বন্ধ ক্যাম্পাসে গাছ কাটার মহোৎসব জাবিতে
গ্রীষ্মকালীন ছুটি ও ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে গত ৩০ মে থেকে বন্ধ ঘোষণা করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। তবে বন্ধ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে ভবন নির্মাণের জন্য চলছে গাছ কাটার মহোৎসব । কর্তৃপক্ষের এমন আচরণের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা।
রবিবার (২ জুন) বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবন সংলগ্ন গাছ কাটার স্থানে এ মানববন্ধন করা হয়। এর আগে সকাল ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা এক্সটেনশন ও নতুন প্রশাসনিক ভবনের পাশে কাটা হয় প্রায় দুই শতাধিক গাছ। এই দুই ভবন নির্মাণে আরও চার শতাধিক গাছ কাটা হবে বলে জানা গেছে।
মানববন্ধনে বর্তমান প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারিতা উল্লেখ করে তাদের ব্যর্থতার বর্ণনা ও মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন ছাড়াই গাছ কাটার প্রতিবাদ জানান আন্দোলনকারীরা।
ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদে সভাপতি আলিফ মাহমুদ বলেন, ‘ছুটি হলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের গাছ কাটার সংস্কৃতি বহু পুরোনো। এবারেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। শিক্ষার্থীরা হলে নেই এই সুযোগে গাছ কাটার উৎসবে মেতেছে তারা। আজকে গাছ কাটার সময় চারুকলা বিভাগ নিজেদের বিভাগের শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। ভবন নির্মাণে আমাদের আপত্তি নেই, আমাদের একটাই দাবি মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে ভবন নির্মাণ করা হোক।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভবন প্রয়োজন, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে ভবন নির্মাণ চাই না। আমরা উন্নয়নের বিপক্ষে নই কিন্তু আমরা চাই উন্নয়ন হোক মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের মাধ্যমে।’
এদিকে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, চারুকলা অনুষদের ভবন নির্মাণের জন্য সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আল বেরুনী হলের এক্সটেনশন অংশে দাঁড়িয়ে ছিলেন চারুকলা বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তাদের সহায়তায় ও প্রত্যক্ষ উপস্থিতিতে আন্দোলনের মুখে বন্ধ থাকা চারুকলা অনুষদের ভবন নির্মাণের জন্য প্রায় শতাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়।
অন্যদিকে শিক্ষকরা সর্বসম্মতিক্রমে কলা অনুষদের পাশেই ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিলেও তাদের মতামতকে অগ্রাহ্য করে নতুন রেজিস্ট্রার ভবনের পাশে ভবন নির্মাণের জন্য প্রায় দুই শতাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। কেটে ফেলা গাছগুলোর ঠিক পাশেই অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় লেক।
আরও পড়ুন: আমেরিকায় পিএইচডি করতে এসে কি পাপ করেছি, প্রশ্ন কুবি শিক্ষকের
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক খো. লুৎফল এলাহী বলেন, ‘এভাবে ছুটির মধ্যে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির সুযোগে ভবন নির্মাণ করা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু। কলা ও মানবিক অনুষদে আমাদের চাওয়া ছিল ভবনটি বর্তমান ভবন সংলগ্ন স্থানে করার। এতে ভবন কিছুটা ছোট হলেও পরিবেশ ও প্রাণ প্রকৃতির তেমন ক্ষতি হতো না। কিন্তু তারা সেদিকে কর্ণপাত না করে লেকের পাশে যে স্থান নির্ধারণ করেছে তাতে তৃতীয় প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের পথকে উন্মোচন করলো।’
এ বিষয়ে চারুকলা অনুষদ ভবনের প্রকল্প পরিচালক ও চারুকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এম এম ময়েজ উদ্দিন বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের নির্ধারিত জায়গাতেই ভবন নির্মাণ করছি। পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো কিছুই আমরা করছি না। এছাড়া যে গাছগুলো কাটা হয়েছে সেই গাছগুলো আমরা নিজেরাই রোপণ করে পরিচর্যা করব। সকল অংশীজনদের সুপারিশকে গ্রহণ করে এবং তাদের নিয়ে আমরা একটা টিম তৈরি করব যাতে তারা আমাদের অগ্রগতিতে লক্ষ্য রাখতে পারেন।