ভুয়া পরিচয়ে ২ বছর চবিতে ক্লাস করেছেন তিনি, ছাত্রলীগের রাজনীতিও করেছেন
- চবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৪, ০১:১৬ AM , আপডেট: ৩১ মে ২০২৪, ০১:৩৮ AM
ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলেও দুই বছর ধরে (চবি) শিক্ষার্থী পরিচয় দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে ক্লাস করে আসছেন ইমন হাসান রাব্বি নামের এক তরুণ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি শনাক্ত করার পর ক্যাম্পাস ছেড়েছেন ওই শিক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার (৩০ মে) বেলা ৩টায় বিভাগের ২০২ নম্বর কোর্সের ক্লাস টেস্ট (পরীক্ষা) দিতে গেলে দায়িত্বরত শিক্ষক বিষয়টি বুঝতে পারেন। এসময় ওই শিক্ষক পরীক্ষা শেষে বিভাগীয় অফিস কক্ষে তাকে দেখা করতে বললেও তিনি পালিয়ে যান।
জানা যায়, গত ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়ায় চবি ছাত্রলীগের দুই উপগ্রুপ। এই ঘটনায় ছাত্রলীগের ২৩ কর্মীকে শোকজ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি। এ ঘটনায় জড়িত গ্রুপ দুটি হলো ‘বিজয়’ ও চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি)।
ইমন বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুর রব হলে থাকতেন এবং সিএফসি গ্রুপের একজন কর্মী হিসেবে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন। সংঘর্ষের ঘটনায় শনাক্তদের শোকজের নোটিশ পাঠাতে গেলে ওই ভুয়া শিক্ষার্থীর নাম, আইডি কিছুই মিলছিল না বলে জানান তদন্ত কমিটি। তখন তারা বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য চবির একাডেমিক সেকশনে খোঁজ নিয়ে দেখে ওই নামের কোনো শিক্ষার্থীর নাম বা আইডি নেই, তিনি ভুয়া শিক্ষার্থী হিসেবে দুই বছর ক্লাস-পরীক্ষা দিচ্ছেন।
তার সহপাঠী সূত্রে জানা যায়, ইমন প্রথম বর্ষ থেকেই নিয়মিত ক্লাস করে আসছে। এমনকি বিভাগের প্রতিটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতো তিনি। এছাড়া ট্যুরগুলোতেও অংশগ্রহণ করতো। প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করেও রেজাল্ট প্রকাশ হলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানান, তার রেজাল্ট সিজিপিএ-৩.৩৮ হয়েছে।
জানা গেছে, রাব্বির গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁও। সহপাঠীরা আরও জানায় সে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার চেষ্টায় চবির সেকেন্ড টাইম ভর্তি পরীক্ষায়ও অংশগ্রহণ করেন। তবে ভালো ফলাফল না হওয়ায় তিনি এখানেই থেকে যায়।
ইতিহাস বিভাগের ২০২ নম্বর কোর্সের শিক্ষক গোলাম কুদ্দুস লাবলু বলেন, আজ ২০২ নম্বর কোর্সের ক্লাসটেস্ট ছিল। পরীক্ষা নেওয়ার পর স্বাক্ষর করার সময় ওর আইডি জানতে চাইলে সে সঠিকভাবে বলতে পারেনি। আমি তখন ভাবছি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ঘটনায় ইতিহাস বিভাগে একটি শোকজ চিঠি এসেছে ওটা হয়তও হবে৷ এজন্য ভয়ে কিছু বলছে না। পরে তাকে অফিস কক্ষে দেখা করতে বললে সে পালিয়ে যায়।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ও সহকারী প্রক্টর রিফাত রহমান বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় যে ২৩ জনকে শোকজ করা হয়েছে তাদের সবার বিভাগ, হল ও পরিবারের কাছে আমরা চিঠি দিচ্ছি। তবে এই ইমনের নামে চিঠি দিতে গিয়ে একাডেমিক সেকশনে অনুসন্ধান করে দেখি তার নাম, আইডি নম্বর মিলছে না। তখন আমাদের সন্দেহ হয়। বিষয়টি আমরা বিভাগের একজন শিক্ষককে জানাই। তিনি বিভাগের ক্লাস টেস্ট পরীক্ষা দেয়া অবস্থায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে অসংলগ্ন উত্তর দেয়। পরে নিশ্চিত হয়েছি সে ভুয়া শিক্ষার্থী। তবে আমরা তার ঠিকানা জেনেছি, পুলিশের সহায়তায় আমরা তাকে ও তার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।