবনের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা বলেন, সোমবার বিকেল চারটার দিকে কয়েকজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবনের স্থলে আসেন। এ সময় তারা প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলতে চায়। এছাড়াও ভাইয়ের সাথে কথা না বলা পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখতে বলে। যারা এসেছিল তাদের কাওকে চিনি না তবে তাদের সবাইকে দেখে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী মনে হচ্ছিল।'

তবে ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, জাবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাব্বির হোসেন নাহিদ, সাজ্জাদ শোয়াইব চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান জয় ও অর্থ সম্পাদক তৌহিদুল আলম তাকিদের নেতৃত্বে ৪৫তম ব্যাচের কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা সেখানে যান।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে সাব্বির হোসেন নাহিদ ও মেহেদী হাসান জয়ের মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলেও তারা রিসিভ করেননি।

জাবি ছাত্রলীগের অর্থ সম্পাদক তৌহিদুল আলম তাকিদ বলেন, 'আমি তখন সেন্ট্রাল ফিল্ডে ছিলাম। আমি এ ধরনের কোনো কাজে জড়িত না। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন।'

আরও পড়ুন: অফিস চলাকালে জাবির উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের ঘুমের ৪টি ছবি ভাইরাল

চলমান উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন বলেন, 'শিক্ষার্থীদের একটি দল আমাদের চলমান কাজের তিনটা এরিয়ায় গিয়ে কর্মরত ব্যক্তিদের গালাগালি ও মারধর করেছে। তারা বলেছে যে প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলতে চায়। এভাবে হুটহাট করে এসে কর্মচারীদের মারধর করা ন্যাক্কারজনক। তাদের কোনো দাবি দাওয়া থাকলে বলতে পারে, কিন্তু কাজকাম বন্ধ করে দেওয়া, মারধর করা খুবই খারাপ বলে মনে করি। আপনারা সাংবাদিকরা জানেন এ ধরনের কর্মকাণ্ড কারা করতে পারে।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাবি ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, 'এই কাজ কারা করেছে তা জানি না। তবে ছাত্রলীগের পরিচয়ে কেউ এ কাজ করে থাকলে চরম অন্যায় করেছে। এমন কাজ কেউ করলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'

 

সর্বশেষ সংবাদ