২২ মে ২০২৪, ০৯:৪৬

১০ টাকার চায়ের দামও ২৫, ‘ভয়ে’ ঢাবির ফুডকোর্টে যান না অনেক শিক্ষার্থী

ঢাবির ফুডকোর্টের বিভিন্ন ধরনের খাবার ও মূল্যতালিকা  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের এমবিএ ভবনের নিচতলায় পূর্ব পাশে রয়েছে ফুড কোর্ট। সেখানে খাবার বিক্রি করে বাবুর্চি এক্সপ্রেসসহ দুটি প্রতিষ্ঠান। তাদের মূল্য তালিকা অনুযায়ী, সবচেয়ে দামি খাবারের দাম ২৭০ টাকা। এতে ফ্রাইড রাইস, চিকেন অনিয়ন ও ফ্রাইড চিকেন রয়েছে। সর্বনিম্ন ৮০ টাকায় মেলে ডিম খিচুড়ি। অথচ বাইরের রেস্তোরাঁয় ডিম খিচুরি ৬০ টাকা। এরপর সবচেয়ে কমদামি খাবারের মূল্য ১৫০ টাকা। এর মধ্যে আর কোনো আইটেম নেই। 

দেশি প্রচলিত আর কোনো  খাবার বিক্রি করা হয় না। এখানেই শেষ নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বড় ধাক্কাটা খান, পানীয় চা, কফি কিংবা জুস কিনতে চাইলে। মেশিনে তৈরি চা বাইরে ১০ টাকা হলেও ফুডকোর্টে বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়। লেবু চা বাইরে ১০ টাকা হলেও ২০ টাকা নিচ্ছে তারা। আর ১২০ টাকায় মেলে কোল্ড কফি। লেমন বরফ চা ১০০ টাকা। এভাবে প্রতিটি খাবার ও পানীয়র চড়া দাম রাখা হচ্ছে।

অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি অফিস থেকে প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের আয়ের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ঢাবির ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর পরিবার দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত। এর মধ্যে ১০ শতাংশের অধিক শিক্ষার্থীর পরিবার হতদরিদ্র। এসব শিক্ষার্থীর পরিবারের মাসিক আয় ৪ হাজার টাকার কম। ভর্তিতে উচ্চ আয়ের পরিবারের সন্তানের সংখ্যা ধীরে বাড়ছে। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে উচ্চ আয়ের পরিবারের শিক্ষার্থী ছিলেন ৫ শতাংশ। আর গত বছর ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে তা বেড়ে ৮ শতাংশে দাঁড়ায়।

ঢাবির ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর পরিবার দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত। এর মধ্যে ১০ শতাংশের অধিক শিক্ষার্থীর পরিবার হতদরিদ্র। এসব শিক্ষার্থীর পরিবারের মাসিক আয় ৪ হাজার টাকার কম। ভর্তিতে উচ্চ আয়ের পরিবারের সন্তানের সংখ্যা ধীরে বাড়ছে।

এ বিপুল সংখ্যক দরিদ্র শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় না নিয়েই ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ফুড কোর্ট বসানো হয়েছে বলে অভিযোগ অনেকের। তাদের ভাষ্য, ৮ শতাংশ ধনী পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্যই যেন এটি বসানো হয়েছে। খাবারের দাম এবং ধরন দেখে প্রথমে এমন কথাই মাথায় আসে সবার। দামের কারণে ভয়ে অনেক শিক্ষার্থী ফুড কোর্টে যান না বলে দাবি করেছেন।

ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের এমবিএ ভবনের নিচতলার পূর্ব পাশে রয়েছে ফুড কোর্টটি। ক্যান্টিনে খাবার পরিবেশন করে দু’টি প্রতিষ্ঠান। একটি হচ্ছে টেস্টি ট্রিট, অন্যটি বাবুর্চি এক্সপ্রেস। এর কোনোটিতেই দেশে বহুদনের প্রচলিত তেমন কোনো খাবার মেলে না। বাবুর্চি এক্সপ্রেসে অধিকাংশ খাবার চাইনিজ। একই অবস্থা অন্য প্রতিষ্ঠানটিরও।

বাবুর্চি এক্সপ্রেসের দায়িত্বে থাকা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের যে খাবার তালিকা এবং দাম, এটা আমাদের কোম্পানির সঙ্গে ডিন স্যার মিটিং করে ঠিক করে দিয়েছেন। ফলে আমাদের কিছু করার নেই। আমাদের এখানে সব চাইনিজ খাবার, তাই দামও একটু বেশি। তবে আমরা হাফ চাওমিন ৫০ টাকায় বিক্রি করি।’ 

এদিকে টেস্টি ট্রিটের খাবারের তালিকা পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, সেখানে ৮৫০ টাকার কেক হচ্ছে সর্বোচ্চ মূল্যের খাবার। আর সর্বনিম্ন ৫০ টাকায় মিনি কাপ দই রয়েছে। মধ্যবর্তী দামে রয়েছে ৮০ টাকার ডেজার্ট, ১০০ টাকার কেক স্লাইসসহ নানা ধরনের ফাস্টফুড। তবে তাদের দাবি, তারা প্রতিদিন ২০- ৩০টি করে সিঙ্গারা রাখেন। এর প্রতিটির দাম ২০ টাকা।

টেস্টি ট্রিটের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্রাঞ্চের পরিচালক নাজমুল হোসাইন বলেন, ‘আমাদের মোট বিক্রির ১০ শতাংশ অনুষদকে দিতে হয়। আমাদের যে খাবার তালিকা এবং দাম, সেটি ডিন স্যার এবং কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হয়েছে। তবে আমরা চেষ্টা করব, শিক্ষার্থীদের জন্য স্বল্পদামের আরও খাবার রাখতে।’

আরো পড়ুন: ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শ্রাবণের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, হাসপাতালে ভর্তি

ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী শাকিল বলেন, ফুডকোর্ট মোটামুটি একটা ফাইভ স্টার রেস্টুরেন্ট। এখানে আমাদের মতো গরীব বা মধ্যবিত্তদের যাওয়া মানায় না। এখানে আমাদের জন্য সেরকম কোনো খাবারও নেই।

আর মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী আবিদের ভাষ্য, আমার আসলে ফুডকোর্ট নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। কারণ ভয়ে আমি সেখানে যাই না। খাবারের এত দাম যে, সেখানে যেতে আমার ভয় লাগে। শিক্ষার্থী ইয়াসিনও একই কথা বলেন। তিনিও দামের কারণে ফুডকোর্টে খেতে যান না।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে ছয় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। অধিকাংশই খাবার খেতে পারেন না এ ক্যান্টিনে। তাদের অভিযোগ, ক্যান্টিনের যে খাবার, এটি সবার জন্য নির্ধারণ করা হয়নি। বাইরের রেস্তোরাঁগুলো থেকেও সেখানে খাবারের দাম বেশি। অনুষদের একাধিক শিক্ষকও ব্যাপারটিকে অযৌক্তিক বলে মনে করেন। তবে তাদের দাবি, বিষয়টি ডিন দেখেন। এখানে তাদের কিছু বলার নেই।

এ বিষয়ে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মুহাম্মাদ আব্দুল মঈনের সঙ্গে কথা বললে তিনি অন্যদিন দেখা করতে বলেন। পরে ছয়দিন ধরে তার সঙ্গে একাধিকবার ফোনে ও সশরীরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তিনি কল রিসিভ করেননি। অনুষদে তাঁর গাড়ি থাকলেও বারবার তার অফিস থেকে তিনি নেই জেনে ফিরে আসতে হয়েছে।